By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
Reading: সুন্দরবনের জানা অজানা বিভিন্ন ইতিহাস নিয়ে জানতে হবে নতুন প্রজন্মকে পর্ব ৪৪
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ই-পেপার
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > সুন্দরবনের জানা অজানা বিভিন্ন ইতিহাস নিয়ে জানতে হবে নতুন প্রজন্মকে পর্ব ৪৪
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সুন্দরবনের জানা অজানা বিভিন্ন ইতিহাস নিয়ে জানতে হবে নতুন প্রজন্মকে পর্ব ৪৪

Last updated: 2025/04/20 at 12:36 PM
করেস্পন্ডেন্ট 4 days ago
Share
SHARE

সিরাজুল ইসলাম ‌, শ্যামনগর ‌: সাতক্ষীরা ‌বাংলাদেশ, একটি ভূখণ্ড। যার বেশির ভাগ জায়গা জুড়ে নদ-নদী। তবে দক্ষিণাঞ্চলে বিস্তৃত বনাঞ্চল। একে “ম্যানগ্রোভ বন” বলা হয়। এর কিন্তু চমৎকার একটা নাম আছে। এই বনে থাকা “সুন্দরী” গাছের নামেই বনের নামটি সুন্দরবন। যদিও “সুন্দরীবন” নামটা বেশি যুক্তিযুক্ত হতো! এই লেখাটা সাজিয়েছেন সিরাজুল ইসলাম ‍সুন্দরবনকে নিয়েই।

মুঘল আমলে স্থানীয় এক রাজা পুরো সুন্দরবনের ইজারা নেন। ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর এর কাছ থেকে স্বত্বাধিকার পাওয়ার পর সুন্দরবন এলাকার মানচিত্র তৈরি করা হয়। বনাঞ্চলটি সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আসে ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভারতের তৎকালীন বাংলা প্রদেশে বন বিভাগ স্থাপনের পর থেকে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ ছিল। বনের উপর মানুষের অধিক চাপ ক্রমেই এর আয়তন সংকুচিত করছে। ১৮২৮ সালে বৃটিশ সরকার সুন্দরবনের স্বত্ত্বাধিকার পায়। ১৮২৯ সালে সুন্দরবনের প্রথম জরিপ কার্য পরিচালনা করেন এল. টি হজেয। ১৮৭৮ সালে সমগ্র সুন্দরবন এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয় এবং ১৮৭৯ সালে সমগ্র সুন্দরবনের  দায়িত্ব বন বিভাগের উপর ন্যস্ত করা হয়। সুন্দরবনের প্রথম বিভাগীয়  বন কর্মকর্তার নাম এম. ইউ. গ্রীন। তিনি ১৮৮৪ সালে সুন্দরবনের বিভাগীয়  বন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে। যা বাংলাদেশের  মোট আয়তনের প্রায় ৪.২% এবং সমগ্র বনভূমির প্রায় ৪৪%।
সুন্দরবনের উপর প্রথম বন ব্যবস্থাপনা বিভাগের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। ১৯৬৫ সালের বন আইন (ধারা ৮) মোতাবেক, সুন্দরবনের একটি বড় অংশকে সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয় ১৮৭৫-৭৬ সালে। পরবর্তী বছরের মধ্যেই বাকি অংশও সংরক্ষিত বনভূমির স্বীকৃতি পায়। এর ফলে দূরবর্তী বেসামরিক জেলা প্রশাসনের কর্তৃত্ব থেকে তা চলে যায় বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তীতে ১৮৭৯ সালে বন ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসনিক একক হিসেবে বন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সদর দপ্তর ছিল খুলনায়। সুন্দরবনের জন্য ১৮৯৩-৯৮ সময়কালে প্রথম বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণিত হয়।
জলাধারসহ পুরো এলাকার আয়তন হিসেব করা হয় ৬,৫২৬ বর্গমাইল (১৬,৯০২ কি.মি)।

বাংলাদেশ বন বিভাগের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৪ সালে ইউএনডিপি, বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় বাঘের পদচিহ্নের ওপর নির্ভর করে একটি জরিপ পরিচালিত হয়। ওই জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি। এর মধ্যে পুরুষ বাঘ ১২১টি, মা বাঘিনী ২৯৮টি, ও বাচ্চা ২১টি। ১০ বছর পর বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্যপুষ্ট স্ট্রেংদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ডলাইফ প্রটেকশন প্রকল্পের অর্থায়নে ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সহায়তায় ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ক্যাপচার ক্যামেরা ব্যবহার করে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ জরিপ শেষ হয়। টেকনিক্যাল সহায়তার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে জরিপ কাজে অংশ নেন ডক্টর ঝালা ও কুরেশি। জরিপে দেখানো হয়েছে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটারে বাঘ আছে ১০৬টি, যা ১০ বছর আগের জরিপের চার ভাগের এক ভাগেরও কম।
এছাড়া,  হরিণ  ১০০,০০০-১৫০,০০০ টি; বানর  ৪০,০০০-৫০,০০০ টি; বন্য শুকর  ২০,০০০-২৫,০০০ টি; কুমির  ১৫০-২০০ টি; উদ বিড়াল  ২০,০০০-২৫,০০০ টি; ও অন্যান্য অনেক প্রাণী বিদ্যমান। এছাড়া গাছের ক্ষেত্রে, বনের ৫১.৭০% এলাকা  জুড়ে সুন্দরী গাছের  প্রধান্য। প্রায় ১৬% এলাকা জুড়ে গেওয়া গাছ বিদ্যমান। এছাড়া পশুর, গরাণ, কেওড়া, ধুন্দুল, খলসি সহ আরো নানাবিধ গাছ বিদ্যমান।
সুন্দরবনের বৃক্ষরাজি
সুন্দরবনে খুবই চমৎকার সব গাছের ভিতরে কিছু গাছের পরিচিতি –
সুন্দরীঃ সুন্দরী সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ। ১৫-১৭ মিটার উচ্চতার এই বৃক্ষের কাঠ অত্যন্ত টেকসই, মজবুত ও ভারী। সাঁকো, নৌকা, আসবাবপত্র, ঘরের খুঁটি, বৈদ্যুতিক পিলার প্রভৃতি তৈরীতে ব্যবহৃত সুন্দরী বৃক্ষ জ্বালানী হিসেবেও উত্তম। সুন্দরী বৃক্ষ সুন্দরবনের পূবাঞ্চল এ অর্থাৎ সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ, বাগেরহাট জেলার শরনখোলা রেঞ্জ, চাঁদপাই রেঞ্জ এবং সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ এর খুলনা রেঞ্জ, সাতক্ষীরা রেঞ্জে সুন্দরী বৃক্ষ পাওয়া যায়।
পশুরঃ বনের অন্যতম মূল্যবান বৃক্ষ হলো পশুর। এই গাছের নামে একটা নদীরও নামকরণ করা হয়েছে। বনের অধিক লোনা অঞ্চলে নদী-খালের তীরে এর বিস্তৃতি। নৌকা, আসবাবপত্র, ঘরের খুঁটি, বৈদ্যুতিক খুঁটি প্রভৃতি তৈরীতে ব্যবহৃত হয়ে আসা এই গাছ বর্তমানে কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ। মাটির নিচে শত বছরেও নষ্ট হয় না পশুর কাঠ। তাই রেল লাইনে বহুল ব্যবহৃত হয়।  বনের জীবাশ্ম হিসেবেও তাই এর গুরুত্ব অনেক। পশুর গাছ সুন্দরবনের প্রায় সব জায়গাতে পাওয়া যায়। তবে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জে পশুর গাছ ব্যপকহারে পাওয়া যায়।
গেওয়াঃ সুন্দরবনের সর্বাধিক বর্ধনশীল গাছ। এই গাছ সর্বোচ্চ ১৩ মিটার উঁচু হয়। এর কান্ড ও কাঠ বেশ নরম। গেওয়ার প্রধান ব্যবহার ছিল খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের কাঁচামাল হিসেবে। প্যাকিং বক্স, দিয়াশলাই, খুঁটি, পেন্সিল, ঢোল, তবলা ও খেলনা নির্মাণেও এর যথেষ্ট ব্যবহার রয়েছে। এর বাকল জ্বালানী হিসেবে সমাদৃত। গেওয়া ফুল মধুর প্রধান উৎস। এর কচিপাতা ও ফল হরিণের খাদ্য। গেওয়ার সাদা রঙয়ের আঠা অত্যন্ত বিষাক্ত। মানুষের চোখে লাগলে দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হতে পারে।
গরানঃ গরান ঝোপ জাতীয় উদ্ভিদ। এর কাঠ অন্যতম সেরা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মাঝারী উচ্চতার (৩-৫ মিটার) অত্যন্ত শক্ত লালচে বর্ণের গরাণ গাছ ঘরের খুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বনের প্রায় সর্বত্রই কম-বেশি গরাণ দেখা যায়। আর লুকাবার স্থান হিসেবে বাঘের পছন্দ এই গরাণ ঝোপ। ঔষধি গুণসম্পন্ন এই গরানের ছালের কষ রং তৈরি, জাল রং করা ও চামড়া ট্যান করার কাজে ব্যবহৃত হয়। সুন্দরবনের অন্যতম অর্থকরী উদ্ভিদ গরান। সিডর পরবর্তী সুন্দরবন হইতে গরাণ আহরণ বন্ধ আছে। গরান সুন্দরবনের সাগর পাড়ের এলাকাতে বেশী পরিমানে জন্মে।
খলসিঃ ‘‘হানিপ্ল্যান্ট‘ হিসেবে খলসি গাছের বেশ কদর সুন্দরবনে। গুল্ম জাতীয় এই বৃক্ষ মার্চ-এপ্রিলে যখন ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। মৌমাছিরা তখন সেই ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে গাছে গাছে চাক বাঁধে। সুন্দরবনের খলসি মধু বিখ্যাত ও উন্নতমানের। জ্বালানী সহ বিভিন্ন কাজে খলসি ব্যবহৃত হয়। খলসি গাছ সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জে বেশী পাওয়া যায়। খলসি ফুলের মধু বিখ্যাত ।

