মোজাফ্ফর রহমান, সাতক্ষীরা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবন সংলগ্ন জল সীমান্তের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত কল্পে ‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’ উদ্বোধন করেছেন।
আজ শনিবার সকালে বিজিবির রিভারাইন বর্ডার গার্ড (আরবিজি) কোম্পানীর দায়িত্বপূর্ণ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন বাংলাদেশ-ভারত জল সীমান্তবর্তী রায়মঙ্গল নদী ও বয়েসিং খালের মুখে ‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’ উদ্বোধন করা হয়।
এ সময় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
ভাসমান বিওপি উদ্বোধন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সীমান্তবর্তী রায়মঙ্গল নদী ও বয়েসিং খালের সংযোগস্থলে বিজিবির “বয়েসিং ভাসমান বিওপি” এর শুভ উদ্বোধন করা হলো।
সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে এই ভাসমান বিওপিটি একটি পূর্ণাঙ্গ অপারেশনাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে, যা জলপথে টহল ও নজরদারির সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
তিনি বলেন,প্রাকৃতিকভাবে সুরক্ষিত হলেও সুন্দরবনের বিস্তৃত জলাভূমি ও নদীবেষ্টিত সীমান্ত এলাকায় স্থলপথে নিয়মিত টহল প্রদান অনেকটাই কঠিন।
তবে এখন থেকে এই ভাসমান বিওপি চোরাচালান, মানবপাচার, বনজ সম্পদ লুণ্ঠন এবং অন্যান্য সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক ও কার্যকর প্রতিক্রিয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের ৪,১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ১৮০ কিলোমিটার নদীপথ, যার মধ্যে প্রায় ৭৯ কিলোমিটার সুন্দরবনের মধ্যে অবস্থিত।
এর আগেও কাচিকাটা ও আঠারোভেকিতে দুটি ভাসমান বিওপি স্থাপন করা হয়েছিল।
সেই ধারাবাহিকতায় বয়েসিং-এ তৃতীয় ভাসমান বিওপিটি চালু হলো।
তিনি বলেন,এছাড়া বিজিবির অধীনে একটি বিশেষ “রিভারাইন বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন” গঠনের পরিকল্পনাও রয়েছে, যা ভবিষ্যতে জলভিত্তিক সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকার মনে করে, সুন্দরবনের “বয়েসিং ভাসমান বিওপি” কেবল একটি স্থাপনা নয় বরং এটি একটি কৌশলগত নিরাপত্তা উদ্যোগ, যা সীমান্ত এলাকায় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতির বাস্তব রূপ।
এটি দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় একটি আধুনিক ও কার্যকর নিরাপত্তা সংস্কৃতি গঠনের পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
ভাসমান বিওপি সম্পর্কে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, বিজিবির একটি রিভারাইন বর্ডার গার্ড কোম্পানি আছে, যেটা মূলত: সুন্দরবন এলাকায় পাহারা দেওয়া, টহল করা, চোরাচালান প্রতিরোধ করা, যেকোনো ধরণের অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে কাজ করছে।
তিনি বলেন,এই কোম্পানীর অধীনে সুন্দরবনের কৈখালিতে ০১টি স্থল বিওপি এবং কাচিকাটা ও আঠারভেকিতে দুটি ভাসমান বিওপি আছে।
সুন্দরবনের রায়মঙ্গল নদী ও বয়েসিং চ্যানেলে দিয়ে চোরাচালানের বেশ বড় একটা চক্র সক্রিয় ছিল। এটা প্রতিরোধ করার জন্য বয়েসিং খালের মুখে আরো ১টি ভাসমান বিওপি স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন,
আজ এই বিওপিটি উদ্বোধনের মাধ্যমে ভাসমান বিওপি তার কার্যক্রম শুরু করলো।
এই বিওপির মাধ্যমে সুন্দরবনে চোরাচালান প্রতিরোধ সহ সব ধরনের অপরাধ দমন আরও সুন্দর ও সহজতর হবে।
সাম্প্রতিককালে সীমান্ত দিয়ে পুশইনের ব্যাপারে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, মূলত: সিলেটের বিয়ানীবাজার, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ, কুড়িগ্রামের রৌমারীর প্রত্যন্ত চর এলাকা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জনবসতিহীন এলাকা দিয়ে পুশইনের ঘটনা ঘটেছে।
পাশ্ববর্তী দেশ থেকে প্রতিনিয়তই নিয়ম বহির্ভূতভাবে পুশইনের ঘটনা ঘটছে; আজকে সকালেও কিছু পুশ ইন হয়েছে।
আমাদের সীমান্তটা এতো বিস্তৃত যে প্রতিটি জায়গায় গার্ড করা সম্ভব না। তারপরেও বিজিবি সদস্যরা যথাসাধ্য প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী সাধারণ জনগণ, আনসার ও পুলিশ সদস্যরাও পুশইন রোধে বিজিবিকে সহায়তা করছে।
তিনি বলেন,আমরা বলেছি, যদি কোনো বাংলাদেশী নাগরিক ভারতে থেকে থাকে তবে নিয়মমাফিকভাবে হস্তান্তর-গ্রহণের মাধ্যমে ফেরত প্রদান করা হয়।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি লেখা হয়েছে। বিজিবির পক্ষ থেকেও সার্বিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ফ্ল্যাগ মিটিং ও প্রতিবাদলিপি প্রেরণ করেছি।
বিজেপি মহাপরিচালক বলেন,
সীমান্তে বিজিবির নিরাপত্তা জোরদার, টহল তৎপরতা ও জনবল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি বিজিবিকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য বলা হয়েছে।
ভাসমান বিওপি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিজিবি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিজিবির যশোর রিজিয়ন কমান্ডার, খুলনা সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার, নীলডুমুর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, আরবিজি কোম্পানীর অধিনায়ক, বিজিবির অন্যান্য পদবীর কর্মকর্তা ও সৈনিকবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।