সিরাজুল ইসলাম : বিশ্বের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন । এই সুন্দরবনের প্রাণী সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব শুধু বনবিভাগ ও অন্যান্য প্রশাসনের নয়। পৃথিবীর ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশের এই সুন্দরবনের প্রাণিসম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব এদেশের ১৮ কোটি মানুষের। কারণ সুন্দরবন আমাদের বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় সম্পদ এই জাতীয় সম্পদের প্রাণীকুল যদি বিলুপ্ত হয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিকভাবে ঘাটতি সহ বছর বছর যে বিদেশি পর্যটকরা বাংলাদেশের সুন্দরবন ভ্রমণে আসে এবং তারা সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য বড় একটি রাজস্ব সরকারকে দিয়ে থাকে তাছাড়া দেশের পর্যটকদের কাছ থেকেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখে চলেছে সুন্দরবন। এই সুন্দরবনের প্রাণীকুল আজ একটি মহলের হাতে বিলুপ্তি হওয়ার পথে। বিশাল এই সুন্দরবন হাতে গোনা বেশ কিছু বনরক্ষীদের উপর ভর করে সুন্দরবনের প্রাণীকুল সহ যাবতীয় সম্পদ রক্ষা করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে সে কারণে সরকারকে এক্ষুনি সুন্দরবনের জনবল বাড়ানো অতি জরুরী বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল। বাংলাদেশের সুন্দরবনের কারণে প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ খাতে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ রক্ষা পাচ্ছে ভৌগোলিক কারণে যেভাবে বছরে কয়েকবার প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসে সুন্দরবন না থাকলে উপকূলীয় মানুষের ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হতো। সুন্দরবন বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা খুলনা বাগেরহাট পিরোজপুর ঝালকাঠি ও বরগোনার মানুষের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ পর্যন্ত যতবার ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস হয়েছে তার থেকে রক্ষা পেতে একমাত্র সুন্দরবন আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে কিন্তু এখন এই সুন্দরবনকে বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের তাই সুন্দরবনকে বাঁচাতে হলে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিনিয়ত সুন্দর বনে হচ্ছে হরিণ শিকার রাত পোহালেই গণমাধ্যম সহ বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাওয়া যায় সুন্দরবনের হরিণ শিকারের। এই হরিন শিকারের সাথে শুধু শিকারীরা নয় উপকূলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে তাদের নির্দেশে মাছ কাকড়া আহরণকারীরা হরিণ শিকার করে লোকালয়ে এসে এই সমস্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাতে হস্তান্তর করছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই হরিণের মাংস হাত বদল করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাচ্ছে কেহ পাঠাচ্ছে নিজের কাজের জন্য আবার কেহ পাঠাচ্ছে উচ্চ দামে বিক্রয় করার জন্য কেহ কিনছে নিজের কাজ খনিজের মাংস দিয়ে বাগিয়ে নেওয়ার জন্য। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এই হরিণের মাংস নিয়ে দলের সামনের সারির পথ পদবী নেওয়ার জন্য ব্যবহার করছে। আবার কোন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আজীবন এই হরিণের ব্যবসা তারা লোক্যালয়ে থেকে হরিণের মাংস সংগ্রহ করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকে। সুন্দরবনের হরিণ পাচারকারী চক্ররা এত বড় শক্তিশালী বনবিভাগ ও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনা বনবিভাগকে বিভিন্ন রকম হুমকির মধ্যে রেখে তারা নিয়মিত এই হরিণের মাংস পাচার করে চলেছে শুধু হরিণীর মাংস নয় মাঝে মাঝে খবর পাওয়া যাচ্ছে বাঘের চামড়াও এই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পাছার করে উচ্চ দরে বিক্রয় করছে। গত ২৩ সালে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর গ্রাম থেকে দুটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয় এবং পাছার কারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় বনাম মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই পাছার কারীরা আইনের থাকফো করে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে জামিনে মুক্তি পেয়েছে । এ বিশাল সুন্দরবন হাতে গোনা বনরক্ষীদের দ্বারা পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না সে কারণে প্রতিনিয়ত হরিণ শিকার সহ যাবতীয় অপরাধ বেড়েই চলেছে । সরকার প্রতিটি সেক্টর ঢেলে সাজাচ্ছে নতুন জনবল নিয়োগ দেচ্ছে কিন্তু সুন্দরবনের চিন্তা কি সরকারের মাথায় নেই সুন্দরবন বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ সেই সম্পদ দিনের পর দিন উজার হয়ে যাচ্ছে দেখার কেউ নেই শুধু বন বিভাগকে বসলে হবে না তারা তো বিরতিনভাবে এই সমস্ত অপরাধ বন্ধের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বন বিভাগের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে সিপিজি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কিন্তু সিপিজি সদস্যরা স্থানীয় লোক বিধায় হরিণ শিকার সহ সুন্দরবনের নানা অপকারমের খবর তাদের কাছে থাকলেও এলাকায় বসবাসের স্বার্থে তারা নীরব থাকে তারা শুধু শুধু সরকারের টাকাগুলো ভোগ করছে এর তদারকির অভাব । বনবিভাগ সিপিজি সদস্যদের নিয়োগ দিয়েছে বটে কিন্তু তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় কিছুটা ব্যর্থ কারণ সিপিজি সদস্যরা স্থানীয় সে কারণে বনরক্ষীদের যা বোঝায় বনরক্ষীরা সেভাবেই চলে। এখন শীতকাল এই শীতকালে বেশি অংশ হরিণ শিকার হয়ে থাকে কারণ শীতকালে সুন্দরবনের ভিতরে জোয়ারের পানি কম ওঠে সে কারণে হরিণ সুন্দরবনের নদী খালের কিনার দিয়ে চলে হরিণের একটি চলাচলের পথ রয়েছে অসাধু শিকারীরা ঠিক হরিণের চলাচলের সেই পথে বরশি অথবা হাস কল পেতে থাকে হরিণ চলাচলের পথে ঠিক সেই কলে বেঁধে যায় পরে শিকারীরা সেখান থেকে হরিণ ছাড়িয়ে নিয়ে আসে । হরিণ শিকারিরা সুন্দরবনের ১৬ টি স্টেশন এর কোন না কোন স্টেশন থেকে মাছ কাঁকড়ার পাস নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে থাকে তারা হরিণ স্বীকার করে নিজেরা খুব কম বিক্রয় করে লোকালয়ে তাদের যে সমস্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিয়োজিত রয়েছে তাদের মাধ্যমে শিকারীরা অল্প দামে বিক্রয় করে থাকে। সুন্দরবনের হরিণের মাংস খাসি অথবা গরুর মাংস দামের তুলনায় কম দামে বিক্রি করে থাকে। এছাড়া যারা হরিণের মাংস খায় তাদের যেন এই মাংস খাওয়ার জন্য একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে সে কারণে তাদের হরিণীর মাংস পেলে মাথায় কাজ করে না মামলা মকদ্দমা কোন কিছুর ভয় পায় না শুধু চায় হরিণের মাংস। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে সুন্দরবনের এই হরিণের মাংস হাত বোতলের মাধ্যমে বাংলাদেশের সবচেয়ে উদ্বোধন কর্মকর্তাদের বাসায় পর্যন্ত পৌঁছে যায় সেখান থেকে মন্ত্রী এমপিরা ও এই হরিণের মাংস সংগ্রহ করে। এই সমস্ত উদ্বোধন লোভী ব্যক্তিদের কারণে সুন্দরবনের হরিণ নিধনের একটি বড় কারণ। এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার তানিয়া সুলতানা বলেন সুন্দরবনের এই জাতীয় সম্পদ মায়াবী হরিণ শিকার বন্ধের জন্য বনবিভাগে এক্ষুনি রেকর্ড পরিমাণ জনবল নিয়োগ দেওয়া তা না হলে অতি দ্রুতই সুন্দরবন হরিণ সহ প্রাণিসৈন্য হয়ে পড়বে সে কারণে অতি দূরত্বই সরকারকে অতি জরুরী ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে কথা হয় পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমানের সাথে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন আমরা হরিণ শিকার বন্ধের জন্য রাত দিন সুন্দরবনের নদী খালে ও লোক্যালয়ে পাহারা দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আসলেই আমাদের জনবল কম। তাছাড়া আমরা কখন কোথায় পাহারায় যাচ্ছি শিকারীরা আমাদেরকে ফলো করে আমরা যখনই ঘুমাতে যাই অথবা গন্তব্যস্থলে উঠি ঠিক তখনই হরিণ পাচার করে নিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন আমরা প্রতিনিয়ত হরিণ শিকারের বিষয়টি উদ্বোধন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তিনি আরো বলেন সুন্দরবনে জনবল বাড়ানোর জন্য যে কথা চলছে তা আসলেই সত্য বিশাল এই সুন্দর মনের জন্য পাহারা দেওয়া বোনরক্ষীদের সংখ্যা খুবই কম সে কারণে এক্ষুনি জনবল বাড়ানো অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সিপিজির সদস্যদের যে অনিহার কথা বলা হচ্ছে সেটিও আমরা ভেতরে ভেতরে যাচাই করছি যে সমস্ত সিপিজি সদস্যরা এই সমস্ত অপরাধ দেখে নীরব থাকেন তথ্য পেলে আমাদের না জানিয়ে গোপন থাকেন এমন প্রমাণ মিললে সেই সমস্ত সিপিজির সদস্যদের চাকরি থেকে অবসর দিয়ে অন্য লোক নিয়োগ দেওয়া হবে । সুন্দরবনের পশ্চিম ও পূর্ব বিভাগের দায়িত্ব রত বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী নুরুল করিম বলেন সুন্দরবনে প্রতিনিয়ত হরিণ শিকার হচ্ছে এটা সঠিক শিকারীরা হরিণ শিকারের জন্য চারিদিকে মরিয়া হয়ে উঠছে বনবিভাগ স্বল্প জনবল নিয়ে যথাসম্ভব হরিণ শিকার রদ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বন বিভাগের সাথে কোস্ট গার্ড নিয়মিত আমাদেরকে সহযোগিতা করছে। তিনি আরো বলেন আমার মতেও সুন্দরবনে এক্ষুনি জনবল বাড়ানো অতি জরুরী সেজন্য সরকারকে নতুন করে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দিতে হবে আমরা নতুন জনবল নিয়োগের জন্য বন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের বোন সংক্রান্ত মিটিং এ বারবার এ বিষয়ে অবহিত করে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী এই প্রতিপাদকে জানান সুন্দরবনে রাত পোহালেই খবর পাই হরিণ শিকারের আমরা এটি বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছি। বন মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা মিটিং এ অপরাধীদের জামিন না দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় অভিহিত করেছি। তিনি আরো জানান নতুন করে অতিরিক্ত যে বনরক্ষী নিয়োগ দেওয়ার কথা চালাচালি হচ্ছে এটা সঠিক আমরা সুন্দরবনে জনবল বৃদ্ধির জন্য নতুন দক্ষ বন রক্ষী নিয়োগের জন্য বন মন্ত্রণালয় নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি অতি শিগগিরই সুন্দরবনে নতুন করে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। বিষয়টি একপ্রকার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে মাননীয় বন উপদেষ্টা সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করলে অতি শিগগিরই নতুন জনবল নিয়োগ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে জলবায়ু পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন প্রধান উপদেষ্টা মাদার সাথে কথা হচ্ছে যে কোন সময় সুন্দর বনে অপরাধ রদ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বন রক্ষী নিয়োগ দেওয়া হবে। তিনি আরো জানান এছাড়া লোকালয়ে যে সমস্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাধ্যমে হরিণের মাংস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার হচ্ছে তাদেরও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে সুন্দরবন আমাদের জাতীয় সম্পদ এই সম্পদ কোন কায়দায় বিলুপ্তি হতে দেওয়া যাবে না তাই যে শক্তিশালী ব্যক্তি হোক না কেন অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে । তিনি আরো বলেন সুন্দরবনের শুধু আমাদের প্রাণিসম্পদ নয় বাংলাদেশের উপকূলীয় মানুষের ঢাল হিসাবে সুন্দরবন ব্যবহার হচ্ছে তাছাড়া জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয় সুন্দরবন আমাদের বড় ভূমিকা রেখে চলেছে।