
সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর: সুন্দরবন রক্ষায় তৈরি করতে হবে কঠোর আইন এবং তাহা বাস্তবায়ন করতে হবে তাহলে সুন্দরবনের অস্তিত্ব টিকে থাকবে তা না হলে দিনের পর দিন সুন্দরবনের ক্ষতি বাড়ছে । বিশেষজ্ঞদের অভিমত ব্রিটিশের তৈরি করা বন আইন সম্পূর্ণ বাতিল করে নতুন করে সুন্দরবন সুরক্ষা আইন তৈরি করতে হবে। যে আইনের ফাক ফক দিয়ে কোন কায়দায় যেন অপরাধীরা পার পেয়ে না যায় এমন ধরনের আইন তৈরি করতে হবে । সুন্দরবনে বর্তমানে যত বড় অপরাধী ধরা পড়ুক না কেন ব্রিটিশের তৈরি করা আইনের এবং তা সংশোধনের তৈরি করা আইনের ফাকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে । বেরিয়ে যেয়ে আবার সুন্দরবনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে ।সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশের নয়, গোটা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের আধার। এই বনাঞ্চল দেশের উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করে, লক্ষ লক্ষ মানুষকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করে এবং প্রাকৃতিকভাবে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, নিয়মিতই সুন্দরবনের নিয়ম-কানুন ও পরিবেশ সুরক্ষার নিয়ম ভেঙে চলছে অবৈধ অনুপ্রবেশ, শিকার ও মাছ-কাঁকড়া আহরণ।সম্প্রতি পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের চরাপুটিয়া এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে ১৪জন জেলে আটক হওয়া এবং শেলারচর ছাপরাখালী এলাকায় হরিণ শিকারের ফাঁদ উদ্ধার হওয়ার ঘটনা আবারও সুন্দরবনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। বন বিভাগ তিন মাসের জন্য মাছ ও কাঁকড়া ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও কিছু অসাধু চক্র তা উপেক্ষা করে বনের প্রাণ-প্রকৃতির ওপর বিপজ্জনক আঘাত হানছে।জানা গেছে, বন বিভাগের স্মার্ট টিম অভিযান চালিয়ে ১৮০টি চারু ফাঁদ, আটটি ডিঙ্গি নৌকা ও হরিণ শিকারের জন্য ব্যবহৃত প্রায় ২৫কেজি ওজনের ফাঁদ ও সিটকা উদ্ধার করেছে। এই ধরণের কর্মকাণ্ড শুধু বন্যপ্রাণী নয়, সুন্দরবনের অস্তিত্বের জন্যও মারাত্মক হুমকি। বিশেষ করে হরিণ শিকার ও কাঁকড়া ধরার মতো অপতৎপরতা বনজ সম্পদের নিঃশেষ করে দিচ্ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে আরও ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা তৈরি করে।আমরা মনে করি, এই ঘটনার মাধ্যমে বন বিভাগের সদিচ্ছা ও সক্ষমতা উভয়ই প্রমাণিত হয়েছে। তবে এই তৎপরতা যেন মৌসুমভিত্তিক না হয়ে নিয়মিত হয়, তা নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া স্থানীয় জনগণকে সচেতন করে বন নির্ভর জীবিকা বিকল্প পেশার সুযোগ তৈরি করাও সময়ের দাবি। জেলেদের পুনর্বাসন ছাড়া শুধু ধরপাকড় চালিয়ে সুন্দরবন রক্ষা সম্ভব নয়।হরিণ শিকার চক্র এবং নিষিদ্ধ ফাঁদ ব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া, বনপ্রহরীদের আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত করা, নিয়মিত টহল বাড়ানো এবং স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে সুন্দরবন সংরক্ষণের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হয়ে উঠেছে।সুন্দরবন আমাদের গর্ব, আমাদের বাঁচার অন্যতম আশ্রয়। একে রক্ষা করা কেবল বন বিভাগের নয়, আমাদের সকলের নাগরিক দায়িত্ব। নির্বিচারে শোষণ নয়, সুন্দরবনের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণই হোক আমাদের অঙ্গীকার।