
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচনে সাতক্ষীরা ৪শ্যামনগর আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচন না করলে জামায়াতে ইসলামের বিজয় অনেকটা আশঙ্কা করা যাচ্ছে । কারণ দেশ স্বাধীনের পর থেকে এই আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলাম রাজত্ব কায়েম করে আসছে ।নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সংসদীয় আসনের চূড়ান্ত সীমানা অনুযায়ী পূর্বের রূপে ফিরেছে সাতক্ষীরা-৪ আসন (শ্যামনগর, তৎকালীন সাতক্ষীরা-৫)। ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩৬ ভোটার নিয়ে গঠিত আসনটিতে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে যেমন উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি অনেকের জন্য হতাশারও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি শিবিরের চরম হতাশা বিরাজ করলেও স্বস্তিতে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। বর্তমানে মাঠে নেই কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ। চোখে পড়ছে না জাতীয় পার্টির কোনো কার্যক্রমও। এ সুযোগে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় জামায়াতে ইসলামী। অপরদিকে সাতক্ষীরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আসনটিতে একবারও জিততে না পারা বিএনপিও চায় প্রথমবারের মতো জিতে আসনটি তারেক রহমানকে উপহার দিতে। সব মিলিয়ে এ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে মূল লড়াইটা হবে। তবে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে এলে বদলে যেতে পারে সমীকরণ।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, ১৯৮৪ সালে সাতক্ষীরা জেলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলায় পাঁচটি সংসদীয় আসন ছিল। এক্ষেত্রে জেলার শ্যামনগর উপজেলা নিয়ে ছিল সাতক্ষীরা-৫ আসন। ২০০৮ সালে সাতক্ষীরা জেলা থেকে একটি আসন কমিয়ে চারটি আসন করা হয়। যেখানে শ্যামনগরের সঙ্গে কালিগঞ্জের আটটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয় সাতক্ষীরা-৪ আসন। এভাবেই চলেছে ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত। সম্প্রতি আবারো সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। যেখানে শুধুমাত্র শ্যামনগর উপজেলা নিয়ে গঠন করা হয়েছে সাতক্ষীরা-৪ আসন।
সূত্রমতে, সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জ আংশিক) নির্বাচনী এলাকায় স্বাধীনতা পরবর্তী ১৩টি নির্বাচনের, আমি, ডামি, নৈশ্য ও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৭টিতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীরা জয়লাভ করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে জান জামায়াতের প্রার্থী। জাতীয় পার্টি একবার এবং মুসলিম লীগ প্রার্থী একটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়।
সংসদীয় আসনের এ ভাঙা-গড়ার খেলায় এ আসনে কখনো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন শ্যামনগর থেকে, কখনো কালিগঞ্জ থেকে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রস্তুতি নিয়েছেন শ্যামনগর-কালিগঞ্জ ধরে, কিন্তু আকস্মিক সীমানা পরিবর্তন হওয়ায় কালিগঞ্জ অংশের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা পড়েছেন বিপাকে, যা তাদের জন্য অস্বস্তিরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিপরীতে শ্যামনগর অংশের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা রয়েছেন স্বস্তিতে।
শ্যামনগরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্র অনুযায়ী কমিটি গঠন, পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ, প্রচারণা ও গণসংযোগের মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরা-৪ আসনে জামায়াত মনোনীত একক প্রার্থী ও সাবেক এমপি (সংসদ সদস্য) গাজী নজরুল ইসলামের নির্বাচনী প্রস্তুতি জোরদার করেছে দলটি। একইভাবে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশায় তৃণমূলে গণসংযোগের পাশাপাশি দলকে সুসংগঠিত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. মনিরুজ্জামান মনির, শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য মাস্টার আব্দুল ওয়াহেদ এবং শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য আশেক এলাহি মুন্না। এ তালিকায় আরও রয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও তৎকালীন সাতক্ষীরা-৪ (কালিগঞ্জ-দেবহাটা) আসনের সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন ও জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী। তবে কাজী আলাউদ্দিন ও এডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী পড়েছেন আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসজনিত জটিলতায়। আর বাকি মনোনয়নপ্রত্যাশীরা শ্যামনগরে অবস্থানগত কারণে সুবিধাজনক স্থানে থাকলেও দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করতে না পারলে সাতক্ষীরা-৪ আসনে জয় অর্জন করা অসাধ্য হয়ে পড়বে বিএনপির জন্য। যদিও দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলমান। কমিটি গঠনের কার্যক্রম শেষ হলে নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো কোন্দল থাকবে না। এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জের একাংশ) আসনের সাবেক এমপি এইচএম গোলাম রেজা।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি কলঙ্কজনক দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ডামি নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এসএম আতাউল হক দোলন নৌকা প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) মনোনীত নোঙর প্রতীকের প্রার্থী এইচএম গোলাম রেজা পান ৩৮ হাজার ৮৮ ভোট।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদে নৈশ্য ভোটের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৮৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন এসএম জগলুল হায়দার। তার নিকটতম জামায়াতের গাজী নজরুল ইসলাম পেয়েছিলেন ৩০ হাজার ৪৮৬ ভোট।
এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি জামায়াত জোট ছাড়ায় বেশিরভাগ দলের ভোট বর্জনের পর অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের এসএম জগলুল হায়দার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
সব দলের অংশগ্রহণে জোটগতভাবে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-৪ আসনে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এইচএম গোলাম রেজা। তিনি পেয়েছিলেন ১ লাখ ৫১ হাজার ১৪৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের গাজী নজরুল ইসলাম পেয়েছিলেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৭৫ ভোট।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও তৎকালীন সাতক্ষীরা-৪ (কালিগঞ্জ-দেবহাটা) আসনের সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন বলেন, আমি একসময় কালিগঞ্জ-দেবহাটা আসনের এমপি ছিলাম। এখন নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সংসদীয় আসনের চূড়ান্ত সীমানা অনুযায়ী দেবহাটা পড়েছে সাতক্ষীরা-২ আসনের (সাতক্ষীরা সদর ও দেবহাটা) মধ্যে, আর কালিগঞ্জ পড়েছে সাতক্ষীরা-৩ আসনের (কালিগঞ্জ-আশাশুনি) মধ্যে। আমি বিগত ১৫ বছর কাজ করেছি শ্যামনগর ও কালিগঞ্জে। এখনো শ্যামনগর ও কালিগঞ্জেই কাজ করছি, প্রতিদিন দুই উপজেলাতেই একাধিক প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছি। দুই আসনের নেতাকর্মীরাই আমাকে চাচ্ছে, তারা বলছে, আমাদের ছেড়ে যেয়েন না। এমন পরিস্থিতিতে আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য দলীয় হাই কমান্ডের সিগন্যালের অপেক্ষায় আছি।
অন্যদিকে স্বস্তিতে থাকা জামায়াতের একক প্রার্থী গাজী নজরুল ইসলাম জানান, আগামী নির্বাচনে সাধারণ মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। সেই লক্ষ্যে আমারা আমীরে জামায়াতের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। ভোটাররা আমাদের আশ্বস্ত করছেন। এতেই আমরা সন্তুষ্টি। আশা করছি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে জনগণ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও সাতক্ষীরার চারটি আসনে জমজমাট প্রচার চলছে। বড় দুই দল ইতিমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। প্রার্থিতা নিয়ে জামায়াতের কোন্দল না থাকায় তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে দলটি। তবে ভিন্ন চিত্র বিএনপিতে; গত ৩ নভেম্বর সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর দুটি আসনে অসন্তোষ দেখা দেয়। পরদিন থেকে প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরায় আসন ছিল পাঁচটি। এর মধ্যে চারটি আসনেই জামায়াত জয়লাভ করে। অপরটি পায় আওয়ামী লীগ। ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ চিত্র পাল্টে যায়। শুধু সাতক্ষীরা সদর আসনে জামায়াত ছাড়া আর বাকি আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি নির্বাচিত হয়। ২০০১ সালে জামায়াত আবারও তিনটি আসনে জয়লাভ করে। জেলার মধ্যে সেবারই প্রথম বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হাবিবুল ইসলাম হাবিব। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি আসন কমিয়ে সাতক্ষীরায় সংসদীয় আসন হয় চারটি। এ নির্বাচনে জামায়াত ও বিএনপি একটি আসনও পায়নি। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি (এরশাদ) দুটি করে আসনে জয়লাভ করে।
