By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
Reading: সুন্দরবনের জানা অজানা বিভিন্ন তথ্য ও ইতিহাস জানতে হবে নতুন প্রজন্মকে পর্ব ৫
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ই-পেপার
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > সুন্দরবনের জানা অজানা বিভিন্ন তথ্য ও ইতিহাস জানতে হবে নতুন প্রজন্মকে পর্ব ৫
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সুন্দরবনের জানা অজানা বিভিন্ন তথ্য ও ইতিহাস জানতে হবে নতুন প্রজন্মকে পর্ব ৫

Last updated: 2025/03/26 at 7:46 PM
করেস্পন্ডেন্ট 5 hours ago
Share
SHARE

সিরাজুল ইসলাম , শ্যামনগর ‌: “বঙ্গদেশের দক্ষিণ সীমায় অবস্থিত সমুদ্র কুলবর্তী জঙ্গলাকীর্ণ ভূ-ভাগকে সুন্দরবন বলে। নিম্নবঙ্গে যেখানে গঙ্গা বহু শাখা বিস্তার করিয়া, সাগরে আত্মবিসর্জন করিয়াছেন, প্রাচীন সমতটের দক্ষিণাংশে অবস্থিত সেই লবণাক্ত পললময় অসংখ্য বৃক্ষ-গুল্ম সমাচ্ছাদিত শ্বাপদ-সঙ্কুল চরভাগ সুন্দরবন বলিয়া পরিকীর্ত্তিত হয়। ইহা পশ্চিমে ভাগিরথীর মোহনা হইতে পূর্বে মেঘনা মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত। কেহ কেহ মেঘনার মোহনারও পূর্বে অর্থাৎ নোয়াখালী চট্টগ্রাম প্রভৃতি জেলায় এবং হাতিয়া, সন্দীপ প্রভৃতি দ্বিপের দক্ষিণভাগে অবস্থিত বনভাগকেও সুন্দরবনের অন্তর্গত মনে করেন। প্রকৃত পক্ষে গঙ্গা ও মেঘনার অন্তর্বতী ভূ-ভাগই সুন্দরবন। ইহা বর্তমান কালে চব্বিশ পরগনা, খুলনা এবং বাখরগঞ্জ এই তিনটি জেলার অন্তর্গত এবং এই তিনটি জেলার যে অংশ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের স্বত্বাধীন, তাহার দক্ষিণভাগে অবস্থিত।”
—

