
শেখ আব্দুল হামিদ : খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে উৎসাহ উদ্দীপনা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। ৩১টি ওয়ার্ডেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পদচারনায় মুখরিত বিভিন্ন ওলিগলি। মেয়র পদে তিন প্রার্থীর মধ্যে তালুকদার আব্দুল খালেকের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিভিন্ন ওয়ার্ডবাসী। তারা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং অসমাপ্ত কাজের ইতি টানতে আবারও মেয়র হিসেবে তাকেই দেখতে চায়। তবে নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়র নির্বাচিত হলেও ভোটের মাঠে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলে সে ক্ষেত্রে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তারা এ কথাও বলছেন, কাউন্সিলরদের ক্ষেত্রে প্রার্থীতা উন্মুক্ত থাকায় তারা ঠিকই ভোটারদের উপস্থিত করতে মরিয়া হয়ে কাজ করবেন। আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিত হবে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন।
খুলনা নগরবাসীর অভিভাবক হিসেবে তালুকদার আব্দুল খালেক গত ২০০৮ সালে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনার উন্নয়নে ইতিহাসের সর্বোচ্চ অর্থ বরাদ্দ দেন। উন্নয়নের কাজ চলমান থাকতেই ২০১৩ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হওয়ায় সে উন্নয়ন থমকে যায়। নগরবাসী সর্বোচ্চ এ বরাদ্দের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েন। এবারও চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রধানমন্ত্রী পুণরায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তালুকদার আব্দুল খালেককে মনোনয়ন প্রদান করেছেন। মেয়র বিদ্যমান প্রকল্পের পাশাপাশি এবার তিনি আরও ১৫শ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন। তিনি খুলনাকে ‘হেলদি সিটি’ প্রকল্পের মাধ্যমে একটি আধুনিক, স্মার্ট, সবুজ, স্বাস্থ্যকর শহরে পরিণত করতে চান।
২০১৮ সালে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বেই মহানগরীর উন্নয়নে প্রায় ১৫শ কোটি টাকার দু’টি প্রকল্প বরাদ্দ হিসেবে পেয়ে ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাাসন প্রকল্পে বরাদ্দ হয় ৬শ’ ৭ কোটি ৫৬ লক্ষ ৭ হাজার টাকা। মহানগরীর ৫৭১টি সড়ক উন্নয়নের জন্য এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরই মধ্যে ৪১৮টি সড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর চলমান রয়েছে ১১৪টি এবং টেন্ডারের অপেক্ষায় আছে ৩৯টি সড়ক। দ্বিতীয় প্রকল্পে শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয় ৮২৩ কোটি ৯৭ লক্ষ ৬ হাজার টাকা। মহানগরীর ২০৬টি ড্রেন উন্নয়নে এ প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ প্রকল্পে ৫২টির কাজ শেষ হয়েছে। চলমান আছে ৮৫টি এবং টেন্ডারের অপেক্ষায় আছে ৭২টি।
২০১৮ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় থোক বরাদ্দ দেয়া হয় ৪৯ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা। এ অর্থে ৬৪৭টি প্রকল্পের উন্নয়ন করা হয়েছে এবং অপেক্ষায় আছে ১২৪টি প্রকল্প। প্রান্তিক জনগোষ্টির জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিগত ৫ বছরে ৩৭ কোটি ৭৪ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪০ হাজার ৫৮৭টি পরিবারের জীবনমান উন্নয়নে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি শিক্ষা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনায় দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
খুলনা শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নগরীর ২২টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। হাইটেক পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। নগরবাসীর মাঝে স্বাস্থ্যকর মাংস সরবরাহের জন্য মৎস্য ও প্রণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজবাঁধ এলাকায় শীঘ্রই একটি কসাইখানা নির্মাণ করা হবে।
তিনি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নগরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও মাটির নিচের পানি সংরক্ষণে প্রাতিক নদী, খাল ও জলাশয় সংরক্ষণ, চিত্তবিনোদনে পার্ক এবং খেলার মাঠ নির্মাণ, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে ১টি করে এসটিএস নির্মাাণ, প্রান্তিক জনগোষ্টির উন্নয়নে কার্যক্রম চালু রাখা, নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে সিটি সেন্টার, ওয়ার্ড অফিস,কলেজিয়েট স্কুল, কেসিসির বিভিন্ন ছাদে ও স্থাপনায় সোলার প্যানেল স্থাপন, পানিচক্র প্রকল্প বাস্তবায়ন, সিটি ডেভেলপমেন্ট প্লান প্রস্তুত ও খুলনা স্মার্ট সিটি ব্যাসিক প্লান প্রস্তুত করা হবে।
নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন এমন মানুষদের অভিমত তালুকদার আব্দুল খালেক পুনরায় নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত এসব কাজ সমাপ্ত হবে। তখন পূরণ হবে নগরবাসীর প্রত্যাশা।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সন্বয় কমিটির সভাপতি আশরাফ উজ্জ জামান বলেন, এবারের নির্বাচনে তালুকদার আব্দুল খালেকের বিপক্ষে শক্তিশালী কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। সে ক্ষেত্রে তিনি নির্বাচিত হবেন এটা বলা যায়। তবে ভোটার উপস্থিতির দিক থেকে পিছিয়ে পড়লে নির্বাচন নিয়ে একটি প্রশ্ন থেকে যাবে। আমি মনে করছি কাউন্সিলররা উন্মুক্ত থাকায় ভোটার উপস্থিত করতে মরিয়া হয়ে কাজ করবেন। তালুকদার খালেক নির্বাচিত হলে খুলনা তিলত্তমা নগরী হয়ে উঠবে বলে আশা করছি।
নারী নেত্রী এ্যাডভোকেট শামীমা সুলতানা শিলু বলেন, নির্বাচনে শক্তিশালী কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে নির্বাচন উৎসব মুখর হয়ে ওঠেনা। তবে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা অনেকেই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তাই ভোটার উপস্থিতি মোটামুটি ঘটবে। তিনি বলেন, খুলনা মহানগরীতে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কারণে ঘর থেকে বাইরে বের হলেই অনেকটা কস্ট পেতে হয়। তবে কাজ শেষ হলে নগরবাসী শান্তি পবে। খুলনা হবে স্মার্ট সিটি। তালুকদার খালেক আবারও নির্বাচিত হবেন। তাই তাকে জানাই অগ্রিম শুভেচ্ছ।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জাফর ইমাম বলেন : নগরীকে সৌন্দর্য্য মন্ডিত করে গড়ে তুলতে হলে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিকল্প নেই। মেয়র নির্বাচিত হয়েই সেদিকে নজর দেন। কাজও শেষের দিকে রয়েছে। আশা করছি জলাবদ্ধতা দূর হলে নগরবাসী প্রধান এ সমস্যা থেকে রেহাই পাবে। যানজট নিরসন করতে হবে। তবেই ধীরে ধীরে খুলনা হয়ে উঠবে স্মার্ট নগরী।