সাতক্ষীরা সীমান্তঘেঁষা জেলা হওয়ার সুবাদে এখানকার মুসলিম ভোটারদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ভারত থেকে আসা। সে কারণে সাতক্ষীরায় জামায়াতের একটি ভালো প্রভাব রয়েছে। বরাবরের মতো জামায়াত এবারও চারটি আসনে জিততে চায়। অভ্যন্তরীণ কোন্দল না থাকায় মাস দুয়েক আগে থেকে চারটি আসনে জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রার্থী ঘোষণা দেওয়া হয়। সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসন থেকে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন অধ্যক্ষ ইজ্জতুল্লাহ, সাতক্ষীরা-২ (সাতক্ষীরা সদর-দেবহাটা) আসনে মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ (কালীগঞ্জ ও আশাশুনি) থেকে মুহাদ্দিস রবিউল বাশার ও সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর) আসনে গাজী নজরুল ইসলাম। অপর দিকে সাতক্ষীরা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সাতক্ষীরা-২ আসনে আব্দুর রউফ, সাতক্ষীরা-৩ আসনে কাজী আলাউদ্দীন ও সাতক্ষীরা-৪ আসনে ড. মনিরুজ্জামান মনির।
সাতক্ষীরা-১ আসনে ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ছাত্রদল ও ডাকসুর সাবেক নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব। এরপর থেকে বিএনপির জনসমর্থন বাড়তে থাকে। এ আসনে জামায়াতেরও শক্ত অবস্থান রয়েছে। এবার হাবিব ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ইজ্জতুল্লাহর মধ্যে লড়াইটা বেশ জমজমাট হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
বিএনপির প্রকাশনা সম্পাদক হাবিব বলেন, ‘তালা-কলারোয়ার এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে আমার প্রচেষ্টায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। আমি নির্বাচিত হলে পাটকেলঘাটাকে উপজেলায় উন্নীত করার পদক্ষেপ নেব। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ব্যবস্থা নেব।’
সাতক্ষীরা-২ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রউফকে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। রউফকে মনোনয়ন দেওয়ায় ফুঁসে উঠেছে মনোনয়নবঞ্চিতসহ সাধারণ জনগণ। মনোনয়ন ঘোষণার দিন রাতে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের বিনেরপোতায় টায়ার জ্বালিয়ে ব্লকেড তৈরি করে বিক্ষোভ করেন মনোনয়নবঞ্চিত জেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব আব্দুল আলিমের সমর্থকেরা। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে সদর উপজেলার ১২ ইউনিয়নের ৩৩ জন দায়িত্বশীল নেতা বিএনপি মহাসচিবের কাছে আবেদন করেছেন।
এ আসনে বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী তাজকিন আহমেদ চিশতি। বর্তমানে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক চিশতি সাতক্ষীরা পৌরসভার দুবারের নির্বাচিত মেয়র। তারপক্ষে পৌরসভার ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি নেতারাও মহাসচিব বরাবর আবেদন করেছেন।
বিএনপির দ্বন্দ্বের কারণে এ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মুহাদ্দিস আব্দুল খালেককে এগিয়ে রাখছেন ভোটাররা।
সাতক্ষীরা-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী আলাউদ্দীন। তবে এ আসনে কাজী আলাউদ্দীনের মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা ১১ দিন বিক্ষোভ সমাবেশ করে কালীগঞ্জ ও আশাশুনি উত্তাল রেখেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস ও মনোনয়নপ্রত্যাশী ডা. শহিদুল আলমের সমর্থকেরা।
শহিদুলের সমর্থক জেলা বিএনপির সদস্য শেখ নূরুজ্জামান বলেন, ‘গরিবের ডাক্তার বলে খ্যাত ডা. শহিদুল আলমকে মনোনয়ন না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না। যে মানুষটি তাঁর সবকিছু ব্যয় করেছেন জনকল্যাণে, তাঁকে মনোনয়ন দিতে হবে।’
এ আসনে কাজী আলাউদ্দীনও গণসংযোগ শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে আশাশুনির বালির মাঠে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় অংশগ্রহণ করেন তিনি।
মনোনয়নের বিষয়ে কাজী আলাউদ্দীন বলেন, ‘আমি সকল সময়ে জনগণের পাশে ছিলাম। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে হামলা-মামলায় জর্জরিত ছিলাম। তবুও জনগণ থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি।’ বিভেদ ভুলে দল যাকে মনোনীত করবে, তাঁর পক্ষে সবাইকে কাজ করার অনুরোধ আলাউদ্দীনের।
সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর) আসনটি একটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। বিগত নির্বাচনগুলোতে এ আসনে বিএনপি তাদের শক্তিমত্তা দেখাতে পারেনি। তবে এবার বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন নতুন মুখ লন্ডনপ্রবাসী ড. মনিরুজ্জামান মনির। তিনি জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অপর দিকে জামায়াতের গাজী নজরুল ইসলাম সাবেক দুবারের সংসদ সদস্য হওয়ায় এ আসনে তাঁর নিজস্ব একটি ভোটব্যাংক রয়েছে।
মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে আমি হয়তো নতুন মুখ। তবে পাঁচ বছর ধরে আমি শ্যামনগরের আপামর জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি।’
সার্বিক বিষয়ে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল আজিজ বলেন, ‘২০০১ সালে সাতক্ষীরা থেকে চারটি আসন পেয়েছিল জামায়াত। আমরা এবারও সবকটি আসনে বিজয়ী হওয়ার আশা করছি।’এদিকে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি ও এর আত্ম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ
সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ধানের শীষের বিজয় ছিনিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ হলো সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি। নজির বিহীন এই রাজনৈতিক মিলনে ফুটে উঠেছে রাজনৈতিক সৌহাদ্যর্ ও শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং দলের প্রতি সম্মান রেখে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ের লক্ষ্যে জেলা বিএনপির বর্ষীয়ান নেতাদের ঐক্য। জেলা শহর থেকে শুরু করে সাড়া ফেলেছে সমগ্র দেশব্যাপী। শুক্রবার(২৮ নভেম্বর) সকালে জেলা বিএনপি ও সাতক্ষীরা—০২ (সাতক্ষীরা সদর—দেবহাটা) আসনের বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী আলহাজ্ব মো. আব্দুর রউফ’র মহতী উদ্যোগে দলীয় মনোনয়ন পেতে আন্দোলনরত জেলা বিএনপির ২ নেতার সাথে সাক্ষাত এবং ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঐতিহাসিক মিলন এই ঘটনার সাক্ষী হয়েছে জেলাবাসী। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ধানের শীষের বিজয় ছিনিয়ে আনতে সাতক্ষীরা—২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব মো. আব্দুর রউফ অপর দুইজন মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সদস্য ও সদ্য সাবেক সদস্য সচিব মোহাম্মদ আব্দুল আলিম এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম—আহবায়ক তাজকিন আহমেদ চিশতি’র বাসভবনে মতবিনিময় করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানালে তারা আন্দোলন ছেড়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন । ঐতিহাসিক এই মতবিনিময়ের সময় উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ তারিকুল হাসান, আলিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক হাদিউজ্জামান বাদশা, লাবসা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহিন হোসেন, আলিপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ সিয়াম প্রমুখ। এদিকে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে দেশব্যাপী একে একে ৪০টি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সমর্থকদের বিক্ষোভ ও মশাল মিছিলের কারণে নিশ্চিত বিজয়ী বিএনপির রাজনীতিতে এক দলীয় সংকটের সৃষ্টি হয়। ফলে আসন গুলোতে সুযোগ নিতে শুরু করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহ অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠন গুলো। সাতক্ষীরা—২আসনে জামায়াতের ঘাটিতে ধানের শীষের হানা। এই সিটে বিজয়ের লক্ষ্যে আরো একধাপ পৌছে গেল বিএনপির ধানের শীষ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংকটকালীন সময়ে জেলার জনপ্রিয় ও হেভিওয়েট এই নেতাদের ঐক্য সর্বকালের সেরা ঘটনা। আসন্ন নির্বাচনের সকল সমীকরণ বদলে ফেলেছে এবং এখানে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত ও অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য, আলহাজ্ব মো. আব্দুর রউফ আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩৩ বছরের নির্বাচিত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান, আব্দুল আলিম লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের ৩৮ বছরের নির্বাচিত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান এবং তাজকিন আহমেদ চিশতি সাতক্ষীরা পৌরসভার দুইবারের নির্বাচিত জনপ্রিয় মেয়র। ভোটের মাঠে এবার বড় লড়াই হবে বলে মনে করছে সাতক্ষীরার সাধারণ ভোটার ও সচেতন মহল।