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার বহুমুখী উন্নয়নের ফলে মানুষ বর্তমানে অসীম শক্তির অধিকারী হয়েছে। তাই প্রকৃতিকে মানুষ যথেচ্ছ ব্যবহার করতে পারছে। মানব জাতি এমন এক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত সভ্যতা সৃষ্টি করেছে যা প্রকৃতির উপর অতিমাত্রায় চাপ সৃষ্টি করেছে। বিঘ্নিত হয়েছে প্রতিবেশগত বিধিব্যবস্থা। প্রাকৃতিক যেসব সমীকরণ নিয়ম-কানুনের মধ্য দিয়ে বিশ্বজগত বিকশিত হচ্ছিল তাকে জোর করে মানুষ নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে ওইসব নিয়ম-কানুনের বিরুদ্ধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার ফলে বিশ্ব প্রকৃতির ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। প্রতিবেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন-বনানী, তার সৃষ্ট নানান বৃক্ষরাজি, লতা-গুল্ম, কীট পতঙ্গ, বনরাজির জলাভূমি এবং তার মধ্যে জাত মৎস্যকুল, অন্যান্য জলজপ্রাণী সবকিছুর প্রতি মানুষের স্বেচ্ছাচারী আচরণ প্রকৃতির লক্ষ-কোটি বছরের নিয়মবিধিকে পাল্টে দিয়েছে। এই সব অপরিণামদর্শী ক্রিয়াকর্মের পরোক্ষ ফল হিসেবে সৃষ্টি হচ্ছে পরিবেশের মহাসংকট। ভাঙন চলছে বর্তমান জীবমন্ডলে। মানবজাতি এর ভয়াবহ কুফল ইতিমধ্যে প্রত্যক্ষ করতে শুরু করেছে। প্রশ্ন হল প্রতিবেশ-পরিবেশগত এই সংকট সমাধানের মূল চাবিকাঠি কোথায়? এক পক্ষ বলছেন এই সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কঠিন। আবার কেউ কেউ বলছেন দূষণের মাত্রা রোধ করে এ সমস্যার মীমাংসা করা যাবে।
বিষয়টিকে শুধু বস্তুগতভাবে মীমাংসা করা যাবে না, আংশিক দিক দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করলেও কাজ হবে না। এ বিষয়ের মীমাংসার ক্ষেত্রে দার্শনিক দৃষ্টিকোণ স্থির করতে হবে। কী সেই দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি? সে দৃষ্টিভঙ্গি হল, এই গ্রহের অধিবাসী সকল প্রাণী-জীবকুল বিশেষ করে মানবজাতির জীবনধারা ও কর্মকাণ্ডের সামাজিক পুনর্গঠন এবং মানব সমাজের যুথবদ্ধতা, পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং মানুষ ও অন্যান্য জীব ও প্রাণীকুলের সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনপদ্ধতি এবং প্রকৃতির প্রতি যথাযথ আচরণ। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে সংকট মীমাংসার পদ্ধতি গ্রহণ করলে মানব সমাজের ক্ষুদ্রাংশ কর্তৃক বৃহদাংশের শোষণ রহিত হবে এবং প্রতিষ্ঠিত হবে প্রকৃতির সাথে সুসামঞ্জস্যপূর্ণ এক সুখকর সমাজব্যবস্থা। এই দার্শনিক-বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষিতে জগতকে গড়ে তোলার কর্মসূচী গ্রহণ ছাড়া ভিন্ন কোন উপায় নাই।
এখন দেখা যাক বর্তমানে যে সংকটে আমরা পড়েছি এর কারণগুলি কী কী? একথা সত্য যে মানবজাতির সভ্যতার উষালগ্নে তার যে বিকাশ (মানবজাতি – সমাজ ও প্রকৃতির) তা ছিল প্রকৃতির সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সদ্ভাবযুক্ত, সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং প্রতিবেশবান্ধব। সে ক্ষেত্রে বলা যায় মানবজাতির প্রাথমিক যেসব সামাজিক, বৈষয়িক, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল তা সবই প্রকৃতি তাদের শিখিয়েছিল, এমনকি প্রকৃতি তাদের পথ দেখিয়েছিল। কিন্তু আজ বিকশিত মানবসমাজ তার বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নতির মধ্য দিয়ে প্রকৃতিকে শুধু নিয়ন্ত্রণই নয় বরং তাকে রূপান্তর করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। সাধারণভাবে বলা যায় মানবজাতি তার সীমা লঙ্ঘন করছে প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে। প্রকৃতির দ্রব্য সামগ্রীর যথেচ্ছ ব্যবহার এবং সেসব কিছুকে ইচ্ছামত রূপান্তর এক ভয়ংকর পরিণতির দিকে নিতে চলেছে এই পৃথিবী নামক গ্রহটিকে। আর এসব কিছু করছে মানবজাতির কতিপয় অংশ। অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে সীমাহীন সম্পদ ও ক্ষমতা লাভের জন্য, আরো অধিক মুনাফা লাভের জন্য, আরো বেশি উৎপাদনের জন্য আরো বেশি শোষণ করার জন্য ওই কতিপয় মানুষ প্রকৃতি বিরোধী সকল কুকর্ম করছে। বিশ্বজনীন সুপরামর্শ, বিজ্ঞজনের মতামত, আপামর মানুষের বিদ্রোহ-বিক্ষোভ কোন কিছুই তাদের এই দুষ্কর্ম থেকে বিরত করতে পারছে না।
আজ মানবজাতির ভবিষ্যৎ ও অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের বুঝতে হবে এবম্বিধ কর্মকাণ্ড ক্রমাগত চালিয়ে গেলে প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ফলে জীবমন্ডলের শুধু মানবজাতির আলাদাভাবে ক্ষতি হবে না, ক্ষতি হবে সমগ্র জীবকুলের। ধ্বংস হবে মানবসমাজ। এই পৃথিবীতে আজ মানুষের সার্বিক কর্মকাণ্ড যেসব নেতিবাচক ফল প্রসব করছে তাতে প্রকৃতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, এই মানবসমাজ বাস্তবিকপক্ষে প্রকৃতিরই সামাজিক রূপ। এখানে সীমাহীন হস্তক্ষেপ বাঞ্ছনীয় নয়।
প্রকৃতির সাথে মানবজাতি, জীবমন্ডল, প্রতিবেশ, সমাজব্যবস্থা এবং এর সকল নেতিবাচক ক্রিয়াকর্ম যেভাবে মানবজাতিকে ক্রমাগত ধ্বংসের দিকে নিয়ে চলেছে ঠিক তেমনি বাংলাদেশের শাসক-শোষক শ্রেণীর অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের ফলে আমাদের অস্তিত্বের চিহ্ন ফলক সুন্দরবনের মহাক্ষতি সাধন করে চলেছে। একে একে এসব বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করব।
দুই

