সিরাজুল ইসলাম , শ্যামনগর : পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ হিসেবে সুখ্যাত সুন্দরবন। সে জন্যই মানুষের এত কৌতূহল ও দুর্বার আকর্ষণ। তারপরও চিরঅবহেলিত এই বিপুল সম্ভাবনার জনপদ। বিশ্ববাসীর কাছে সুন্দরবনের আবেদন একটি পর্যটন স্পট হিসেবে। যদিও এটি এখন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অংশ। বিশ্বের বহুল আলোচিত পর্র্যটন বিশেষজ্ঞ হাডসন তিন দশক আগে সুন্দরবন ভ্রমণ করে লিখেছিলেন- ‘এটি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আশ্চর্য হতে পারে। এটি বিশ্ববাসীর কাছে আরও আবেদনময় করার জন্য প্রয়োজন নিরাপত্তা, সহজ যোগাযোগ ও পারিপার্শ্বিক কাঠামোগত পরিবতর্ন।’ দুর্ভাগ্য, তিন দশকেও সেটা হয়ে ওঠেনি। উল্টো বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপন্ন পরিবেশ ও পর্যটন প্রেমীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে বাণিজ্যিক সফলতা আসছে না। বছর তিনেক আগে এখানকার সবচেয়ে বড় আতঙ্ক জলদস্যুরা সারেন্ডার করেও আজও মামলায় কাবু হয়ে হতাশ। বারবার আবেদন নিবেদন করেও তারা মামলামুক্ত হতে পারছে না। সুন্দরবনের অন্যতম বাণিজ্যিক স্পট দুবলারচরের শুটকি পল্লীর অবস্থাও তথৈবচ। সেখানে দেশের এক তৃতীয়াংশ শুটকি উৎপাদন হলেও নেই জেলেদের ন্যূনতম স্বাস্থ্য ও সেনিটেশন সুবিধা। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি সুন্দরবন জলদুস্যমুক্ত হবার তৃতীয় বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া হয় এক ঝাঁক ক্রাইম রিপোর্টার। র্যাবের উদ্যোগে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সুন্দরবনকে নিয়ে অনেক আশার বাণী শুনিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সুন্দরবন হবে বিশ্ববাসীর কাছে একটি মর্যাদাকর ম্যানগ্রোভ। পর্যটকদের তীর্থস্থান হলেও চিরঅবহেলিত ॥ সুন্দরবন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আশ্চর্য। অথচ সঠিক পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সুন্দরবন দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে উজাড় হওয়া বন ও নদীতে মরা, পচা মাছ ও জলজ প্রাণীর দুর্গন্ধে পরিবেশ অনেকটাই বিপন্ন। এগুলো দেখারও নেই কেউ। বর্তমান সরকার বছর তিনেক আগে সুন্দরবনকে জলদস্যুম্ক্তু ঘোষণা করায় পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেও পরিবেশ দূষণ এখনও অনেক বড় সমস্যা। তাছাড়াও এটিকে কেন্দ্র করে মোংলা ও খুলনাভিত্তিক প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত না করায় দেশী-বিদেশী পর্যটকের নজর কাড়তে ব্যর্থ। বর্তমানে ঢাকা থেকে মোংলা, রামপাল ও কিংবা খুলনা গিয়ে সেখান থেকে নৌযান ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই সুন্দরবন পৌঁছার। প্রশ্ন উঠেছে, পর্যটনের ভর মৌসুমেও কেন পর্যটক সঙ্কট চলছে? এতে বিস্ময় প্রকাশ করে র্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় পর্যটকদের