
মোল্লা আব্দুর রব, বাগেরহাট : সুপার সাইক্লোন সিডরের ১৬ বছরেও আতঙ্ক কাটেনি বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জবাসীর। নির্মাণাধীন টেকসই বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় হতাশা বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। ২৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৬২ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধের একাধিক স্থানে ফাটল ধরেছে। প্রায় ৭শ’ মিটার বাঁধের ব্লক ধ্বসে বিলীন হচ্ছে বলেশ্বর নদীতে। ঝুকির মধ্যে রয়েছে অন্তত ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। হস্তান্তরের আগেই এমন অবস্থা হওয়ায় চিন্তিত এলাকাবাসী। নদী শাসন না করে এবং মাটির পরিবর্তে বালুর ব্যবহারে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে দাবি এলাকাবাসীর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে নদী শাসন প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, অনুমোদন হলে কাজ শুরু হবে।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাগেরহাটসহ উপকূলীয় কয়েকটি জেলা। সরকারি হিসেবে এই দিনে প্রায় ৯‘শ ৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সিডরের আঘাতে। আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল কয়েকশ কোটি টাকার। স্বজন হারানো বেদনা ও আর্থিক ক্ষতি ভুলে শরণখোলা-মোরেলগঞ্জবাসীর একমাত্র দাবি ছিল টেকসই বেরিবাঁধ। গণ মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার ২০১৫ সালে ২৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি-কোস্টাল ইমব্যাংকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট) নামে একটি প্রকল্পের অধীনে মোরেলগঞ্জ থেকে শরণখোলা উপজেলার বগী-গাবতলা পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মান শুরু হয়। বেরিবাঁধের ৯৫ শতাংশ কাজ শুরু হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
শরণখোলা উপজেলার দক্ষিন সাউথখালী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেক বলেন, বলেশ্বর নদীর ভাঙ্গনে আমার ও পরিবারের প্রায় ১৫০ বিঘা জমি হারিয়েছি। সিডরে স্বজন হারিয়েছি। বাঁধ নির্মান শুরু হলে আশায় বুক বেঁধেছিলাম। ভাঙ্গন ও দূর্যোগ থেকে মুক্তি পাব। সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে রুপ নিয়েছে। টেকসই বেরিবাঁধেই ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। যেকোন মুহুর্তে বড় ধরণের ভাঙ্গন শুরু হবে। এখন মনে হচ্ছে বিপুল টাকার এই বাঁধ আমাদের কোন কাজে আসবে না।
শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, সিডরের পরে আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টেকসই বেরিবাঁধ নির্মানের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড সিআইপি প্রকল্পের দূরদর্শিতার অভাবে নদী শাসন না করেই বাঁধ নির্মানের ফলে আজ বাঁধটি হুমকির মধ্যে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন ও ফাটল দেখা দিয়েছে। আমাদের আবারও দাবি খুব শীঘ্রই নদী শাসন করে বাঁধটি টেকসই করতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ বলেন, ৬২ কিলোমিটার বেরিবাঁধের ২০ কিলোমিটার ঝুকিপূর্ণ। নদীর গভীরতা ও স্রোত বেশি থাকায় ভাঙ্গন সৃষ্টি হওয়ায় নদী শাসনের একটি প্রকল্প প্রস্তাব উধ্বাতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে ভাঙ্গনের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।