প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রের অপূর্ব সমাহারে সমৃদ্ধ সুন্দরবনের নামকরণ নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। সুন্দরবনে সুন্দরীগাছ নামে একপ্রকার গাছের নামানুসারে এই বনের নাম হয়েছে সুন্দরবন। এই গাছের কাঠের রং লাল বর্ণ; তাই সুন্দর এবং সেই কারণে এই বনের নাম সুন্দরবন। অন্য এক পক্ষ বলেন, এটি সমুদ্রের বন। সমুদ্রকে সাধারণ মানুষ সমুন্দুর বলে থাকে। তাই এটা সমুন্দুরবন; তার অপভ্রংশ সুন্দরবন। বরিশালের ইতিহাস লেখক ব্রিটিশ পণ্ডিত মি. বিভারিজ অনুমান করেন যে, বাখেরগঞ্জ জেলার সুগন্ধা নদীর নামের থেকে সুন্দরবন নাম এসেছে। এককালে বাখেরগঞ্জে সুগন্ধা নামে একটি প্রবল নদী প্রবাহিত ছিল। এই নদীতীরে সনাতন ধর্মের একটি পিঠস্থান আছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশ্বাস সতী পার্বতী তাঁর পিতার মুখে পতিনিন্দা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিলেন। তখন তাঁর স্বামী শিব সতীকে স্কন্ধে করে নৃত্য করতে থাকলে সতী পার্বতীর দেহ ছিন্নভিন্ন হয়। ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে তাঁর দেহখণ্ড পড়ে এবং সেই স্থানগুলোকে পিঠস্থান বলে। এই ওই স্থানগুলি হিন্দুদের কাছে অতি পবিত্র তীর্থস্থান বলে বিবেচিত। সতীদেহের নাক এই সুগন্ধা নদী তীরে পড়েছিল। সেই থেকে নদীর নাম সুগন্ধা এবং সুগন্ধা নদীতীরের বনভাগ সুগন্ধার বন বা সুন্দরবন বলে পরিচিতি পায়। অন্য এক পক্ষ বলতে চান যে, পূর্বে বাখেরগঞ্জ জেলা চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের বনভাগকে চন্দ্রদ্বীপবন বলত। ওই চন্দ্রদ্বীপবন থেকে এর নাম সুন্দরবন হয়েছে। আবার এক পক্ষ চন্দ্রভন্ড নামে এক বন্যজাতির নামের সাথে সুন্দরবনের নামের সাদৃশ্য অনুমান করেছেন। এই জাতির কথা বাখেরগঞ্জে ইদিলপুরে প্রাপ্ত তাম্রশাসনে উল্লেখ রয়েছে।
যত আলোচনা এবং মতামত থাকুক না কেন সুন্দরী গাছ, সিন্দুর কাঠ বা সুন্দরী কাঠ যেহেতু সারা জঙ্গল জুড়ে ছড়িয়ে আছে, তাই সুন্দরী গাছের থেকেই সুন্দরবনের নামের উৎপত্তি বলে আমরা ধরে নিতে পারি। এই সুন্দরী গাছ অজস্র পরিমাণে উৎপন্ন হয় সুন্দরবনে। এটি সুন্দরবনের প্রধান, স্থায়ী, সর্বব্যাপী বিস্তৃত এবং অতিপ্রয়োজনীয় ও মূল্যবান কাঠও বটে। এই গাছগুলিতে অধিক ডালপালা হয় না, কাঠ অত্যন্ত শক্ত ও ভারী, অনেক লম্বা হয়, যাবতীয় সরঞ্জামাদি, নৌকা, লঞ্চসহ বহুবিধ কাজ করা হয়। সে কারণে সুন্দরী কাঠকে সুন্দরবনের রাজা বলা যেতে পারে। সুতরাং এর নামানুসারেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে একথা নির্দ্বিধায় মেনে নেয়া চলে।
এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন যে, সুন্দরবনকে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল বলা হয়। এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ম্যানগ্রোভ বন। এই স্থানে দিনে ৪ বার জোয়ারভাটার টান হয়। সমুদ্রের লোনা জলরাশি ২ বার ভিতরে ঢুকে অঞ্চল ভাসিয়ে দেয়, আবার ২ বার সব জল টেনে নিয়ে ভূখণ্ড শুকিয়ে ফেলে। সমুদ্রের লবণ জলের প্রতিদিন এই আসা-যাওয়ার মধ্যে জন্ম নেয়, টিকে থাকে এবং বিকশিত হয় যে বন তাকে বলে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা ম্যানগ্রোভ বন। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট অপার সৌন্দর্যমন্ডিত, অগাধ জীববৈচিত্র্যে সম্ভারে পরিপূর্ণ হাজারো প্রজাতির প্রাণীকুল ও বৃক্ষরাজি সুশোভিত পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এই সুন্দরবনের রয়েছে এক সুপ্রাচীন ইতিহাস।