আনাগোনা কম। ঢাকা থেকে সড়ক পথে আসতে গেলে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টার পথ। নৌপথে যেতে লাগে ২০ ঘণ্টা। বেসরকারী ট্যুর অপারেটর সংগঠন টোয়াব সভাপতি রাফিউজ্জামান বলেন, সুন্দরবন এখন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ইউনেস্কোর গাইডলাইনে নিয়ন্ত্রিত। ইচ্ছে করলেই সরকার কিংবা বেসরকারী উদ্যোগে কিছু করা যাবে না। যদিও রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র, মোংলা বন্দর, খুলনাসহ অন্যান্য ব্যস্তময় নগরীকে ঘিরে গড়ে তোলা যেতে পারে অনেক নান্দনিক কেন্দ্র। রাজধানী থেকে এ সব পয়েন্টে পৌঁছার জন্য নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন যাতায়াত ব্যবস্থা থাকলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো। দেশী-বিদেশী পযর্ টকদের নজর কেড়ে বিপুল সম্ভাবনাময় এক শিল্পে পরিণত হতে পারে। তিনি বলেন, অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত এই ছয় মাস হচ্ছে পর্যটক মৌসুম। বর্তমানে প্রতিবছর গড়ে দেশী-বিদেশী ২ লাখ পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন। ইউনেস্কোর নির্দেশনা রয়েছে, প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য ও প্রাণীজ সম্পদের সুরক্ষায় লোক সমাগম যত কম হবে ততই ভাল। সে জন্য এখন পর্যটক কমানোর পরিকল্পনার কাজ চলছে। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড চেয়ারম্যান জাবেদ আহমেদ বলেন, সুন্দরবনের জন্য পর্যটন কর্পোরেশনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কিছুই নেই। মোংলাভিত্তিক রিসোর্ট মোটেল রয়েছে- যারা আগ্রহী তারা এখান থেকেই গিয়ে থাকেন। এ ছাড়া আর কোন উপায় নেই। ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ভবিষ্যতের কোন পরিকল্পনা এখনও করা হয়নি। পর্যটনের জন্য মাস্টার প্ল্যান তেরি করা হচ্চে। সেখানেই সুন্দরবন নিয়ে বিশেষ প্ল্যান থাকতে পারে। তবে, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হওয়ায় এখানে অনেক রেস্ট্রিকশন রয়েছে। টোয়াব সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে পর্যটন সুবিধা বলতে সবটাই মোংলাকেন্দ্রিক। দেশী-বিদেশী পর্যটকরা মোংলা অথবা খুলনা গিয়ে সরকারী বেসরকারী হোটেল-মোটেলে অবস্থান করেন। পরে ওখান থেকে শিপ বা ক্রুজে নদীপথেই সুন্দরবনের সবকটা পয়েন্টে যাবার সুযোগ রয়েছে। শিপ থেকে নেমে অন্যত্র রাত কাটানোর সুযোগ নেই। আর নদীর ওপরও স্থায়ী বা অস্থায়ী কোন রিসোর্ট করার সুযোগ নেই। যদিও ইদানিং দাবি উঠেছে দুবলারচরে শুটটি পল্লীর আশপাশে কিছু কটেজ নির্মাণের। এটা করারও সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচেছ। সারেন্ডার করেও স্বস্তিতে নেই জলদস্যুরা ॥ আট বছর আগে সারেন্ডার করেছিলেন জলদস্যু হানিফ শেখ। তার বিরুদ্ধে মামলা ছিল গোটা পাঁচেক। তিনি জানান, সারেন্ডার করেও শান্তি নেই। মামলা চলছে বছরের পর বছর ধরে। আয়-উপার্জন সব নিয়ে যাচ্ছে উকিলে। কবে শেষ হবে এই মামলা আল্লাহই জানেন। জানা গেছে, সুন্দরবন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন করে বিশেষজ্ঞ বনে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মী মহসীন-উল-হাকিমের উদ্যোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের আজও অনেকের নামে মামলা ঝুলছে। ওগুলো মোকাবেলা করেই তাদেরকে এখনও চরম অস্বস্তি ও অশান্তিতে কাটাতে হচ্ছে। এ পর্যন্ত মোট ৩২৮ জন জলদস্যুর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হয় বছর তিনেক আগে। ওরা আত্মসমর্পণ করায় এই জনপদ আজ নিরাপদ। কিন্তু, তাদের অভিযোগ বিস্তর। সরকার পুনর্বাসনের জন্য নানা সাহায্য সহযোগিতা দিলেও মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে তেমন আন্তরিক নয় বলে অভিযোগ করেছেন জলদস্যুরা। এভাবে কত ভুগতে হবে- সেটাই তাদের বড় দুশ্চিন্তা। শ্যামনগরের জলদস্যু আব্দুল করিম মজিদ জানান, তার নামে এখন তিনটি মামলা- একটি বাগেরহাটে, দুটো সাতক্ষীরায়। বিগত ৫/৬ বছর ধরেই মামলা চলছে। এমনকি, সারেন্ডার করার পরেও পুলিশ মামলা দিয়েছে। প্রতিমাসে বাগেরহাটে আর সাতক্ষীরাায় গিয়ে হাজিরা দিতে হয়। প্রতি হাজিরায় হাজার টাকা খরচ হয় প্রতি মামলায়। এ মামলা কবে শেষ হবে তা পুলিশও বলতে পারে না। নেতারাও পারেন না। জানতে চাইলে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দৈনিক জন্মভূমিকে, যে কোন মামলাই প্রত্যাহার করাটা একটি জটিল প্রক্রিয়া ও সময় সাপেক্ষ। আত্মসমপর্ণকারী জলদস্যুদের মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি বেশ আন্তরিকভাবে ডিল করা হচ্ছে। তারা যাতে সমাজে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে মান-সম্মান নিয়ে, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকের মামলা শেষ হয়ে গেছে। মামলা প্রত্যাহার না করা হলেও তাদেরকে যাতে কেউ হয়রানি করতে না পারে, সে জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সারেন্ডার যারা করেছে, তারা সমাজে যদি স্বাভাবিকভাবে মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করতে না পারে, তাহলে অনেক অজানা শঙ্কা থেকে যায়। তাদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখার পাাশাপাশি কাউন্সিলিং করতে হবে, যাতে তারা আর অন্ধকার জীবনে ফিরে না যায়। ৫০ টাকার চিংড়ি ৫০০ ॥ দুবলারচরের চারপাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের মাছ। চিংড়ি, ভেটকি, রূপচাঁন্দা, বাউয়াসি, আইড়, জাভাসহ আরও নানা প্রজাতির মাছ। সাগর থেকে মাছ এনে শুটকি তৈরির জন্য রাখা হয় একদিকে, বিক্রির জন্য অন্যদিকে। ট্রলার থেকে নামানোর পর এখানে মাঝারি ধরনের এক কেজি চিংড়ি বিক্রি করা হয় বড় জোর ৫০ টাকায়। সেই চিংড়ি রাজধানী ঢাকায় আনা হলেই দাম ওঠে যায় ৫০০ টাকা কেজি। প্রশ্ন ওঠে, মাঝের সাড়ে চারশত টাকা কোথায় যায়। দীর্ঘদিন ধরে এখানে মাছ শিকারি যতীন্দ্রমোহন জানান, সমুদ্র থেকে ধরার পর দুবলারচরের তীরে আনার পরই এক কেজি চিংড়ি বিক্রি করা হয় ৪০/৫০ টাকায়। সবাই এ দরে কিনার সুযোগ পায় না। জেলে পল্লীর গুটিকয়েক বা একটি নির্দিষ্ট সিন্ডিকেট এই দরে মাছ কিনে থাকে। তাদেরকে ছাড়া কারও কাছেই মাছ বিক্রি করা বা সরাসরি ঢাকায় পাঠানোর কোন সুযোগ নেই, যা প্রক্রিয়া করার জন্য খরচ পড়ে আরও ৫০ টাকা কেজি। অর্থাৎ বরফ দিয়ে সেটা কার্টুনে ভর্তি করে নৌপথে মোংলা, বাগেরহাট কিংবা খুলনার ঘাট পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ পড়ে কেজি প্রতি আরও ১শ’ টাকা। ওখান থেকে ফঁড়িয়া দালালদের মধ্যস্বত্বার জন্য কেজি প্রতি চলে যায় আরও শ’দুয়েক টাকা। অর্থাৎ ঢাকা পর্যন্ত চারশত টাকায় পৌঁছানো সম্ভব হলেও সেগুলো খুচরা ক্রেতার হাত বদল হয়ে বেড়ে যায় আরও দুই শ’ টাকা। সে জন্যই ঢাকায় বসে ওই চিংড়ির দর ওঠে ৫/৬ শ’ টাকা কেজি। এভাবেই যুগ যুগ ধরে মাছ ধরা, সরবরাহ, পাইকারি ও খুচরার বাজারের ধাপ পেরিয়ে চালানো হচ্ছে মাছের ব্যবসা। তাহলে কিভাবে এই মাছের ব্যবসা আরও যুযোপযোগী করা যায় জানতে চাইলে দুবলারচর ফিশার গ্রুপের সভাপতি কামালউদ্দিন বলেন, দুবলারচর অত্যন্ত দুর্গম একটি উপকূল। এর নিকটবর্তী কোন স্থল মার্কেট বা আড়ত নেই। এখানে নেই বিদ্যুত সুবিধা। মাছ সংরক্ষণ করার জন্য প্রয়োজন বরফের। বরফ আনতে হয় মোংলা, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা থেকে। নেই বড় ধরনের হিমাগার। ট্রলার থেকে মাছ ধরে এনে হয় নগদে বিক্রি করতে হয়, নয়তো শুটকি বানাতে হয়। যদি এখানে বিদ্যুত সুবিধা ও হিমাগার থাকত, তাহলেই জেলেরা প্রকৃত দাম পেতেন। ঢাকাবাসীও আরও কম দামে মাছ পেতেন। দুবলারচর হতে পারে শুটকি মিউজিয়াম ॥ দুবলারচর সাড়ে ৭ শতাধিক জেলের পল্লী। এরা বছরের ৫ মাস এখানে মাছ ধরে, শুটকি তৈরি করে। নবেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এখানে আসেন পার্শ্ববর্তী খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের জেলেরা। তারা এখানে এসে এবারও শুটকি তৈরি শুরু করেছেন। কাঁচা মাছ শুটকি করতে মাত্র তিনদিন লাগে। এখানকার জেলে সুরেশ জানান, তারা এখানে ৫ মাসই মাছ ধরে শুটকি বানিয়ে বিক্রি করে বছরে যা আয় করেন, তা দিয়েই সারাবছর চলে। তবে, গত দুবছর ধরে করোনা মহামারীতে তাদের অনেক লোকসান হয়েছে। চড়া সুদে এনজিও ব্যাংক ও দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ এনে মাছ ধরে শুটকি তৈরি করতে হয়। তার ওপর রয়েছে চাঁদাবাজ, দালাল ও গডফাদারদের উৎপাত। এতকিছুর পরও তারা স্বস্তি পায় এই ভেবে, মাছ তো সমুদ্রের অফুরন্ত সম্পদ। একটু পরিশ্রম করলেই ট্রলার ভরে যায় মাছে। যুগ যুগ ধরে চলে এভাবেই। মাছ যেন শেষ হওয়ার নয়। বছরের ৫টি মাস এখানে কাটাতে পারলেই বাকিটা সময় ভালভাবে খেয়ে-পরে চলে যায়। এখানে শুটকির ব্যবসা করে অনেক মধ্যস্বত্বভোগীই কোটিপতি হয়েছে। অন্যদিকে, জেলেরা চিরকাল জেলেই রয়ে গেছে। জানতে চাইলে