মোংলা প্রতিনিধি : মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেল সচল রাখতে ড্রেজিংয়ের বিকল্প নাই। এজন্য ২০২১ সালে পশুর চ্যানেলের জয়মনি থেকে বন্দরের জেটি পর্যন্ত ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করা হয়। কিন্তু ১৯ কিলোমিটারে এই নৌ পথের ড্রেজিং করা বালু বন্দরের আশেপাশে রাখতে পারলেও এখন আর জায়গা মিলছেনা। যে কারণে দীর্ঘ ছয় মাস পশুর চ্যানেলের ড্রেজিং কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে।
তবে অবশেষে নৌ চ্যানেল খননের সেই বালু রাখার জায়গা পেয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের সানবান্ধা এলাকায় জমি পাওয়ায় এই সংকট আপতত দূর হচ্ছে। সানবান্ধার ২৫৮ একর জমি হুকুম দখলে নিয়ে প্রস্তত করা হচ্ছে বালু রাখার জায়গা। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সিভিল ও হাইড্রোলিক্স বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী শেখ শওকত আলী এই তথ্য জানিয়ে বলেন, বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বালু ফেলার জমি নতুন করে প্রস্তুত করতে কিছুটা বিলম্ভ হয়েছিল, তবে বালু ডাম্পিংয়ের জন্য এখন আর কোন সমস্য নাই।
বন্দর সুত্রে জানায়, ৯০ দশকে মৃতপ্রায় মোংলা বন্দরকে সচল করতে বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে বন্দর জেটি (আউটারবার) পর্যন্ত প্রায় ১৩২ কিলোমিটার চ্যানেল ড্রেজিংয়ের জন্য দুইটি প্রকল্প গ্রহন করে সরকার ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রথমটি আউটারবার ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ করে শুরু হয় দ্বিতীয় প্রকল্প ১৯ কিলোমিটারের ইনারবার (পশুর চ্যানেল থেকে জেটি পর্যন্ত) ড্রেজিংয়ের কাজ।
কিন্তু ইনারবারের বালু ফেলার জায়গার সংকট দেখা দিলে গত ছয় মাস ধরে ধীরগতি নেমে আসে ড্রেজিং কাজের। শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট কাজের ৪৬ শতাংশ সম্পন্ন করতে পেরেছিল ‘জেএইচসিইসি এবং সিসিইসিসি’ নামে চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ব্যাবসায়ী এইচ এম দুলাল বলেন, দেশের একটি বন্দরকে সচল রাখতে হলে প্রথমে দেশী-বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজ চলাচলের চ্যানেলকে ঠিক রাখতে হবে। আর সেই চ্যানেলের নাব্যতা ঠিক রাখতে হলে ড্রেজিংয়ের কোন বিকল্প নাই। তাই পশুর নদী সংলগ্ন বহু জমি পড়ে আছে, এছাড়া বন্দরের আশপাশেল জমির মালিকদেরও উচিত বন্দর উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের সহায়তা করা। তাই বন্দরকে বাঁচাতে হলে ড্রেজিং চলমান রাখার দাবী জানান তিনি।
বন্দরের সিভিল ও হাইড্রোলিক্স বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ও ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শেখ শওকাত আলী বলেন, পশুর চ্যানেলের ইনারবার ড্রেজিংয়ের বালু রাখার সংকট কেটে গেছে। নতুন করে মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের সানবান্ধা এলাকায় ২৫৮ একর মালিকানা জমি সরকারী ভাবে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে হুকুম দখলে নেওয়া হচ্ছে। এজন্য গত ১৫ জানুয়ারী সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রস্তাব দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী গত ৩০ জানুয়ারী জমির কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সরেজমিনে পরিদর্শনে আসেন জেলা প্রশাসককের একটি প্রতিনিধি দল। সেদিনই জমি দেখা ও কাগজ পত্রের কাজও প্রায় সম্পন্ন করেছে এ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা’।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ধারনাছিল শুরু থেকে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে সময় লাগবে মাত্র এক বছর। কিন্ত ২০২১ সালের ১৩ মার্চ শুরু হওয়া এ কাজটি ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও চলমান কাজের মধ্যে কিছুটা বাধা সৃষ্টি হওয়ায় ড্রেজিংয়ে ধীর গতিতে নেমে আসে। তারপরেও আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব ইনারবার প্রকল্পের ড্রেজিং কাজ শেষ করতে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন শাহিন মজিদ বলেন, মোংলা বন্দরের একটি বড় মেগা প্রকল্প ইনার বার ড্রেজিং। এই প্রকল্পের আওতায় ৭৯৩ কোটি ৭২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে বন্দর জেটি হতে জয়মনির ঘোল পর্যন্ত প্রায় ১৯ কিলোমিটার খনন সম্পন্ন হলে ৯ দশমিক মিটার থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বিদেশ থেকে এসে মোংলা বন্দর জেটিতে সরাসরি প্রবেশ করতে পারবে। আর চ্যানেল ড্রেজিং না হলে আর্থিক ক্ষতিসহ আন্তর্জাতিক ভাবে আমদানী-রপ্তানীতে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিবে বলেও জানান তিনি।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, এক সময় নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে অচল ছিল মোংলা বন্দর। বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় এ বন্দর বিশ্বের কাছে এখন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। তাই চলমান প্রকল্পের চ্যানেল ড্রেজিং হলে নদীর নাব্যতা বাড়বে। ফলে আর্ন্তজাতিক ভাবে মোংলা বন্দর আমদানি রপ্তানি বানিজ্যের একটি ক্ষেত্র তৈরী হবে।