সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে জেলেদের কাঁকড়া ধরার পাস (অনুমতিপত্র) বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুন্দরবনের পশ্চিম ও পূর্বের দুই বিভাগে এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ সি এফ মশিউর রহমান জানান পহেলা জানুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুন্দরবনে কাঁকড়ার প্রজনন মৌসোম। সে কারণে পহেলা জানুয়ারি ২০২৪ থেকে সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাছাড়া উপকূলীয় এলাকা দিয়ে কাঁকড়া আহরণ করতে পারবে না। সকল বাজার মহল্লায় কাঁকড়া কেনাবেচার দোকান বন্ধ থাকবে। তিনি আরো জানান এই দুই মাস কোন কাঁকড়া পরিবহন ও করতে পারবে না। কোন ছোট বড় কাঁকড়ার ফার্মে কাঁকড়া মজুদ রাখা যাবে না। যাদের ফার্মে কাঁকড়া মজুদ আছে তাহ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তোলন করে বিক্রয় করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মশিউর রহমান আরো জানান অন্য বছর যাদের ফার্মে কাঁকড়া থাকতো তাদের বিক্রয় করার জন্য সময় দিলেও এবার তা দেওয়া হবে না। তিনি আরো জানান ছোট বড় কাঁকড়ার ফার্ম ফাম আছে তাদের তালিকা বর্তমান আমাদের হাতে পহেলা জানুয়ারির পরে এই সমস্ত ফার্মে অভিযান চালানো হবে। এই সমস্ত ফার্মে পহেলা জানুয়ারির পরে কাঁকড়া পেলে সরকারি আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন বনরক্ষী বা সি পি জি সদস্যরা এর সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারের নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য সুন্দরবনের সব টহল ফাঁড়িকে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারের এই আইনের সহযোগীতা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নো পুলিশ কোর্স গার্ড নৌবাহিনী ও একসাথে কাজ করবেন সড়কে কাঁকড়া পরিবহন করলে পুলিশ সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে বলে মশিউর রহমান জানান।
এদিকে সুন্দরবনের কাঁকড়া আহারণ কারি গাবুরা ইউনিয়নের রেজাউল ২৫ রাজ্জাক ৩৫ মমিন ৪০ মানিক ৩৭ মোস্তফা ৪২ সিদ্দিক ৩৫ মাহবুব ৪০ আনোয়ার ৩৫ মোসলেম ২৫ রহমত ২৭ , বুড়ি গোয়ালিনী ইউনিয়নের আমিনুর ৫৫ মোস্তাক ৪০ কাউসার ২৭ মনিরুল ৪২ শামীম ৫৫ আজিজুর ২৫ ইসমাইল ৪০ রনজিত ৪০ রঞ্জন ৩০ মোতালেব ৫৫ রহিম ৪৫, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর গ্রামের বাবলু ৫৫ সাকাত ৪২ রহমান ৫৫ রাহুল ৩৫ মাহমুদ ৩০ আবুল ৫৫ জবেদ ৩৭ মোকসেদ ৩০ আইয়ুব আলী ৫৫ কালাম ৩০ এনসার ৫০ ও রমজান নগর ইউনিয়নের কাদের ৩০ রহিম ৪৭ রজব আলী ৩৫ আনারুল ৩৭ সুমন ৫০ শাহজাহান ৪০ ওমর গাজী ৩৩ আশরাফ ৫৫ রুহুল আমিন ২৫ তাদের সকলের দাবি জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি চায়নারা বাংলাদেশ থেকে বড়দিনের উৎসবের পরে বেশি দামে কাঁকড়া ক্রয় করে সে কারনে জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি কাঁকড়ার চড়া দাম থাকে এবং পুরো প্রজনন মৌসুম মার্চ এপ্রিল হলে ভালো ভালো হয় কারণ এই সময় ডিম কাঁকড়া বেশি ধরা পড়ে এই সময় কাঁকড়া বাচ্চা ছাড়ে।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্যামনগর উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা তুষার মজুমদার জানান শীতকালেই কাঁকড়ার প্রজনন মৌসোম এটা দেশে বিদেশে বিজ্ঞানীদের মতামতের ভিত্তিতে সরকার এই আইন তৈরি করেছে এখানে আমাদের বলার কিছু নেই আসুন সবাই সরকারের আইন মেনে চলি কাঁকড়ার বংশ বৃদ্ধি করি।
পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নুরুল করিম জানান, প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া রক্ষা করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিবছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস কাঁকড়া সুন্দরবনের নদী-খালে ডিম পাড়ে। সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয়। এ সময়ে কাঁকড়ার প্রজনন নির্বিঘ্ন রাখতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এ ছাড়া কাঁকড়ার যখন ডিম হয়, তখন এদের ধরা খুবই সহজ। এরা ক্ষুধার্ত থাকে। এদের সামনে যে খাবার দেওয়া হয়, তা খাওয়ার জন্য দ্রুত এগিয়ে আসে। যদি এ সময় কাঁকড়া শিকার না করা হয়; তাহলে পরের বছর বেশি কাঁকড়া উৎপাদন সম্ভব। সুন্দরবনে তাই বনরক্ষীদের টহল জোরদার করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা সামনে রেখে কয়েক দিন ধরে গহিন সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ফিরেছেন উপকূলীয় অঞ্চলের কাঁকড়া ধরার জেলেরা। তবে এ দুই মাস সংসার কীভাবে চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মোংলা উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা কাঁকড়া ধরার জেলে মহিদুল খান।
মহিদুল খান বলেন, বন্ধের দিনগুলোয় তাঁদের জন্য সরকারি কোনো ভাতার ব্যবস্থা না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে। বন্ধের এই সময়ে সরকারি সহায়তার দাবি করেন তিনি।
সোনাইলতলা ইউনিয়নের মো. লিটন গাজী জানান, তার কাঁকড়া ধরার দুই শতাধিক নৌকা সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ফিরে এসেছে। আর্থিকভাবে সচ্ছল কোনো লোক সুন্দরবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঁকড়া ধরতে যান না। যাঁরা যান, তাঁরা প্রায় সবাই দরিদ্র। দুই মাস নিষেধাজ্ঞা চলাকালে এই পরিবারগুলোর চলতে কষ্ট হবে।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া আছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি—এ দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম হওয়ায় ৫৯ দিনের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঁকড়া ধরার অনুমতি বন্ধ রাখে বন বিভাগ।
সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা
Leave a comment