জেলে সমিতির সভাপতি কামাল উদ্দিন বলেন, জেলেদের সব অভিযোগ সত্য নয়। কিছু লোক হয়তো সুবিধা নিয়ে থাকে। সেটা আমলে নেয়ার মতো নয়। জেলেদের কল্যাণেই আমরা কাজ করি। এখানকার শুটকি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও গন্ধ ছড়ায়। প্রতিবছর কমপক্ষে তিন হাজার কোটি টাকার রফতানি রাজস্ব আসে। অথচ এই রাজস্ব তিনগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হতো। দুবলারচর শুটকি পল্লীকেই আমরা দেশের বৃহত্তর শুটকি মহল মনে করি। সরকার চাইলে এখানে বিদ্যুত সুবিধা দিয়ে মাছ ও শুটকি সংরক্ষণ করার জন্য উপযুক্ত অবকাঠামোগত স্থাপনা করতে পারত। এমনকি শুটকির মিউজিয়ামও করা সম্ভব ছিল। জেলেদের আতঙ্ক বহিরাগত জলদস্যুরা ॥ সুন্দরবন এখন জলদস্যুমুক্ত-তাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা আজ দেশী-বিদেশী পর্যটকরাই স্বীকার করছেন। এক সময় দিন-দুপুরেও সুন্দরবনে প্রবেশ করলে গা ছমছম করত। জলদস্যুদের ছোবলে অনেক প্রাণহানি ঘটার নজির তো বেশি দিনের নয়। সেই আতঙ্ক আজ আর নেই। এখন শান্তির সুবাতাস বইলেও জেলেদের আতঙ্ক বহিরাগত দস্যুদের। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সময় জেলেরা অনেক আতঙ্কে থাকে। এনিয়ে মাঝে মাঝেই ঘটে যায় অপ্রীতিকর ঘটনা। দুবলারচরের জেলে মোহন শেখ বলেন, বছর খানেক আগেও ভারতীয় একটি ট্রলার আটক করে মোংলা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে তাদের ট্রলারটি রেখে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। তারপরও থামেনি ওদের আগ্রাসন। প্রায়ই বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে ওরা মাছ ধরে নিয়ে যায়। বাধা দিলেই আক্রমণ আসে। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য এক ধররে ভয়ে থাকতে হয়। ডাক্তার আর পানিই তাদের একমাত্র চাওয়া ॥ ভাত নয়, কাপড় নয়, শুধু বিশুদ্ধ খাবার পানি আর একজন এমবিবিএস ডাক্তারই তাদের একমাত্র চাওয়া। দুবলারচরের জেলেরা বিশুদ্ধ খাবার পানি ও ডাক্তারের অভাবকেই তাদের চিরদুঃখের কারণ মনে করেন। প্রকাশ বিশ্বাস নামের এক জেলে দুবলারচরের দুঃখ সম্পর্কে বলেন, এখানে বিশ বছর আগেও যেমন ছিল, এখনও তেমনই। হাজার হাজার কোটি টাকার মাছ ও শুটকি উৎপাদন করার কাজে যারা জড়িত, তাদেরকেই জিম্মি থাকতে হয় দালাল ও তথাকথিত সাহেবদের কাছে। এখানে নেই খাওয়ার বিশুদ্ধ পানি ও ডাক্তার। সারাবাজারে ছোট ছোট ৩/৪টা ফার্মেসিতে পাওয়া যায় ওরস্যালাইন, প্যারাসিটামল আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। মাঝে মাঝে বড় ধরনের রোগবালাই দেখা দিলে হয় যেতে হয় মোংলায়, নয় তো নিকটবর্তী র্যাব ও কোস্টগার্ডের নিজস্ব ক্লিনিকে। সেখান থেকে কিছু চিকিৎসা মিলে। তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে এখানে একজন এমবিবিএস ডাক্তার দেয়ার জন্য দাবি করে আসছি। কেউ সেটার ব্যবস্থা করে দেয়নি।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত