মোঃ এজাজ আলী : বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণ হরিণ। সুন্দরবনে ঢুকলেই সবসময়ই চোখে পড়ে বনের কোলঘেঁষে বা ছোট ছোট নদীর পাড়ে চিত্রা হরিণের চলাফেরার অপরূপ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। মায়াবী এই চিত্রা হরিণের দলবেধেঁ রাত-দিন ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় বন বিভাগের কোনো কোনো কার্যালয়ের সামনে। সাম্প্রতিক সময়ে এই বনে হরিণের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। খুলনা অঞ্চলেল বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, এখন সুন্দরবনে প্রবেশ করলেই মায়াবী হরিণের দেখা মিলবে, হরিণের সঙ্গে বাঘও দেখতে পাচ্ছেন পর্যটকরা। হরিণের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারনে ২০১৮ সালে শেষ জরিপ হয়েছিল। ওই জরিপ অনুযায়ী, সুন্দরবনে হরিণ রয়েছে এক থেকে দেড় লাখ। তবে গত বছরের নভেম্বর থেকে সুন্দরবনে হরিণ ও শূকরের সংখ্যা নির্ধারনে গবেষণার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০২৩ সালের শেষ দিকে ফলাফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন এই বন সংরক্ষক। সুন্দরবনে চিত্রা হরিণের সংখ্যা বাড়লেও চোরা শিকারীদের অপতৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না। বন সংলগ্ন এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরা শিকারিরা। বন বিভাগ ও পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০ শিকারিকে হরিণের মাংস ও চামড়াসহ আটক করা হয়েছে। সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট বাসিন্দারা জানান, যে পরিমান হরিণের মাংস ও চামড়া আটক করা হয়, তার থেকে কয়েকগুন পরিমান হরিণ শিকার করা হয়। ঝটিকা দু-একটি অভিযানে মাংস, চামড়া ও মাথা উদ্ধার হলেও মূল শিকারি ও পাচারকারীরা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আটক হয় শুধু হরিণ বহনকারীরা। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফাঁদসহ নানা কৌশলে সুন্দরবনের হরিণ শিকার করেন তারা। সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে হরিণ শিকারিদের তৎপরতা। এসব হরিণের মাংস আবার হরহামেশাই বিক্রি হচ্ছে বন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায়। হরিণ শিকারের পাশাপাশি বনের অন্যপ্রাণিরাও এদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ডজন-ডজন হরিণ শিকার হলেও তা নিয়ে খুব একটা তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। খুলনার কয়রা উপজেলার পূর্ব ঘড়িলাল এলাকা থেকে তিন মণ হরিণের মাংস উদ্ধার করে কোষ্টগার্ডের সদস্যরা। কোষ্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আব্দুর রহমান জানান, সোমবার ভোরে নিয়মিত টহলের সময় কয়রার পূর্ব ঘড়িলাল এলাকায় একটি নৌকায় তল্লাশী করে প্রায় ১২০ কেজি হরিণের মাংস পাওয়া যায়। এ সময় শাহ আলম নামে এক ব্যাক্তিকে আটক করা হয়। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু শিকারের ঘটনা ঘটলেও সেটা আগের চেয়েও অনেক কম, মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি না হলে হরিণ শিকার বন্ধ করা সম্ভব নয়। অল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে এতো বড় ম্যানগ্রোভ বনে অপরাধ নিয়ন্ত্রন করতে হিমশিম খেতে হয় বন বিভাগকে।