এই বন মূলত প্রচুর গাছপালা, কেওড়া ও সুন্দরী গাছের ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন বন নিয়ে গঠিত। কিন্তু বন্য প্রাণী ছাড়া বন যেন লবণপানি ছাড়া সমুদ্র! অস্ট্রেলিয়া বলতেই সামনে ভাসে বিখ্যাত ক্যাঙ্গারু। সিংহ বললেই ভাসে আফ্রিকা! তেমনি রয়েল বেঙ্গল টাইগার বলতেই বাংলাদেশের নামটি আসে। আসে সুন্দরবনের নামও। ভয়ংকর সুন্দর এই বাঘ সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ। রাজার মতো হাবভাব নিয়ে স্যাঁতসেঁতে গোলপাতার বনে এই বাঘ ঘুরে বেড়ায়। প্রধান খাবার তালিকায় আছে হরিণ ও মানুষ। এক সময় বন্ধু চিতাবাঘ ও ওলবাঘ থাকলেও এখন তারা হারিয়ে গেছে প্রতিকূলতায় হেরে। যোগ্যতমের লড়াইয়ে রয়েল বেঙ্গল কতো দিন টিকে থাকে দেখার বিষয়!
বাঘের পরপরই বলতে হয় হরিণ ও বানরের কথা। কিন্তু কার কথা বলবো? আচ্ছা, হরিণের কথাই বলি। বাঘের প্রিয় খাবার হরিণ। সুন্দর কিন্তু বোকা এই প্রাণি মাথায় লম্বা লম্বা শিংযুক্ত। এদের বোকামী অনেকটা উঠপাখির মতো। উঠপাখি আক্রমণের শিকার হলে মরুভূমির বালির ভিতরে মাথা গুঁজে দিয়ে নিজেকে নিরাপদ ভাবে। তেমনি হরিণ লতাপাতার ভিতরে মাথা গুঁজে দেয়। শিঙয়ে আটকিয়ে নিজের বোকামীর শিকার হয়।
এবার আসি বানরের গল্পে। বানরকে বলা হয় সুন্দরবনের সবচেয়ে দুষ্টু ও বুদ্ধিমান প্রাণী। কিছু গল্প বলি বরং!
সুন্দরবনের গাছে গাছে মৌচাক। মৌমাছির তৈরী খাঁটি মধুর খাঁটি মৌচাক। মৌচাকে খাঁটি মধু। বাজারের চিনি মেশানো ভেজাল মধু না! আপনার সামনে খাঁটি জিনিস পড়ে থাকবে, আপনি খাবেন না, এটা মানা যায় না। লোভ তো করেই! বানর সম্প্রদায়ও বেজায় লোভী। প্রায়ই মধু পানের বড় সাধ জাগে তাদের। কিন্তু জয় তো সহজে আসে না। মৌচাক ঘিরে মৌমাছিকুলের মহা প্রাচীর। সেটা ভেদ করে মধু খাওয়া! বিরাট ব্যাপার। মৌমাছি খেপে গিয়ে দু ডজন হুল ফুটালেই মধু খাওয়ার সাধ মাঠে মারা যাবে। কিন্তু, বানর সম্প্রদায় কি অতটাই বোকা? তারা মাথাতে মাথা লাগিয়ে নীরব মাস্টার প্লান করে, আজ পাশা খেলবো রে শাম…।
কিছুক্ষণ পর বানরদের দেখা যায় কাছেরই এক ডোবাতে। মজা নিয়ে গোসল করে! না না, পানি দিয়ে গোসল নয়, কাদা দিয়ে গোসল। নিজে তো মাখেই, পারে তো সঙ্গীকেও মেখে দেয়। কাদা গোসল শেষে মৌ নগরী ধ্বংসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় বানরেরা। মৌচাকের পাশে এসে আচমকাই হামলে পড়ে এর উপর। ব্যস, যা হওয়ার তাই হয়। মৌমাছি যায় খেপে,  এক একটা বানরকে ধরে ও হুল ফুটাতে থাকে। বানরেরা একটু মিষ্টি হাসি দিয়ে আরামসে মধু খাওয়া শুরু করে। বেচারা মৌমাছি! হুল ফুটাতেই পারে না। বানরের গায়ে যে শক্ত কাদার আস্তরণ!
তেমনি আরো কিছু মজার ঘটনা ঘটে সুন্দরবনে। যেমন, বাঘের লেজ ধরে টানা! অবাক হবেন না একদমই। বাঘের ঘাড়ে চড়া থেকে শুরু করে লেজ টানার কাজও দক্ষতার সাথে করে বানরেরা। তিনবার গিয়েছি সুন্দরবনে। ইচ্ছে করেই হাতে চারটি কলা নিয়ে ভিতরে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণের ভিতরে কলা চলে গিয়েছিলো বানরের হাতে! মানুষের ভিতরে বেশ সহজভাবেই এ গাছ থেকে অপর গাছে লাফিয়ে চলে বানরেরা।
সাপ ও শকুন সুন্দরবনের চমকে দেওয়া প্রাণিদের ভিতরে দুটি। কিছু বিষাক্ত সাপ আছে এখানে। আর আকাশে ওড়ে বহু শকুন। আরো আছে কুমির। এছাড়া অন্তত ৫০ রকমের পাখি আছে এই বনে।

সুন্দরবনে যারা গেছেন, তারা একটা টাওয়ার দেখেছেন সুন্দনবন চিড়িয়াখানার পাশে। বেশ উঁচু টাওয়ারটা থেকে বনের ভিতরের কিছু দৃশ্য চোখে পড়ে। সুযোগ পেলে বাঘের দেখাও মিলতে পারে। তিনবারের যাত্রায় তৃতীয়বারের বার আমি বাঘ দেখেছিলাম। কেন জানি গায়ে কাঁটা দিয়েছিলো! প্রথমবার চর্মচক্ষে বাঘ দেখেছিলাম বলেই হয়তো।
সবচেয়ে মজার ব্যপার হলো ট্রলারে করে পশুর নদী পাড়ি দিয়ে বনে পৌঁছানো। শেষবার যখন গিয়েছিলাম, তখন ডাকাতদের সাথে পুলিশের গোলাগুলির মাঝে পড়ে গেছিলাম! খুবই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি।
বনের ভিতরে প্রায় ৬০০-৭০০ মিটার মত লম্বা একটা কাঠের ঝুলন্ত রাস্তা চলে গেছে। ওটার উপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে নিচে তাকালে হরিণ ও বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়া যায়। অভিজ্ঞরা অতি সহজে সেসব দেখে আশু সম্ভাবনা আঁচ করতে পারেন। পায়ের নিচে শ্বাসমূল, পায়ের ছাপ ও মাথার উপরে বানর! পুরো টারজান ফিলিং!

সুন্দরবন কেন দরকার? কারণ, বাংলাদেশের বাঁচার দরকার! কোনভাবে যদি সুন্দরবনের অস্তিত্ত্ব শেষ হয়, তাহলে বাংলাদেশেরও মৃত্যু ঘনিয়ে আসবে। জন্মলগ্ন থকে সুন্দরবন আমাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে ঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে। অথচ আমরা নানাভাবে একে ধ্বংস করছি!
সম্প্রতি আগুন লেগে পুড়ে গেছে বিরাট অংশ। গত এক মাসের ভিতর এটা চতুর্থবার আগুন লেগেছে। গত পাঁচ বছরে প্রায় ত্রিশবার আগুন লেগেছে। খবরটা লাভজনক নয়। বেশিরভাগ মানুষের ধারণা মৌয়ালীরা মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে অসচেতনতাবশত আগুন ফেলে আসে, সেখান থেকে আগুন লাগে। অথবা বিড়ি সিগারেট থেকে। কারণ বনবিভাগ এরকমটাই প্রচার করে। আসলে যেসব জায়গায় আগুন লাগে সেসব জায়গা গহীন কোন জায়গা না। সেখান থেকে মধু সংগ্রহ করা হয় না। সিগারেটের আগুন থেকে মূহুর্তে এরকম দাউদাউ আগুন ছড়ানোর কথা না। এটা পরিকল্পিত । এসব করে কী লাভ?
লাভ হচ্ছে জলাভূমির আয়তন বাড়িয়ে মৎস চাষ করা! যেহেতু বনের ভিতর সরকারী জায়গা, মৎস চাষের জন্য কাউকে টাকা দেওয়া লাগবে না, লিজ নেওয়া লাগবে না, সরকারি খাতায়ও সেটা বনভূমি আছে!
সহজ আয়ের জন্য সেখানে আগুন লাগাচ্ছে কতিপয় বিকৃত ও সার্থপর মস্তিষ্কের লোকেরা। এছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের তোরজোড় চলছে বহুদিন যাবত। এগুলো বন্ধ করতে হবে, যদি দেশের পরিবেশ ঠিক রাখতে চাই।

বাঘ নিধন ও হরিণ শিকার বন্ধে অধিকতর শাস্তির বিধান রেখে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। উক্ত আইনের ৩৬ ধারায় বাঘ শিকার ও হত্যাকারীর জামিন অযোগ্য বিবেচনা করে ৭ বছর ও সর্বনিম্ন ২ বছর কারাদণ্ডের বিধান করা হয়েছে। জরিমানার বিধান আছে এক থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায় প্রতিদিনই অবৈধভাবে সুন্দরবনে ঢুকে গাছ কর্তন, হরিণ শিকার, মাছ শিকার ও বাঘ হত্যা করে চামড়া ও হাড় বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। প্রায়ই বাঘ লোকালয়ে প্রবেশ করে মানুষের ওপর আক্রমণ করছে। এ সময় বন বিভাগকে অবহিত করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। ফলে আত্মরক্ষার তাগিদে সাধারণ মানুষ বাঘ হত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে। বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত পর্যালোচনা করে জানা গেছে, বাঘের আক্রমণে বছরে ৩০ থেকে ৫০ জন মানুষ মারা যায়। ওই সময় মানুষের হাতে নিহত হয় ৫ থেকে ১০টি বাঘ। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বাঘ সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরিত প্রটোকল অনুসারে কাজ করছে বন বিভাগ। হরিণ শিকার বন্ধ ও বাঘের আবাসস্থলের উন্নয়নে নিয়মিত টহল দিচ্ছে। অবৈধভাবে বন্য প্রাণী পাচার, বিক্রি ও প্রদর্শন রোধকল্পে কাজ করছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
নিজের অভিজ্ঞতা ও পত্রিকার সৌজন্যে জানতে পারি, ঘটনাচক্রে কোনো বাঘ লোকালয়ে প্রবেশ করলে বন বিভাগকে খবর দিয়ে দীর্ঘক্ষণ পেরিয়ে গেলেও কারো দেখা মেলে না। এরমধ্যে ঘটে যায় হতাহতের ঘটনা। বাধ্য হয়ে ওই বাঘ হত্যা করা হয়। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দেখা মেলে। বিনা অনুমতিতে বনে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও পয়সা দিয়ে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে বনে যাচ্ছে বহু মানুষ। এরা কাঠ কাটা, মধু সংগ্রহ, হরিণ শিকার এমনকি বাঘও শিকার করে। বাঘের আক্রমণে নিহত ও আহত ব্যক্তির পরিবারকে ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। বাঘ ও পরিবেশ রক্ষায় দেশীয় সম্পদের পাশাপাশি দাতাদের অর্থেও কাজ চলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবেশ বিপর্যয়, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব, সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়ে বাঘের প্রবেশ, সরকারের অযত্ন, অবহেলা আর সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবে বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সুন্দরবন বাঘশূন্য হয়ে যাবে। তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষাকারী একমাত্র মহা ঢাল সুন্দরবনও পড়বে হুমকির মুখে। কারণ বাঘ আছে বলেই সুন্দরবনে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষিত ও প্রাণিকুলের খাদ্যচক্র বিরাজমান। বনের প্রাকৃতিক বংশগতি সচল রাখতে তৃণভোজী প্রাণি হরিণ, শুকর ও বনগরুসহ অন্যান্য প্রাণী শিকার করছে। সুন্দরবন রক্ষায় বাঘ রাত-দিন অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করছে। কারণ একটি বাঘ তার নির্ধারিত আবাসস্থলে অন্য কোনো বাঘ বা মানুষের আনাগোণা সহ্য করে না। অথচ প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট দুর্যোগে সুন্দরবনও ধ্বংসের মুখে পড়েছে। ফলে দিন-দিন বাঘ কমে যাচ্ছে। এর অর্থ, বনের অবস্থা ও বাঘের অবস্থা এখন বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন। তাই মহাবিপন্ন প্রজাতির বাঘ রক্ষায় বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা স্বোচ্চার হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে বাঘের আবাসস্থল বলে বিবেচিত ১৩টি টাইগার রেঞ্জ দেশে বাঘ সংরক্ষণের জন্য ন্যাশনাল টাইগার রিকভারি প্রোগ্রাম (এনটিআরপি) ও গ্লোবাল টাইগার রিকভারি প্রোগাম (জিটিআরপি) বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বাঘ সংরক্ষণে বাংলাদেশকেও আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে হবে।
এছাড়া শুধু বাঘ না, গাছের দিকেও মনযোগ দিতে হবে। বন ও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

করেস্পন্ডেন্ট August 19, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
Next Article ফকিরহাট আট্টাকী শীতলা মন্দির কমিটি গঠন
Leave a comment

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

দিনপঞ্জি

August 2025
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
« Jul    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
জাতীয়তাজা খবর

১৩ বছর পর ঢাকায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

By স্টাফ রিপোর্টার 27 minutes ago
জাতীয়তাজা খবর

নির্বাচনের আগে আমরা সব অস্ত্র উদ্ধার করব : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

By স্টাফ রিপোর্টার 28 minutes ago
জাতীয়তাজা খবর

নির্বাচন নিয়ে সরকার কোনো চাপ দিলে পদত্যাগ করব: সিইসি

By স্টাফ রিপোর্টার 29 minutes ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

জাতীয়তাজা খবর

১৩ বছর পর ঢাকায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

By স্টাফ রিপোর্টার 27 minutes ago
জাতীয়তাজা খবর

নির্বাচনের আগে আমরা সব অস্ত্র উদ্ধার করব : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

By স্টাফ রিপোর্টার 28 minutes ago
জাতীয়তাজা খবর

নির্বাচন নিয়ে সরকার কোনো চাপ দিলে পদত্যাগ করব: সিইসি

By স্টাফ রিপোর্টার 29 minutes ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?