
১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের দাবি
জন্মভূমি রিপোর্ট : ১৪ ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস হিসেবে ঘোষণায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বানের মধ্য দিয়ে এবারের সুন্দরবন দিবস উদযাপিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে খুলনায় বুধবার বেলা ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ সুন্দরবন সন্নিহিত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসটি পালন করা হয়েছে। বনবিবাগ সূত্র জানিয়েছে, সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকা ২৩ শতাংশ থেকে ৫২ শতাংশে উন্নীতকরণ করা হয়েছে।
সুন্দরবন একাডেমীর উদ্যোগে এবং খুলনা প্রেস ক্লাব, ট্যুর অপারেটার্স এ্যাসোশিয়েশন অব সুন্দরবন, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এবং খুলনা সাইক্লিং কমিউনিটির যৌথ আয়োজনে এবারে কেন্দ্রীয়ভাবে খুলনায় সুন্দরবন দিবস উদযাপন করা হয়। সুন্দরবন একাডেমীর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদিরের সভাপতিত্বে এবং তছলিম আহমেদ টংকারের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন, খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম, খুলনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক পূর্বাঞ্চল সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সনি, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খান মোতাহার হোসেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাসনাহেনা, খুলনা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মামুন রেজা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক মোঃ নাজমুস সাদাত।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, সুন্দরবনের সুরক্ষায় সুন্দরবন দিবস পালন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের জন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রী, সচিব এবং বনবিভাগের সাথে অধিপরামর্শ করতে হবে। সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের এই দাবি অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। অবিলম্বে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া গেলে সামনের বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালিত হবে।
সুন্দরবন দিবসে এবারে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়, “প্লাস্টিক ও পলিথিনমুক্ত সুন্দরবনের জনপদ”। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, প্লাস্টিক এবং পলিথিন কোন অবস্থাতেই নষ্ট হয় না। এটি ভেঙে গিয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আকারে মাইক্রো প্লাস্টিক এবং ন্যানো প্লাস্টিক হিসেবে প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। সুন্দরবনাঞ্চলে এই পলিথিন এবং প্লাস্টিক সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভের ঘনত্ব এবং উচ্চতার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জনগণকে সচেতন করা না গেলে শুধু আইন করে প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো যাবে না।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে খুলনায় অনুষ্ঠিত হয় ১ম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন। পরের বছর থেকেই খুলনাসহ সুন্দরবন সন্নিহিত জেলাগুলোতে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে সুন্দরবন দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে এই দিবস পালনের কর্মকাণ্ডে সংযুক্ত থাকে সুন্দরবন একাডেমী, বন বিভাগ, বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুন্দরবন সংলগ্ন সাংবাদিক সমাজ এবং প্রকৃতিপ্রেমী আপামর মানুষ।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকা ২৩ শতাংশ থেকে ৫২ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে পর্যটন খাতে সুন্দরবনে রাজস্ব আয় হয় এক কোটি ৫১ লাখ ৭৪ হাজার ৩৯০ টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে আয় হয় এক কোটি ৮৭ লাখ ৬৫ হাজার ৮ টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে আয় হয় এক কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ১৬৬ টাকা। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে আয় হয় ২ কোটি ২৪ লাখ ৮৩ হাজার ৫৮০ টাকা। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে আয় হয় ২ কোটি ২৪ লাখ ৮৩ হাজার ৫৮০ টাকা। এছাড়া সবশেষ ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সুন্দরবনে রাজস্ব আয় হয় ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৩২ হাজার ৪৮০ টাকা। এছাড়াও সুন্দরবন থেকে প্রতি বছর মাছ, গোলপাতা, মধু আহরণে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব আয় হয়ে থাকে।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ অংশের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনে ২০১৮ সালের শুমারি অনুযায়ী ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ ও ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী রয়েছে। সে সময় বাঘ ছিল ১১৪টি। গত বছর ১ জানুয়ারি আবারও বাঘশুমারি শুরু হয়, যা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এবার শুমারিতে বাঘের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ২০২৩ সালের শুমারি অনুযায়ী বনে চিত্রা হরিণ, বন্য শূকর ও বানরের সংখ্যা বেড়েছে। বনে ২০০৪ সালে চিত্রা হরিণ ছিল ৮৩ হাজার, ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৪টিতে। বন্য শূকর ২০০৪ সালে ছিল ২৮ হাজার, ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৫১৫টিতে। ২০০৪ সালে বানর ছিল ৫১ হাজার, ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৪টিতে। এ ছাড়া বর্তমানে বনে গুইসাপ রয়েছে ২৫ হাজার ১২৪টি ও শজারু ১২ হাজার ২৪১টি। ২০২৩ সালের আগে কখনও এ দুটি প্রাণীর শুমারি হয়নি। তবে আশির দশকে মায়া হরিণ ছিল ২ হাজার ২৬৫টি, ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৮৭টিতে।
১৯৯৫ সালে বনের নদীতে কুমির ছিল ১৫০ থেকে ২০০টি, ২০১৬ সালের জরিপে কুমিরের সংখ্যা দেখানো হয় ১৫০ থেকে ২০৫টি। তবে কমেছে দুই প্রজাতির ডলফিন। ২০০৬ সালে বনের নদীতে ছিল ৪৫১টি ইরাবতী ডলফিন ও ২২৫টি শুশুক। ২০১৯ সালে কমে দাঁড়ায় ইরাবতী ডলফিন ১১৩টি ও শুশুক ১১৮টি।