মোঃ এজাজ আলী : চারিদিকে ঘন সবুজ পরিবেশের মাঝে বুঁদ হয়ে থাকার নেশাই যে কোনো পর্যটকের প্রথম পছন্দ বিশ্ব এৗতিহ্য সুন্দরবনের লীলাভূমি। ভরা এই পর্যটক মৌসুমে সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য পরিলোকন করে অভিভূত হচ্ছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। ইতোমধ্যে সুন্দরবনে পরিবেশবান্ধব নতুন চারটি ইকো ট্যুরিজ্যম কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। নানা সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন পর্যটন কেন্দ্র জানান দিচ্ছে সম্ভাবনার। এতে একদিকে যেমন রাজস্ব আদায় বাড়বে, তেমনি সম্প্রসারণ ঘটবে নানাবিধ ব্যবসা বাণিজ্যের। বিশ্বের সেরা ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবন প্রকৃতির রহস্যঘেরা। আছে সারি সারি সুন্দরী, গেওয়া, গরান, কেওড়াসহ গোলপাতা গাছ। চিত্রল হরিণের দল, বন মোরগের ডাক, মৌমাছির চেঁচামেচি ও বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গর্জন। নানা বিচিতদ্রতার কারনেই বরাবরই দেশি বিদেশি পর্যটকদের মনে সুন্দরবন আলাদা স্থান করে নিয়েছে। পর্যটক টানতে সুন্দরবনে পরিবেশ বান্ধব পর্যটন সুবিধা বাড়াতে ২০২০ সালের জানুয়ারীতে চারটি ইকো ট্যুরিজ্যম কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়।”সুন্দরবনে পরিবেশবান্ধব পর্যটন সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গড়ে তোলা হচ্ছে এ কেন্দ্রগুলো। নতুন এ কেন্দ্রগুরেঅ হচ্চে খুলনা রেঞ্জের শেখেরটেক ও কালাবগী এবং শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্ধা ও চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিকে। এ বিষয়ে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সভাপতি মোঃ মঈনুল হোসেন বলেন, এখানে পর্যটন কেন্দ্র বাড়ায় দেশি বিদেশি পর্যটকদের বন দেখার সুযোগ বাড়ছে। বন্যপ্রাণীদের অবাধ বিচরনের মধ্যে নিরিবিলি ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বনের সৌন্দর্য দেখার সুযোগ সৃষ্টি হবে এসব পর্যটন কেন্দ্রে। এতে পর্যটক যেমন বাড়বে, তেমনি সরকারের রাজস্ব আয়ও হবে। বনকে ঘিরে প্রসারিত হবে ব্যবসা বাণিজ্য। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আবু নাসের মোহাম্মদ মহাসীন বলেন, দেশি পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা সুন্দরবনে বেড়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত ২২৮ জন বিদেশি সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন এবং এতে রাজস্ব আয় হয়েছে ৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে রাসমেলার পূণার্থীদেরসহ ৪০ হাজার ৭৮ জন পর্যটক সুন্দরবনে এসেছেন। এর মধ্যে পূর্ণার্থী ৭৫২৭ জন। ৪৭৭ জন বিদেশি। দেশি-বিদেশি পর্যটক মিলে রাজস্ব এসেছে ৬২ লাখ ১২ হাজার ৮৬৫ টাকা। খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক, শরণখোলা উপজেলার আলীবান্ধা, খুলনার কালাবগী ও শেখেরটেকে পর্যটন কেন্দ্রগুলো হচ্ছে। এসব কাজ শেষ হলে দর্শণার্থীরা বনের অপরুপ সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারবেন। এতে বাড়বে সরকারের রাজস্ব। এদিকে ২৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পে সাতটি ফাইবার বডি ট্রলার, তিনটি পন্টুন ও গ্যাংওয়ে, তিন কিলোমিটার আরসিসি সড়কসহ ১০ টি পথ নির্দেশনা তৈরি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৭০ শতাংশ অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা। গড়ে প্রতি বছর দুই লাখের বেশি পর্যটক সুন্দরবনে আসেন।