সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সংসদীয় আসনের চূড়ান্ত সীমানা অনুযায়ী পূর্বের রূপে ফিরেছে সাতক্ষীরা-৪ আসন (শ্যামনগর, তৎকালীন সাতক্ষীরা-৫)। শ্যামনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩৬। এতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে যেমন উচ্ছ¡াস সৃষ্টি হয়েছে তেমনি অনেকের জন্য হতাশারও কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। এ আসনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত বিএনপির অন্তত পাঁচজন হেভিওয়েট প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। মনোনয়ন কিনতে চান কয়েকজন তরুণ নেতাও। বিপরীতে একক প্রার্থী নিয়ে স্বস্তিতে রয়েছে জামায়াত। মাঠে রয়েছে ইসলামী আন্দোলনের একজন সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে, মাঠে দেখা যাচ্ছে না সদ্যগঠিত দল এনসিপির কোনো নেতাকর্মীকে।
বর্তমানে মাঠে নেই কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ। চোখে পড়ছে না জাতীয় পার্টির কোনো কার্যক্রমও। এই সুযোগে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় জামায়াত। অপরদিকে, সাতক্ষীরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আসনটিতে একবারও জিততে না পারা বিএনপিও চায় প্রথমবারের মতো জিতে আসনটি তারেক রহমানকে উপহার দিতে।
শ্যামনগরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রওয়ারী কমিটি গঠন, পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ, প্রচারণা ও গণসংযোগের মধ্যদিয়ে সাতক্ষীরা-৪ আসনে জামায়াত মনোনীত একক প্রার্থী ও সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলামের নির্বাচনী প্রস্তুতি জোরদার করেছে দলটি।
একইভাবে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশায় তৃণমূলে গণসংযোগের পাশাপাশি দলকে সুসংগঠিত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ড. মনিরুজ্জামান মনির, শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য মাস্টার আব্দুল ওয়াহেদ এবং শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য আশেক এলাহি মুন্না। এ তালিকায় আরও রয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও তৎকালীন সাতক্ষীরা-৪ (কালিগঞ্জ-দেবহাটা) আসনের সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন ও জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী। তবে শেষোক্ত দুজন পড়েছেন আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসজনিত জটিলতায়। আর বাকী প্রার্থীরা শ্যামনগরে অবস্থানগত কারণে সুবিধাজনক স্থানে থাকলেও দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করতে না পারলে সাতক্ষীরা-৪ আসনে জয় অর্জন করা অসাধ্য হয়ে পড়বে বিএনপির জন্য।
যদিও দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলমান। কমিটি গঠনের কার্যক্রম শেষ হলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোনো কোন্দল থাকবে না। এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জের একাংশ) আসনের সাবেক এমপি এইচএম গোলাম রেজা।
জামায়াত-বিএনপির বাইরে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মোস্তফা আল মামুন (হাজী মনির) কে। সবমিলিয়ে এ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে মূল লড়াইটা হবে। তবে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে আসলে বদলে যেতে পারে সমীকরণ।
নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রসঙ্গে শ্যামনগর উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা-৪ আসনে জামায়াতের প্রার্থী সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম। আমরা প্রতিপক্ষকে দুর্বল না ভেবে সংসদীয় আসনের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। তাদেরকে আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলো জানাচ্ছি। আমরা আশা করছি আমরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো।
দলীয় মনোনয়ন ও দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ড. মনিরুজ্জামান মনির বলেন, গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমাকে তৃণমূলে গণসংযোগ বৃদ্ধি, দলকে সুসংগঠিত করা, জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির নির্দেশ দেন এবং প্রস্তুতি নিতে বলেন। আমি সে অনুযায়ী কাজ করছি। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে সম্ভাব্য প্রার্থী যারা থাকে, তাদেরকে কেন্দ্র করে একটি বলয় গড়ে ওঠে। এটা মনোনয়ন কেন্দ্রিক। দল যখন চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে, এই দূরত্ব কমে আসবে। ইতোমধ্যে দূরত্ব কমে আসতে শুরু করেছে। যাকেই মনোনয়ন দিক না কেন আমাদের সবারই লক্ষ্য ধানের শীষকে জয়যুক্ত করা।
শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য মাস্টার আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, শ্যামনগরে বিএনপির কার্যক্রম শুরুর পর থেকে আমি দলের সাথে আছি। নেতৃত্ব দিচ্ছি, তৃণমূলকে সংগঠিত করেছি। আমাদের শ্যামনগরে বিএনপিতে কোনো গ্রুপিং ছিল না। ইফতেখার আলী ও তারিকুল হাসান নেতৃত্বে আসার পর গ্রুপিং শুরু। তবে, আমি মনোনয়ন পেলে কোনো গ্রুপিং থাকবে না।
শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য আশেক এলাহি মুন্না বলেন, আমরা আসনটি তারেক রহমানকে উপহার দিতে চাই। এজন্য তৃণমূলে দলকে সুসংগঠিত করা হচ্ছে। ৩১ দফা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে আমি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও তৎকালীন সাতক্ষীরা-৪ (কালিগঞ্জ-দেবহাটা) আসনের সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন বলেন, আমি কালিগঞ্জ-দেবহাটা আসনের এমপি ছিলাম। আসন বিন্যাসের ফলে দুই উপজেলা পৃথক হয়েছে। আমি বিগত ১৫ বছর ধরে কাজ করেছি শ্যামনগর ও কালিগঞ্জে। প্রতিদিন দুই উপজেলাতেই প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছি। দুই আসনের নেতাকর্মীরাই আমাকে চাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য দলীয় হাই কমান্ডের সিগন্যালের অপেক্ষায় আছি।
জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী জানান, তিনি সাতক্ষীরা-২ ও সাতক্ষীরা-৪ আসনকে সামনে রেখে এগুচ্ছেন। কেন্দ্রের সিগন্যাল পেলে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সাবেক এমপি এইচএম গোলাম রেজা বলেন, আগামী নির্বাচনে অংশ নেব। আমি শ্যামনগর কালিগঞ্জের মানুষের সাথে সবসময় ছিলাম, থাকবো।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত