মোঃ এজাজ আলী : সুন্দরবনে চলছে হরিণ শিকারের মহোৎসব। অসাধু বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে এসব হরিণ শিকার করছে পাচারকারীরা। এতে একদিকে যেমন সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ হরিণ অস্তিত্ব হারাচ্ছে, অপরদিকে বাঘের প্রধান খাদ্য হরিণ হওয়ায় বনের ইকো সিষ্টেম নষ্ট হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবনের হরিণসহ সকল বন্য সম্পদ রক্ষায় আরো কঠোরভাবে নজরদারি বাড়াতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আবারও খুলনার কয়রা থেকে হরিণের ৫০০ কেজি গোশত উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার ভোরে উপজেলার ৪নং কয়রায় শাকবাড়িয়া খালের পাশে অভিযান চালিয়ে এ গোশত উদ্ধার করা হয়। খালে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায় পাচারকারীরা। উপজেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য মতে, সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলায় হরিণ শিকারীদের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। গত তিন মাসে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫৩২ কেজি হরিণের গোশত, ১টি গলাকাটা হরিণ, পাঁচটি চামড়া ও মাথা জব্দ করে প্রশাসন। এ সময় মামলা হয়েছে ১০টি, গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬ জন। গত এক বছরে এর সংখ্যা ৫০ জনের বেশি। সম্প্রতি ৩ মণ হরিনের গোশতসহ এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ অবস্থায় গত ২৫ এপ্রিল কয়রা উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় নির্বিচারে হরিণ শিকারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। জানা যায়, বিশ্ব এৗতিহ্য সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এই চিত্রা হরিণ। কিন্তু দিনের পর দিন প্রশাসনের রেড এলার্টসহ বিভিন্ন অভিযানকে বৃদ্ধঙ্গুলি দেখিয়ে হরিণ নিধন করে যাচ্ছে পাচারকারীরা। স্থানীয়রা বলছেন, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় কয়েকটি চক্র অনেক আগে থেকেই হরিণ শিকারের সাথে জড়িত। বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীর যোগসাজশে অগ্রিম দাদন নিয়ে জেলেরা ছদ্নবেশে মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে বনে ঢোকে চোরা শিকারীরা। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে এজেন্ট ব্যবসায়ীদের। এই এজেন্টদের মাধ্যমে কখনো অগ্রীম, আবার কখনো গোশত এনেও বিক্রি করা হয়। এই চক্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যায় হরিণের মাংশ। সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক, অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, বন্যপ্রাণি শিকার নিষিদ্ধ হলেও আইন অমান্য করে সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ চিত্রা হরিণ শিকার করছে কয়েকটি চক্র। যে পরিমান হরিণের চামড়া, গোশত উদ্ধার হয়, তার থেকে কয়েকগুন বেশি হরিণ শিকার হয়। তিনি আরো বলেন, মাছে মধ্যে দুএকটি অভিযানে হরিণের গোশত, চামড়া, মাথা জব্দ হলেও মূল শিকারী ও পাচারকারীরা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গোশত পরিবহনকারীরাই ধরা পড়ে। তারা দুর্বল আইনের কারনে কয়েকদিন পর জেল থেকে বেরিয়ে এসে একই কাজে লিপ্ত হন। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, অল্প জনবল দিয়ে এত বড় বনে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয় বন বিভাগকে। তারপরও হরিণ শিকার আগের চেয়ে অনেকাংশে কমেছে। র্যাব, কোষ্টগার্ড, বিজিবি ও বন বিভাগের নিয়মিত টহলের কারনে এখন বনে হরিণ শিকারের সুযোগ কম। বনে জলদস্যুরাই বেশি হরিণ শিকার করে খেতো। ২০১৮ সালে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হওয়ার পর এবং গত কয়েকবছর রাসমেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হরিণ শিকার কমেছে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত