সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : এখন এই শীত মৌসুমে সুন্দরবন ভ্রমণের উপযোগী সময় নদীর পানি শান্ত কোন গরমের মৌসুম নয় পশ্চিম সুন্দরবনে সাতক্ষীরা রেঞ্জে
সড়কপথে সুন্দরবন দেখার এখন শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ হয়ে নীল ডুমুরে
বাস কিংবা পরিবহন থেকে নামলেই দেখা যায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের নীলাভূমি বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের দৃশ্য তাই বলা হয় সাতক্ষীরা সড়কপথে সুন্দরবন। বাংলাদেশের ছয় জেলা জুড়ে সুন্দরবন ।
কিন্তু সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে
নানা কারণে পর্যটক কমছেএতে পর্যটনের উপর নির্ভরশীল উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন জীবিকার ভাটা পড়েছে বন বিভাগ সূত্রে জানায় ২০২০ ২১ ২২ অর্থবছরে পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জ দিয়ে সুন্দরবনের প্রবেশ করেছেন ৫১১৪জন দেশি ও ৫০জন বিদেশি পর্যটক সেখানে পরের
বছরে সুন্দরবনের প্রবেশ করেছে ৪৫ হাজার ১৪ জন দেশি ও ১৮০ জন বিদেশি পর্যটক ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুন্দরবনে প্রবেশের মাথাপিছু ফিছিল ২১ টাকা ৫০ পয়সা যা পরে বাড়িয়ে ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা করা হয় সে কারণে পর্যটক সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি না হলেও আগের তুলনায় সমান পরিমাণ রয়েছে। বুড়িগালিন্ ন্স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান এই প্রতিপাদক কে আর
বলেন প্রতিদিন এখান থেকে টলারে সুন্দরবনের কলাগাছিয়া ও দুবেকি ভ্রমণের অনুমতিপত্র প্রদান করা হয় ।তিনি আরো জানান একদিনের ভ্রমণের জন্য সকাল সাতটা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত এই অনুমতি পত্র দেওয়া হয়। সুন্দরবন কেন্দ্রীয় পর্যটন শিল্পে জড়িত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া যায় এখানথেকেপর্যটক এতটুকু কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে তারা বলেন সুন্দরবনের সাতক্ষীরার অভ্যন্তরে পর্যটক কমার অত্যন্ত তিনটি কারণ আছে এগুলো হলো সাতক্ষীরা মুন্সিগঞ্জ মহাসড়কের বেহাল দশা সুন্দরবনের প্রবেশ
মূল্য বৃদ্ধি ও সাতক্ষীরা রেঞ্জথেকে সুন্দরবনের রাত্রি কালীন অবস্থানের পাশ দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায়। পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষণ মশিউর রহমান বলেন সড়ক পথে সুন্দরবন
ভ্রমণের একমাত্র পথ সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর হয়ে মুন্সিগঞ্জ নীল ডুমুর এই পথে প্রতিদিন শত শত পর্যটক সুন্দরবনের কলা গাছি ইকো ট্যুরিজম সেন্টার ও দোবে কি
ভ্রমণ করছে সুন্দরবন দেখার এখন উপযুক্ত সময়ে কারণ নদীর পানি শান্ত গরমের কোনো প্রভাব নেই তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি এবং বাৎসরিক শিক্ষা সফরের
জন্য প্রতিদিন উপচে পড়া পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছে। তিনি আরো বলেন সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশন যথাক্রমে কৈখালী কদমতলা বুড়ি গোয়ালিনী কোবা তাক ও মুন্সিগঞ্জ টহল ফাঁড়ি থেকে সুন্দরবনে প্রবেশে পর্যটকদের অনুমতি দেওয়া হয়। প্রতিদিন অনুমতি পত্র নিয়ে নীল ডুমুরট্রলার ঘাটেরয়েছে টলার
যাতায়াতের কোন প্রভাব পড়ে না। যে সমস্ত পর্যটকরা সুন্দরবনের রাত্রে যপনকরেন তাদের অনুমতি পত্র বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নিতে হয়। আমরা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশ মোতাবেক পাস পারমিট ও বনরক্ষীদের দিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে থাকি ।মশিউর রহমান আরো বলেন দেশি পর্যটকদের চেয়ে বিদেশী পর্যটকদের সরকারি রাজস্ব বেশি সরকারের জারি করা নীতিমালায় রয়েছে। তিনিআরো বলেন সুন্দরবনে বনদস্যদের দাপটের কারণে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য বন বিভাগের অতিরিক্ত টহল বাড়ানো হয়েছে তার পরও রাত দিন বিরতিহীনভাবে পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনবিভাগ কাজ করছে ।
এ ব্যাপারে কথা হয় বুড়ি গোয়ালিনী নীল ডুমুর টলার মালিক আনিসুর রহমানের সাথে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান এখান থেকে কলাগাছি ভ্রমণ করলে ২০০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা টলার ভাড়া আর যারা দেবে কিযায়তাদের জন্য তিন থেকে চার হাজার টাকা ট্রলার ভাড়া অন্যান্য জায়গায় দূরত্ব বুঝে ভাড়ানির্ধারণ করা হয়। তিনি আরো জানান পর্যটকদের সংখ্যা কম বেশি হলে ভাড়াও কম বেশি হয়ে থাকে।
তাছাড়া
তুলনামূলকভাবে ভাড়াবেশি হলে যাদের টলারের সই নেই তাদের ভাড়া একটু কম আছে যাদের ট্রলারের সই নেই তাদের ভাড়া কম আছে। তিনি আরো বলেন সুন্দরবন ভ্রমণের এখন ভরা মৌসুমী সে কারণে প্রতিদিন দেশি ও পর্যটকদের সংখ্যাবেশি তবে শুক্র শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় পর্যটকদের ঢল নামে। বনের ভিতর কোন খাবার ব্যবস্থানা থাকায় পর্যটকদের দুপুরের খাবার নাস্তা ও পানি সাথে নিয়ে যেতে হয় টলারে কোন সিরিয়াল নেই দরদাম করে যেভাবে পারে নিয়ে যায়। বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ১৯৯৩ সালে ইউনেস্কো কর্তৃ ক স্বীকৃতি পাবার পরে বাংলাদেশের সরকার এটাকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে তাছাড়া সুন্দরবনের ওপর নানান নীতিমালা জারি করেছে। প্রতিবছর মাছ কাকড়া আহরণেরজন্য পাঁচ মাস সুন্দরবনে ঢোকার অনুমতি নিষিদ্ধ করেছে সরকার ।
সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও সুন্দরবন বাঁচানোর কাজ করছে। তবে দাবি উঠেছে বন বিভাগের জনবল বৃদ্ধি দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং অসাধ বনরক্ষী দেরসুন্দরবন থেকে প্রত্যাহারকরে সামাজিক বনাঞ্চলে স্থানান্তর করা। কথা হয় পশ্চিম ওপূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী নুরুল করিমের সাথে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন সুন্দরবনে মাছ কাঁকড়া মধু আহরণে যে সরকারি রাজস্ব প্রতিবছর পাওয়া যায় সেই পরিমাণ সরকারের রাজস্ব পর্যটকদের কাছ থেকে পাওয়া যায়। সে কারণে সুন্দরবনে দিন দিন মাছ কাকড়া মধু আহরণ বিভিন্ন সংগ্রহে বিধি নিষেধ জারি করছে সরকার ।তিনি আরো বলেন বছর পার হলেই সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটক বাড়ছে আমাদের এখন প্রধান কারণ সুন্দরবনের জনবল বৃদ্ধি করা। জনবল বৃদ্ধি না করতে পারলে সামাল দেওয়া
আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ছে ।তিনি আরো বলেন বৃহত সুন্দরবনে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জনবল মারাত্মক সংকট সে কারণে সরকারের এখনই প্রয়োজন সুন্দরবনে জনবল বাড়ানো। এ ব্যাপারে কথা হয় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাক আহমেদের সাথে তিনি বলেন সড়ক পথে সুন্দরবন দেখার একমাত্র পথ বাংলাদেশের সাতক্ষীরা হয়ে সুন্দরবন কিন্তু সড়কের বেহাল অবস্থা সহ নানা সমস্যার কারণে পর্যটক কমার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল কে জানিয়েছি অতি জরুরী খুলনা মুন্সিগঞ্জ মহাসড়ককে সংস্কার করা পর্যটকদের সুন্দরবন ভ্রমণে সরকারি রাজস্ব কামানো এবং সরাসরি সাতক্ষীরা থেকে রাত্রিযাপনের পারমিশন দেওয়ার জন্য ।তিনি আরো বলেন বর্তমান সুন্দরবনে বনদস্যদেরদাপট বেড়েছে সে কারণে ও পর্যটকদের সংখ্যা একটু কমছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই সুন্দরবন দেখতে এসে বনদস্যদের ভয়ে মুন্সিগঞ্জ আকাশ নীলা হয়ে ফিরে চলে যান এজন্য বনদস্যদের প্রতিহত করার জন্য জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে বারবার আলোচনা হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে বনদস্যদের প্রতিহত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি অতি শিগগিরই সুন্দরবনে আবার বনদস্য মুক্ত হবে তখন পর্যটক এবং বনজীবীদের সুন্দর বনের প্রবেশে আর কোন আতঙ্ক আশঙ্কা থাকবে না ।সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ আরো বলেন সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের আকর্ষণের আরো বিভিন্ন এস্পট গড়ে তোলার পরিকল্পনা সরকার এবং আমাদের রয়েছে সেজন্য আমরা সরকারের উদ্ধাতন মহলে এর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন সুন্দরবন ভ্রমণের এখনই উপযুক্ত সময় কারণ এখন শীত মৌসুম নদী উত্তাল নেই গরমের প্রভাব নেই সে কারণে এখন সুন্দরবন দেখা পর্যটকদের অতি জরুরী এবং ঝুকিহীন সুন্দরবন দেখার পর্যটকরা সুন্দরবনেযেতে পারলে তারা মুন্সিগঞ্জ আকাশ নীল হয়ে সুন্দরবনে যেতে পারে তার জন্য ট্রলারসহ স্পিডবোটের ব্যবস্থা রয়েছে পর্যটকদের জনবল বেশি হলে লঞ্চ ব্যবস্থা রয়েছে ।মোস্তাক আহমেদ আরজানান যারা বনদস্যদের ভয়ে এবং সুন্দরবনের জীব জন্তুর ভয়ে সুন্দরবন দেখতে ভয় পায় তাদের জন্য মুন্সিগঞ্জ আকাশ নীলা ই ক ট্যুরিজম সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে যার স্বত্বাধিকারী সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। এ ব্যাপারে জলবায়ু পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন সুন্দরবন সুরক্ষার জন্য সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে পর্যটকরা যাতে নিরাপদে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারে এবং বনজীবী রাযাহাতে নিশ্চিন্তায় সুন্দরবনে মাছ কাকড়া মধু গোলপাতা আহরণ করতে পারে সেজন্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে ইতিমধ্য বনদস্য দমনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে বন মন্ত্রণালয় কাজ করছে অতি শিগগিরই সুন্দরবন থেকে উৎখাত করা হবে বনদস্যদের।তিনি আরো বলেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে সমস্ত বনদস্যুরা অস্ত্র গোলাবারুদ সহ আত্মসমর্পণ করেছিল সেই সমস্ত বনদস্যরা আবারও সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিদিন মিডিয়ায় দেখতে পাই সুন্দরবনের বনদস্যরা জেলেদের কাছ থেকে মোটা আকারের মুক্তিপণাদায় এটা আর বেশিদিন চলতে দেওয়া হবে না এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপকূলীয় সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের