মোঃ এজাজ আলী : জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ততা, ফাঁরাক্কা বাধঁ, অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাছকাটা, ও সচেতনতার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে সুন্দরবনের মূল্যবান সুন্দরী গাছ। গবেষণায় দেখা গেছে, গত চার দশকে সুন্দরবনের লবণাক্ততা ৬০ শতাংশ বেড়েছে। আর প্রতি বছর সুন্দরবনে ৯৬ হাজার টন পলি জমছে। এ অবস্থা চললে ২০৫০ সালের মধ্যে সুন্দরবনের পরিবেশে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে। বিলীন হতে পারে সুন্দরী গাছ। তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সঠিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে না পারা ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে সুন্দরী গাছ সুন্দরবনের থেকে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতী পাওয়া এ বনে অব্যাহতভাবে বাড়ছে লবণাক্ততা। সাগরের পানির লবণাক্ততা সহিষ্যু গাছঢালিতে পরিপূর্ণ এ বনের সামনে এখন অতিরিক্ত লবণাক্ততাই বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমুদ্রের উপকূলে তীব্রভাবে লবণাক্ততা বাড়ছে যার ফলে শুধু সুন্দরী গাছ নয় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ’সুন্দরবনের লবণাক্ততার ফলে যদি সুন্দরী নামক বড় গাছগুলো না থাকে, তবে সেখানে পানি এতো লবণাক্ত হবে যে বাঘের অস্তিত্ব, হরিণের অস্তিত্বএবং পুরো গাছপালার যে সিস্টেম আছে সেটাই হারিয়ে যাবে। এর সমাধান হচ্ছে লবণাক্ততা কমানোর জন্য সুন্দরবনে মিঠাপানির সরবরাহ করা। তার মতে, একটি ব্যারাজ তৈরি করে গঙ্গা থেকে পাওয়া পানি কিছুটা সুন্দরবনে ধাবিত করলে লবণাক্ততা অনেকটাই কমে যাবে। দীর্ঘ সময় জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ মনিরুজ্জামান। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে সুন্দরবনে। দূষিত হচ্ছে মাটি ও বাতাস। ক্রমাগত কমছে উপকূলের রক্ষাকবচ হিসেবে পরিচিত সুন্দরী গাছ। এর প্রভাব নদেখা যাচ্ছে জীববৈচিত্র ও প্রাণীকূলেও। এই গবেষক আরো বলেন, সুন্দরী গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় সমুদ্রের ঝড় তাতে বাঁধা পায় এবং সেটি দুর্বল হয়ে স্থলভাগে আছড়ে পড়ে। বিশাল ক্ষতি থেকে রক্ষা পায় উপকূলীয় অঞ্চল। কিন্তু আশংকাজনকহারে বনের মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা বাড়ায় মারা যাচ্ছে অনেক সুন্দরী গাছ। নোনা পানিতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে এ গাছের বীজ। প্রকৃতির বৈরিতায় কমছে উচ্চতাও। এতে গাছগুলোকে ঘিরে প্রাণীকূলের যে বাস্তুুতন্ত্র, তাতেও পরিবর্তনের হাওয়া। এটা চলতে থাকলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি বেড়ে যাবে। এর প্রমান মেলে সামান্য ঝড়ে বনের ক্ষত দেখে। সুন্দরবনে আগেও গাছ ভাঙত, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর মাত্রা বেড়েছে বহুগুন। সম্প্রতি এক গবেষণা বলছে, সুন্দরী গাছের পরিমান কমেছে ৭৯ ভাগ। আর কাঁকড়াজাতীয় গাছের পরিমান বেড়েছে ১৩৮১ শতাংশ। এতে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে সুন্দরবনের বড় গাছগুলোর জায়গা দখল করেছে ছোটগাছ। এতে করে সুন্দরবনের প্রাণ প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রে ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়ার শংকা তৈরি হয়েছে।