সুন্দরবনের সন্নিকটবর্তী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল একদা ভাটি প্রদেশ নামে পরিচিত ছিল। নদীমাতৃক বাংলাদেশের সকল নদীগুলোই দক্ষিণগামী। কারণ এর অধিকাংশ নদী উত্তরের হিমালয় থেকে জন্ম নিয়ে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। একসময়ে এই  ভাটির দেশে ১২ জন রাজার প্রাধান্য ছিল বলে পুরো বাংলাদেশটাকেই ‘বারভাটি বাঙ্গালা’ নামে ডাকা হত।
এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ম্যানগ্রোভ বন। এই স্থানে দিনে ৪ বার জোয়ারভাটার টান হয়। সমুদ্রের লোনা জলরাশি ২ বার ভিতরে ঢুকে অঞ্চল ভাসিয়ে দেয়, আবার ২ বার সব জল টেনে নিয়ে ভূখণ্ড শুকিয়ে ফেলে। সমুদ্রের লবণ জলের প্রতিদিন এই আসা-যাওয়ার মধ্যে জন্ম নেয়, টিকে থাকে এবং বিকশিত হয় যে বন তাকে বলে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা ম্যানগ্রোভ বন। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট অপার সৌন্দর্যমন্ডিত, অগাধ জীববৈচিত্র্যে সম্ভারে পরিপূর্ণ হাজারো প্রজাতির প্রাণীকুল ও বৃক্ষরাজি সুশোভিত পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এই সুন্দরবনের রয়েছে এক সুপ্রাচীন ইতিহাস।
স্রোতস্বিনী গঙ্গা বহু শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে যেখানে সমুদ্রে পতিত হয়েছে সেই স্থানের বেলাভূমির উপরিভাগ জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে ক্রমান্বয়ে সুন্দরবনের সৃষ্টি হয়েছে। পুরাকালে গঙ্গা যেখানে সমুদ্রে পতিত হয়েছিল সেই স্থান থেকে বর্তমানের গঙ্গাসঙ্গম শত শত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গঙ্গা হিমালয় হতে অধিক পরিমাণে গৈরিক মাটি বহন করে সাগরে আনে। এই গিরিমাটি এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোর ভগ্ন এবং ক্ষয়িত মাটির সংমিশ্রণে পলিমাটির সৃষ্টি হয়। প্রথমে এই পলিমাটির দ্বারা বেলাতটের সৃষ্টি হয় এবং প্রথমে দ্বিপাকারে এবং পরে তা জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে বনাঞ্চলে পরিণত হয়। গঙ্গাবাহিত পলিমাটি এবং সুস্বাদু ও সুমিষ্ট জলরাশির সাথে সমুদ্রের লবণ জলের সংমিশ্রণে এক বিশেষ ধরনের জল উৎপন্ন হয়। ওই পলিমাটি এবং ওই বিশেষ ধরনের জলের দ্বারা কতকগুলি বিশেষ বিশেষ লতাগুল্ম ও বৃক্ষরাজি জন্ম নেয়। এটা সুন্দরবনের এক বিরল বিশেষত্ব যা পৃথিবীর আর কোথাও দৃষ্টিগোচর হয় না।
সুন্দরবন সত্যিই অতি সুন্দর। কিন্তু এই বনে ফলজ বৃক্ষ নেই বললেই চলে। যা দুএকটি দেখা যায় তার ফল মানবকুলের অভক্ষ্য, তা কেবল পাখ-পাখালি এবং বানরের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত। এ বনে স্নিগ্ধছায়া বহুবিস্তৃত বট-অশ্বত্থ নাই। সুন্দরবনের সকল গাছপালাই দীর্ঘকায়। কারণ এত ঘন, নিবিড় বন বিধায় সূর্য কিরণ প্রত্যাশী সবাইকে মাথা উঁচু করে উপরের দিকে উঠতে হয়। তাই তাকে লম্বা হতে হয়। এই বনে কোন ফুলগাছ হয় না। যা সামান্য আছে তার ফুল সুগন্ধী হলেও মানুষের প্রয়োজনে লাগে না। কারণ এই বন এতোটাই শ্বাপদসংকুল, এতটাই কর্দমাক্ত, এতটাই কন্টকাকীর্ণ, এতটাই বিপদজনক যে সেই সবকিছুর কাছে মানুষ পৌঁছাতে পারে না। তারপরও সুন্দরবন বড়ই সুন্দর। এর বন্য প্রকৃতির বন্য শোভা, এর নদ-নদীগুলোর কুলুকুলু জলধ্বনি, এর পাখিদের কলকাকলি, চঞ্চলা হরিণীর অবাধ বিচরণ, সর্বোপরি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ডোরাকাটা রূপ সত্যি সুন্দরবনকে সৌন্দর্যে গৌরবান্বিত করেছে।
সুন্দরবনের প্রাচীনত্ব নিরুপণ এখনো যথাযথভাবে সম্ভব হয়নি। তবে বঙ্গ সমতটের সর্বত্রই যে একদা সুন্দরবন ছিল তা নানা কারণে অনুমান করা যায়। গঙ্গা মোহনা ক্রমাগত ভূ-গঠন করে করে দক্ষিণে সরে গেছে। সাথে সাথে সুন্দরবনও দক্ষিণে সরেছে এবং উত্তরাঞ্চল চাষাবাদী এলাকায় পরিণত হয়েছে। দেখা গেছে খুলনা শহরের নিকটে পুকুর খনন করে যে সব সিন্দুর গাছের গুঁড়ি পাওয়া গেছে ঠিক সেই ধরনের সিন্দুর গুঁড়ি পাওয়া গেছে কলকাতার সন্নিকটে শিয়ালদহ স্টেশনের নিকট পুকুর খনন করে। এ থেকে প্রমাণ হয় যে, এই সমতটের সর্বত্রই সম্ভবত সুন্দরবন ছিল। সুসাহিত্যিক প্রমথনাথ বিশি তাঁর ‘কেরি সাহেবের মুন্সি’ উপন্যাসে  কলকাতার অতি সন্নিকটে গভীর বনের বর্ণনা দিয়েছেন। অনুমান হয় যে ওটাও তখন সুন্দরবনেরই অংশীভূত ছিল।
খুলনা শহরের নিকটে পুকুর খনন করে যে সব সিন্দুর গাছের গুঁড়ি পাওয়া গেছে ঠিক সেই ধরনের সিন্দুর গুঁড়ি পাওয়া গেছে কলকাতার সন্নিকটে শিয়ালদহ স্টেশনের নিকট পুকুর খনন করে। এ থেকে প্রমাণ হয় যে, এই সমতটের সর্বত্রই সম্ভবত সুন্দরবন ছিল। সুসাহিত্যিক প্রমথনাথ বিশি তাঁর ‘কেরি সাহেবের মুন্সি’ উপন্যাসে  কলকাতার অতি সন্নিকটে গভীর বনের বর্ণনা দিয়েছেন। অনুমান হয় যে ওটাও তখন সুন্দরবনেরই অংশীভূত ছিল।
১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির এক অধিবেশনে রেনী পুত্র (H.J. Rany’’র মধ্য পুত্র) সুন্দরবন ও প্রতাপাদিত্য সম্পর্কে এক প্রবন্ধ পাঠ করেন। সভাপতি সবার মতামত জানতে চাইলে জনৈক মি: রেভারেন্ড লং (Rev. J. Long) বলেছিলেন যে, ১৮৪৮ সলে প্যারিস শহরে রাজকীয় অনুসন্ধান পরিষদের এক প্রধান পণ্ডিত তাঁকে ভারতবর্ষের একটি মানচিত্র দেখিয়েছিলেন। ওটি জনৈক পর্তুগীজ পর্যটকের আঁকা ছিল এবং তা প্রায় তখন থেকে ২০০ বছর আগের আঁকা। অর্থাৎ ওটি ছিল মোঘল রাজত্বের মধ্যযুগের। ঐ মানচিত্রে সুন্দরবনকে উর্বর দেশ দেখানো হয়েছে এবং সেখানে ৫টি নগরের উল্লেখ রয়েছে। ডি. ব্যারোস প্রণীত মানচিত্রেও এরূপ দেখানো হয়েছে এবং ভ্যাসডেন ব্রুকও তা সমর্থন করেছেন। এসব মানচিত্র থেকে জানা যায় যে, সুন্দরবনের সমুদ্র উপকূলে প্যাকাকুলি, কুইপিটাভাজ, নলদী, ডাপারা এবং টিপরিয়া নামে পাঁচটি বাণিজ্য বন্দর ছিল।  এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে, ঐকালে সুন্দরবন সংলগ্ন অনেক বন্দর ছিল কিন্তু পর্তুগীজদের সাথে যোগাযোগ এবং ব্যবসায়-বাণিজ্য ছিল ঐ পাঁচটি নগরীর।
ডি. ব্যারোস প্রণীত মানচিত্রেও এরূপ দেখানো হয়েছে এবং ভ্যাসডেন ব্রুকও তা সমর্থন করেছেন। এসব মানচিত্র থেকে জানা যায় যে, সুন্দরবনের সমুদ্র উপকূলে প্যাকাকুলি, কুইপিটাভাজ, নলদী, ডাপারা এবং টিপরিয়া নামে পাঁচটি বাণিজ্য বন্দর ছিল।  এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে, ঐকালে সুন্দরবন সংলগ্ন অনেক বন্দর ছিল কিন্তু পর্তুগীজদের সাথে যোগাযোগ এবং ব্যবসায়-বাণিজ্য ছিল ঐ পাঁচটি নগরীর।
প্রাচীন কালে সুন্দরবন সংলগ্ন বন্দরগুলি ছিল বড়ই মনোরম। অসংখ্য নদীর মোহনা, সাগরকুলে বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা, তদুপরি গভীর অরণ্য সবকিছু মিলিয়ে এই স্থানগুলো ছিল অতীব মনোরম। এখানে অবস্থান করলে মনে হবে একদিকে রাঢ়ভূমি ও কলিঙ্গ আর অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও আরাকান ভূমি সবাইকে আকর্ষণ করছে এই সুন্দরবন সংলগ্ন বাণিজ্য নগরীগুলো। আর ওই সকল জনপদের প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সম্ভার আমদানী-রফতানীর মাধ্যমে ওখানকার মানুষের অভাব মোচন করত। বিশেষতঃ যখন পশুর ও বলেশ্বরে পার্বত্য স্রোতের প্রাবল্য দেখা দিত তখন এসকল স্থানের গুরুত্ব আরও বেড়ে যেত। ইতিহাসখ্যাত চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্য তরীগুলোও এসব এলাকায় গমনাগমন করত বলে অনুমান হয়।

বৃহত্তর খুলনা জেলার প্রায় সবকটি নদী এঁকে-বেকে, ঘুরে-ফিরে শেষ পর্যন্ত সুন্দরবনের মধ্যে প্রবেশ করেছে। খুলনা জেলার নদ-নদীগুলোর বিবরণ এখানে প্রয়োজনীয়। খুলনার অসংখ্য নদী-নালা, অগণিত খাল-বিল জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে-বিছিয়ে আছে এ জেলার স্থলভাগ জুড়ে। বিদগ্ধ লেখকেরা একে মানবদেহের অন্তর্বাহী ধমনী ও শিরার সাথে তুলনা করেছেন। খুলনা জেলার এককালীন সেটেলমেন্ট অফিসার মি: এল. আর ফোকাস (FAWCUS) এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন নিম্নলিখিতভাবে:
‘
এই জেলার বহু নদী আগের মতো তীব্রগতি স্রোতস্বিনী বা সুগভীর নাই বটে তবে এখনো বর্ষাকালে যে কটি নদী আছে তার সবকটিই প্রবল স্রোত বহন করে সুন্দরবনের মধ্যে প্রবেশ করে। আমরা আগেই বলেছি যে এই জেলার প্রায় সকল নদ-নদীই সুন্দরবনের মধ্যে প্রবেশ করেছে। যে যাই হোক, এ ব্যাপারে প্রাসঙ্গিক আলোচনা এই যে, এখানকার কৃষি সমাজ, নগরসভ্যতা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি প্রভৃতি গঠনে সর্বোপরি সুন্দরবনের সজীবতা, স্থায়ীত্ব এবং বিকাশের প্রয়োজনে নদ-নদীগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ড. নীহাররঞ্জন রায় তাঁর বাঙ্গালির ইতিহাস: আদিপর্ব গ্রন্থে নদ-নদীর গুরুত্ব প্রসঙ্গে এভাবে উল্লেখ করেছেন,
‘বাঙালার ইতিহাস রচনা করিয়াছে বাঙালার ছোট-বড় অসংখ্য নদনদী। এই নদনদীগুলিই বাঙালার প্রাণ; ইহারাই বাঙালাকে গড়িয়াছে, বাঙালার আকৃতি প্রকৃতি নির্ণয় করিয়াছে যুগে যুগে, এখনও করিতেছে। এই নদনদীগুলিই আশীর্বাদ; এবং প্রকৃতির তাড়নায়, মানুষের অবহেলায় কখনও কখনও যেটি হয় বাঙালার অভিশাপও। এসব নদনদী উচ্চতর ভূমি হইতে প্রচুর পলি বহন করিয়া আনিয়া বঙ্গের বদ্বীপের নিম্নভূমিগুলিকে গড়িয়াছে, এখনও সমানে গড়িতেছে; সেহেতু বদ্বীপ বঙ্গের ভূমি কোমল, নরম ও কমনীয়; এবং পশ্চিম, উত্তর এবং পূর্ববঙ্গের কিয়দংশ ছাড়া বঙ্গের প্রায় সবটাই ভূতত্ত্বের দিক হইতে নবসৃষ্টভূমি। এই কোমল, নরম ও নমনীয় ভূমি লইয়া বাঙলার নদনদীগুলি ঐতিহাসিককালে কত খেলাই না খেলিয়াছে; উদ্দাম প্রাণলীলায় কতবার যে পুরাতন খাত ছাড়িয়া নূতন খাতে, নূতন খাত ছাড়িয়া আবার নূতনতর খাতে বর্ষা ও বন্যার বিপুল জলধারাকে দুরন্ত অশ্বের মতো মত্ত ঐরাবতের মতো ছড়াইয়া লইয়া গিয়াছে তাহার ইয়ত্তা নাই। সহসা এই খাদ পরিবর্তনে কত সুরম্য নগর, কত বাজার-বন্দর, কত বৃক্ষশ্যামল গ্রাম, শস্যশ্যামল প্রান্তর, কত মঠ ও মন্দির, মানুষের কত কীর্তি ধ্বংশ করিয়াছে, আবার নতুন করিয়া সৃষ্টি করিয়াছে, কত দেশখন্ডের চেহারা ও সুখ সমৃদ্ধি একেবারে বদলাইয়া দিয়াছে তাহার হিসাবও ইতিহাস সর্বত্র রাখিতে পারে নাই। অনেক নতুন পথ মরিয়া গিয়াছে, প্রশস্ত খরতোয়া নদী সংকীর্ণ ক্ষীণস্রোতা হইয়া পড়িয়াছে; অনেক নদী নতুন খাতে নতুনতর আকৃতি-প্রকৃতি লইয়া প্রবাহিত হইতেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে পুরাতন নামও হারাইয়া গিয়াছে, নদীও হারাইয়া গিয়াছে; নতুন নদীর নতুন নামের সৃষ্টি হইয়াছে! এসব নদনদীর ইতিহাসই বাঙালার ইতিহাস। ইহাদেরই তীরে তীরে মানুষ-সৃষ্ট সভ্যতার জয়যাত্রা; মানুষের বসতি, কৃষি পত্তন, গ্রাম, বন্দর, বাজার, নগর, বন্দর, সম্পদ, সমৃদ্ধি, শিল্প-সাহিত্য, ধর্মকর্ম সবকিছুরই বিকাশ। বাঙলার শস্যসম্পদ একান্তই এই নদীগুলির দান।’
আমরা তাই বলি, সুন্দরবনের জন্ম, বিকাশ ও বৃদ্ধির পিছনে বৃহত্তর খুলনা জেলার নদীগুলির অনবদ্য অবদান রয়েছে। খুলনার হাজারো জনপদ বিধৌত সুমিষ্ট জলরাশি বয়ে এনে সেগুলো সুন্দরবনের জীবন-রস সরবরাহ করেছে। এই জেলাতে রয়েছে সুবিশাল বিল — দিগন্তবিস্তৃত; যার এপার থেকে ওপার দেখা যেত না। যেমন বিল ডাকাতিয়া, বিল পাঙ্গালিয়া, বিল পাবলা, বিল বয়রা, নালুয়ার বিল, ধতুখালির বিল, গাওলার বিল, কেন্দুয়ার বিল, পদ্মবিলার বিল, কোলার বিল প্রভৃতি। এইসব বিলে বর্ষায় জল জমে উৎকৃষ্ট কৃষি ফলায়। ওইসব বিলের কোটি কোটি গ্যালন জলরাশি বহন করে নিয়ে আসে নদীগুলি আর সমুদ্রের লোনা জলের সাথে সংমিশ্রিত হয়ে এক বিরল রসায়নের জন্ম হয়। সেই রসায়ন প্রক্রিয়ায় সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজি জন্ম নেয়। বেঁচে থাকে, বেড়ে ওঠে এ বনের জীবজন্তু, পশুপাখী, কীটপতঙ্গ, মৎস্যকুল এবং অসংখ্য জলজ ও স্থলজ প্রাণীকুল।
ছোট বড় সব মিলিয়ে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে মোট ৪৫০টি নদনদী প্রবাহিত হয়েছে। এর সবকটিই স্থলভাগ থেকে মিষ্টি জলের প্রবাহ বহন করে নিয়ে সমুদ্রে ঢেলে দেয়। এখানে আমরা অল্প কটি প্রধান প্রধান নদনদীর নাম উল্লেখ করলাম: তালেশ্বর, বলেশ্বর, শিবসা, পানাগুছি, কালিগঙ্গা, বড়শিয়া, মুড়িখালি, চিত্রা, রূপসা, ভদ্রা, হরিণঘাটা, কুমার নদী, কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া, ঘসিয়াখালি, পশুর, আড়-পাঙ্গাশিয়া, ভাঙ্গরা, কুঙ্গা, মালঞ্চ, সাতক্ষীরা নদী, সুতোরখালি নদী, রায়মঙ্গল, মারজাতী, হরিণডাঙ্গা, মহাগঙ্গা, হরিপুর, সোনাই, বুধহাটির গাঙ্গ, টাকি, বাদুরগাছা, গুচিয়াখালী, কয়রা নদী, কালিন্দী, পায়রা, কচা, মৈয়ার গাং, কাজিবাছা, কাকশিয়ালি, নারায়ণখালি, কদমতলি, বাংরা, শীলা, কলাগাছিয়া, বাঁশতলি, শালঙ্খী, শাকবাড়িয়া, আলকী, মানিকদিয়া, চন্দেশ্বর, পানকুশি, মাঞ্জাল, ঠান্ডাই, পানখালী, শোলমারী, হাসকুড়া, নাইমখালি, শাতাল, ভৈরব, ভোলা প্রভৃতি।
এখানে আমরা অল্প কটি প্রধান প্রধান নদনদীর নাম উল্লেখ করলাম: তালেশ্বর, বলেশ্বর, শিবসা, পানাগুছি, কালিগঙ্গা, বড়শিয়া, মুড়িখালি, চিত্রা, রূপসা, ভদ্রা, হরিণঘাটা, কুমার নদী, কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া, ঘসিয়াখালি, পশুর, আড়-পাঙ্গাশিয়া, ভাঙ্গরা, কুঙ্গা, মালঞ্চ, সাতক্ষীরা নদী, সুতোরখালি নদী, রায়মঙ্গল, মারজাতী, হরিণডাঙ্গা, মহাগঙ্গা, হরিপুর, সোনাই, বুধহাটির গাঙ্গ, টাকি, বাদুরগাছা, গুচিয়াখালী, কয়রা নদী, কালিন্দী, পায়রা, কচা, মৈয়ার গাং, কাজিবাছা, কাকশিয়ালি, নারায়ণখালি, কদমতলি, বাংরা, শীলা, কলাগাছিয়া, বাঁশতলি, শালঙ্খী, শাকবাড়িয়া, আলকী, মানিকদিয়া, চন্দেশ্বর, পানকুশি, মাঞ্জাল, ঠান্ডাই, পানখালী, শোলমারী, হাসকুড়া, নাইমখালি, শাতাল, ভৈরব, ভোলা প্রভৃতি।
এখানে আমরা মাত্র ৫টি নদীর গতিপথের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিচ্ছি।
১) বলেশ্বর নদী: বলেশ্বর সুন্দরবনের সব থেকে অধিক প্রশস্ত নদী। কোথাও কোথাও এর কুল দেখা যায় না। বাগেরহাটের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত এই নদী। পিরোজপুর শহরকে বামে রেখে দক্ষিণগামী হয়েছে। অতঃপর দীর্ঘ ১৪৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সুন্দরবনের আরেক নদী হরিণঘাটার সাথে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এর গতি পথে অনেক গ্রাম, নগর ও বন্দর গড়ে উঠেছে। শরণখোলা নগরীর প্রাণকেন্দ্র এই বলেশ্বর। এখানকার জেলে ও নিকেরীরা এই বলেশ্বরে মাছ ধরে জীবিকার্জন করে। প্রচুর পরিমাণে নানাবিধ মাছ পাওয়া যায় এই নদীতে। বর্ষা মৌসুমে এই নদীতে অসংখ্য ইলিশ ধরা পড়ে। বলেশ্বরের মাছ অতি সুস্বাদু। কিন্তু বলেশ্বর অত্যন্ত ভয়ংকর নদী।
২) বৃহৎ এবং তীব্র খরস্রোতা নদীগুলির মধ্যে শিবসা অন্যতম। শিবসা খুলনা জেলার অতি ভয়ংকর নদীগুলির মধ্যে অন্যতম। সাথে সাথে এটি অতি প্রাণবন্তও বটে। এই নদীটি প্রাচীন কালে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সুন্দরবনের প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্র শেখেরটেক এবং কালিবাড়ি নামে দুটি বন্দর এই নদী তীরেই অবস্থিত ছিল। শিবসার উৎপত্তি কপোতাক্ষ থেকে। বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জন্মস্থান পাইকগাছা উপজেলার রাড়লী নামক গ্রামের কাছে। কপোতাক্ষ থেকে বেরিয়ে শিবসা দক্ষিণমুখী যাত্রা করে। অতঃপর শিবসা বহু ছোট ছোট নদী হরিয়া, খাংরাইল নরা, হাবড়খালি, বাদুরগাছা, ঢাকি, ডেলুটি, মিনাজ, কয়রা প্রভৃতির জলধারা আত্মস্থ করে প্রলয়ংকরী হয়ে ওঠে। একদা গড়াইখালির ত্রিমোহনায় শিবসার রুদ্ররূপ দেখলে সাধারণের হৃদকম্প উপস্থিত হতো। নলিয়ার ফরেস্ট অফিসের দক্ষিণে ভদ্রার আর একটি শাখা যেখানে শিবসার সাথে মিলেছে সেখান থেকেই সুন্দরবনের শুরু। পশ্চিমে এর অন্য একটি শাখা দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এর নাম আধোশিবস। পরে কদ্ধো নদীর সাথে মিলিত হয়ে সমুদ্রে বিলীন হয়েছে। সুন্দরবনের ভিতরে শিবসার বহু শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে রয়েছে।
৩) সুন্দরবনের আরো একটি প্রলয়ংকরী নদী হল পশর। সমুদ্রগামীতার কারণে এ নদীও দক্ষিণমুখী। বহু ছোট নদীর জলরাশিকে পশর নিজের বুকে ঠাঁই দিয়েছে। এদের মধ্যে কাজীবাছা, বৈঠাঘাটা, শোলমারির গাঙ, ঝপঝপিয়া, চুনকুড়ি, ভদ্রা ও শিপশা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। কাজীবাছা যেখানে পশরের সাথে মিলিত হয়েছে সেখান থেকে পশর বিস্তৃত হতে হতে চালনার কাছে বাজুয়া ডাংমারী ফরেস্ট অফিস বরাবরে, সুন্দরবনের বিখ্যাত মজ্জতের সাথে মিলিত হয়। এই সঙ্গমস্থল হতে নদী বৃহদাকার রূপ ধারণ করে পূর্বোক্ত নদীগুলোর সাথে মিলিত স্রোতোধারা বুকে নিয়ে দুবলার চরের (দ্বীপ) কাছে সমুদ্রে পতিত হয়েছে। পথিমধ্যে ত্রিকোণ দ্বীপের উত্তর-পশ্চিম হতে নাম পরিবর্তন হয়ে কদ্ধো বা মায়জাট্টা (মজুত) নাম ধারণ করে। বনাঞ্চলের এই অংশটাকে সাধারণ মানুষ নীলমকল বলে। মায়জাট্টার মোহনা ১০০ শত বছর পূর্বে প্রায় ১৩ কিলোমিটার প্রশস্ত ছিল। মায়জাট্টার মুখে বঙ্গোপসাগরের বিখ্যাত “ফিসারম্যানস আইল্যান্ড” এবং এর পূবদিকে “টাইগার পয়েন্ট” অবস্থিত।

করেস্পন্ডেন্ট June 23, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article যশোরে পৃথক অভিযানে ইয়াবা ও গাঁজাসহ গ্রেফতার ৩
Next Article সাবধান সাতক্ষীরা বাসী চোখ রাঙ্গাচ্ছে করোনা
Leave a comment

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

দিনপঞ্জি

June 2025
S M T W T F S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
« May    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
তাজা খবরসাতক্ষীরা

পতাকা বৈঠকের পর ১৮ বাংলাদেশিকে ফেরত দিলো বিএসএফ

By করেস্পন্ডেন্ট 2 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় জাতীয় ফল মেলা ২০২৫: সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত

By করেস্পন্ডেন্ট 40 minutes ago
সাতক্ষীরা

কার্ড আছে, ভাতা নেই: ভিক্ষা করেই দিন কাটে নয়নের

By করেস্পন্ডেন্ট 2 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

তাজা খবরসাতক্ষীরা

পতাকা বৈঠকের পর ১৮ বাংলাদেশিকে ফেরত দিলো বিএসএফ

By করেস্পন্ডেন্ট 2 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় জাতীয় ফল মেলা ২০২৫: সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত

By করেস্পন্ডেন্ট 40 minutes ago
সাতক্ষীরা

কার্ড আছে, ভাতা নেই: ভিক্ষা করেই দিন কাটে নয়নের

By করেস্পন্ডেন্ট 2 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?