দীর্ঘ ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে সুন্দরবন। সেপ্টেম্বর ১ থেকে পর্যটকদের পাশাপাশি জেলেরাও পাচ্ছেন মাছ ধরার অনুমতি। বন্যপ্রাণী ও মৎস্য সম্পদের প্রজনন বাড়াতে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট সুন্দরবনে সব ধরনের মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। মানুষের হাতে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন বিপন্ন হচ্ছে দিন দিন। ফলে হুমকির সম্মুখীন মাছ প্রজাতিসহ জীববৈচিত্র্য। এমতাবস্থায় রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এ নিষেধাজ্ঞার সময়ে পর্যটকসহ বনজীবীদের কোলাহলমুক্ত থাকায় সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী অবাধ বিচরণের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন প্রজনন করতে পেরেছে। প্রকৃত চিত্র হচ্ছে নিষেধাজ্ঞার সময়ে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য প্রাণ ফিরে পায়। ফলে ম্যানগ্রোভ এই বনের বন্যপ্রাণী ও মৎস্য সম্পদসহ জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হয়েছে। সুন্দরবন উন্মুক্ত করে দেয়া হলেও পর্যটকসহ বনজীবীদের জন্য পানির বোতল, চিপসের প্যাকেটের মতো সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
দেশের সংরক্ষিত বনভূমির ৫১ শতাংশ অর্থাৎ ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার সুন্দরবন। সংরক্ষিত এই বনের ৩টি এলাকাকে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করে, যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩০ শতাংশ এলাকা। বাংলাদেশের ফুসফুস-খ্যাত সুন্দরবন অক্সিজেনের এক বিশাল ফ্যাক্টরি হিসেবে কাজ করে। এর অর্থনৈতিক গুরুত্বও অনেক। কিন্তু পরিতাপের বিষয় সুন্দরবনকে আমরা প্রতিনিয়ত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। কখনো উন্নয়নের নামে, আবার কখনো ব্যক্তি বা মুষ্টিমেয় দলগত স্বার্থের কারণে। জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবও মানুষের সৃষ্ট নানা কারণে সুন্দরবনে গাছপালা ও প্রাণিকুল হুমকির মুখে। অজ্ঞতা ও অবহেলা এবং সুন্দরবনের ভেতরের নদীগুলোর লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়াসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে অনেক গাছপালা ও প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। বারবার আগুন লেগে বনের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, কিন্তু মানবসৃষ্ট দুর্যোগগুলো থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভকে সুরক্ষিত রাখার জন্য মনুষ্য সদিচ্ছাই যথেষ্ট। বনের অভ্যন্তরের নদ-নদীতে প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ দ্রব্য নিয়ে জাহাজ বা কার্গো চলাচল করছে। জাহাজডুবির ঘটনা ঘটলে যে দ্রুত উদ্ধার করা হবে বা নদীর পানি থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হবে সেটিও দেখা যায় না। তবে সুন্দরবন রক্ষায় মূল ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকে।
আমাজনের মতো বনও আজ মানুষের লোভের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। সেই বনও সংকুচিত হচ্ছে। পৃথিবীর ফুসফুসের যদি এই অবস্থা হয়; তাহলে বাংলাদেশের ফুসফুসের কী হবে? তাই আগেভাগেই সাবধান হতে হবে। উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য পরিকল্পিত বনায়নের পাশাপাশি বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ রক্ষা করতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি প্রাণী ও ভেষজের আধার সুন্দরবন। সবাই মিলেই সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে।