সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : সুন্দরবনের নদী খাল এবং বঙ্গোপসাগরে পলি পড়ে জেগে উঠছে বড় বড় চর ,। এই বড় বড় চর পড়ার কারণে আগের চেয়ে স্বাভাবিক জোয়ারের উচ্চতা ৫ থেকে ৭ ফুট বেড়ে গেছে ,এর মূল কারণ সুন্দরবনের নদী খাল ও বঙ্গোপসাগরে বড় বড় চর পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির উচ্চতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে,। সে কারণে একটি বিশ্ব গবেষণায় বলেছেন বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ২০৫০ সালের মধ্যেও পানিতে তলিয়ে যাবে তার একমাত্র কারণ পদ্মা মেঘনা যমুনা সহ বড় বড় নদী হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন বিভিন্ন আবর্জনা ও ঘোলা পানি অংশএই সমস্ত আবর্জানা আর ঘোলা পানির পলিতে সুন্দরবনের নদী খাল ও বঙ্গোপসাগর বড় বড় চরপরে যাচ্ছে, সে কারণে দিন দিন উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে,জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সুন্দরবনের নদী ও খালে পলি জমে জেগে উঠেছে চর। উপকূলবর্তী বাজার থেকে ফেলা পলিথিন ভেসে এসে লাগে কিনারে, আর সেখানে গড়ে উঠে চর। গত পাঁচ বছর আগে সাতক্ষীরা উপকূলের খোলপাটুয়া নদীতে যেখানে পানি ছিল ৪০ থেকে ৫০ ফুট, সেখানে আজ অনেক বড় চর, আর সেই চরে উপকূলের ছেলেরা ফুটবল খেলে সময় পার করছে।সুন্দরবনের কলাগাছিয়া ও খোলপাটুয়া নদীর ত্রি-মোহনায় কাইনমারী খালের মুখ সংলগ্ন খোলপাটুয়া নদীর ভাটার শেষে পায়ে হেঁটে পার হয়ে গাবুরা ৯নং সোরা হতে সুন্দরবনে যায় স্থানীয়রা।গাবুরা ৯নং সোরা গ্রামের আমজাদ শেখ (৬৫) বলেন, এক দিকে নদীর স্রোতের গতি কমে যাচ্ছে, অন্য দিকে উপকূলের বাজারের দোকানদারদের থেকে ফেলা পলিথিন ভেসে নদীর কিনারে জমতে জমতে সেখানে গড়ে উঠেছে চর। তিনি আরও বলেন, যেভাবে নদীতে চর পড়তে শুরু করেছে। এমন একটা দিন দেখতে হবে আমাদের চর পড়ার কারণে দূর্যোগ হলে নদীতে পানি বৃদ্ধি হয়ে সব তলিয়ে যাবে।গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, আমার বাড়ির সামনে সুন্দরবনের কাঠেশ্বর খাল, এই খালে আমি বহুবার গিয়েছি খাওয়ার মাছ মারতে, সে সময় দেখছি ওই খালে ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীরতা ছিল। চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান সময়ে আমার যাওয়া হয়ে উঠে না। ওই খালে তবে লোকমুখে শুনি কাঠেরশ্বরের খাল এখন শুকিয়ে যায়।চেয়ারম্যান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবনের বহু খাল শুকিয়ে যাচ্ছে।বুড়িগোয়ালিনী ভামিয়া গ্রামের আবুল ঢালী (৬০) বলেন, ছোট কাল থেকে বাপের সাথে মাছ ধরে আসতেছি সুন্দরবনের বড় ও ছোট কেয়াখালী খালে, ৫বছর আগে দেখেছি ওই খালে ৮থেকে ১০ হাত পানি থাকতো শেষ ভাটায়, আর এখন সেখানে পানি থাকে ১-২ হাত। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, নদী বা খালের পানির নিচে কোন কিছু আটকে গেলে সেখানে পলি জমে চর পড়তে শুরু করে, আর এসব খালের মুখে কিছু আটকে থাকায় স্্েরাতের গতিপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে পলি জমে খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। গাবুরা মালিরাড়ি সংলগ্ন খোলপাটুয়া নদীর মাঝে ১শ’ বিঘা সমপরিমাণ চর জেগেছে।কওসার মালী বলেন, আমারা দেখেছি এ নদীর গভীরতা, আজ সেখানে চর।বুড়িগোয়ালিনী নীলডুমুর বাজার ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, নিষিদ্ধ পলিথিন নদীর তলদেশে জমে জমে সেখানে পলি পড়ে চর জেগে উঠছে। তিনি বলেন, নদীতে চর জাগার কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি হচ্ছে, ফলে দুর্যোগ আসলে উপকূলবর্তী এলাকাগুলো নদীর পানিতে তলিয়ে যেয়ে প্লাবিত হচ্ছে নিম্ন এলাকা।এ বিষয়ে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, উপকূলে ঘনঘন দূর্যোগ সৃষ্টি হচ্ছে, নদীতে ফেলা বর্জ্য জমে নদীর তলদেশে পলি পড়ে সেখানে জেগে উঠছে চর, অন্যদিকে নদীর নাব্যতা হারাচ্ছে, অন্যদিকে দুর্যোগ আসলে নদীর পানি বৃদ্ধি হয়ে প্লাবিত হচ্ছে উপকূলের নিম্ন অঞ্চল, ভেঙে যাচ্ছে পানি রক্ষা বেড়িবাঁধ। ক্ষতি হচ্ছে ফসলি জমি ও মৎস্য ঘের। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় উপকূলের কিছু অঞ্চল নদীর নোনা পানিতে তলিয়ে থাকবে।বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা বলেন, প্রাকৃতিকভাবে জুয়ারের পানিতে ভেসে আসা কাদা-বালু জমে পলি পড়তে পড়তে নদী ও খাল ভরাট হয়ে উঠছে এবং নিষিদ্ধ পলিথিন ভেসে যেয়ে জমা হয়ে নদী ও খালে চর জেগে উঠেছে।