জন্মভূমি ডেস্ক : বাংলাদেশে এক সময় ২৪ হাজার কিলোমিটার নদীপথ ছিলো। কিন্তু দখল, দূষণে ও ভরাট হয়ে হারিয়ে গেছে ১৮ হাজার কিলোমিটার। বর্তমানে মাত্র ৬ হাজার ১৯২ কিলোমিটার নদীপথে হচ্ছে নৌ-চলাচল। বর্ষার সময় এই নৌ-পথ দৈর্ঘ্য হয় ৭ হাজার ৮৬২ কিলোমিটার। বর্তমান সরকার ১০ হাজার কিলোমিটার নৌ-পথ উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। গত জুন পর্যন্ত ৩ হাজর ৬৯২ কিলোমিটার পথ উদ্ধার করেছে অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
সংস্থাটির সূত্র জানায়, নদী খননের ৯ টি প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশের ৪৮টি নৌ-পথ সচল করা হয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীন নৌ-পথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে মৃত ভোগাই-কংশসহ ২৭ রুটে ২ হাজার ৩২০ কিলোমিটার নৌ-পথ সচল করা হয়েছে। এছাড়া ভারত-বাংলাদেশ নৌ-প্রোটোকল রুট সিরাজগঞ্জ-দৈখাওয়া-আশুগঞ্জ-জকিগঞ্জ ২৯০ কিলোমিটার নৌ-পথ, পুরাতম ব্রহ্মপুত্র-তুলাই-পুনর্ভবা ২১৪ কিলোমিটার নৌ-পথ ও গোমতী-শীতলক্ষ্যা-মেঘনা-আড়িয়াল খাঁসহ বিভিন্ন নদী খননের মাধ্যমে ৬৩৭ কিলোমিটার নৌ-পথ খনন করা হয়েছে। এ সব নৌ-পথ খননের মাধ্যমে ৩৬২ লাখ ঘনমিটার মাটি অপসারণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মো. রকিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ব্রিটিশ আমলে এই অঞ্চলে ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌ-পথ ছিলো। যা পাকিস্তান আমলে কমে ১৮ হাজার কিলোমিটারে নেমে আসে। স্বাধীনতার পরে তা আরও কমে যায়। তাই বর্তমান সরকার নৌ-পথ উদ্ধারে মহাপরিকল্পনা গ্রহন করে। এর অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌ-পথ উদ্ধারের প্রকল্প নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে গত ১৪ বছরে সারাদেশে নদী খননের মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি নৌ-পথ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া মংলা-ঘষিয়াখালী (এমজি) চ্যানেল ড্রেজিং করে ২০১৫ সালে নৌযান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এই চ্যানেল দিয়ে বর্তমানে ১ লাখ ৩৯ হাজার টি ভেসেল (বড় জাহাজ) ৮-১৪ ফুট গভীরতায় চলাচল করছে। নাব্যতা সংকটে খাগদোন, লাউকাঠি, ভোলা নালা, কীর্তনখোলা, ইছামতি, কর্নতলী দিয়ে কার্গো লঞ্চ চলাচল করতে পারত না প্রকল্পে আওতায় ড্রেজিং এর নাব্য ফিরিয়ে এনে এখন সারা বছর চলাচল করছে।
ভোগাই-কংশ একটি সীমান্ত নদী। নৌ-পথটি দৈর্ঘ্য প্রায় ২০০ কিলোমিটার। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ হতে বারহাট্টা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সম্পূর্ণ মৃত কংশ নদী। দীর্ঘ থেকে এই নৌ-পথে নৌ-চলাচল বন্ধ ছিলো। নদী খননের মাধ্যমে কংশ নদীসহ গাগলাজোড় থেকে মোহনগঞ্জ পর্যন্ত ১৩৫ কিলোমিটার নৌ-পথ ২০১৯ সালে সচল করা হয়েছে। অভ্যন্তরীন নৌ-পথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে এই নৌ-পথসহ ২ হাজার ৩২০ কিলোমিটার নৌ-পথ সচল করা হয়েছে বলে অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়।
প্রকল্প সূত্র জানায়, বর্তমানে কংশ নদীর গাগলাজোড় থেকে মোহনগঞ্জ পর্যন্ত কার্গো, বড় বড় ট্রলার লঞ্চ চলাচল করছে। ড্রেজিংকৃত মাটি দ্বারা মোহনগঞ্জ পার্ক, জানজিলা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, জানজিলা প্রাইমারি স্কুল, খুলুনজা প্রাইমারি স্কুল, গাগরা প্রাইমারি স্কুল, সাংকারপুর প্রাইমারি স্কুল ইত্যাদি প্রায় ৭০-৮০ টি জায়গায় ভরাট করা হয়েছে। ৫৩টি নৌ-রুটের ১২ হাজার কিলোমিটার নৌ-পথ খননের জন্য প্রথম পর্যায় ২৪টি নদী খনন প্রকল্পের আওতায় এই নৌ-পথটি সচল করা হয়েছে। এছাড়া খাগদোন, লাউকাঠি, ভোলা নালা, কীর্তনখোলা, ইছামতি, কর্নতলী, সুরমা, রক্তি বাউলাই, রক্সা নীলা এবং কংস সহ ১২টি নদী খনন কাজ শেষ হয়েছে। নদী খননের মাটি সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রর নিচু জায়গা ভরাটের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।