গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করছে আওয়ামী লীগ। গঠন করা হয়েছে নতুন মন্ত্রিসভা। ইতোমধ্যে বিজয়ীরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। শপথ গ্রহণের পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ সংসদ নেতা ও উপনেতা নির্বাচন করেছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক মানদণ্ডের বিচারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তবে একই সঙ্গে ওই দুই পশ্চিমা দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে এই বাস্তবতাকে আমলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। দুই দেশের বিবৃতিতেই আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের কথা উল্লেখ আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে আমার পর্যবেক্ষণ হলো গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে ঢাকার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নীতি অপরিহার্যভাবে অব্যাহত থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার গত সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণ এবং গণতন্ত্র, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য তাদের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে। লন্ডনে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন দপ্তরের মুখপাত্র গত সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচনের ফল সম্পর্কে যুক্তরাজ্য অবগত আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইইউ-বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
ওদিকে গত সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইরাক, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, নরওয়েসহ বেশ কয়েকটি দেশের পর্যবেক্ষকরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে এই মত প্রকাশ করেছেন যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর হয়েছে। ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থাভুক্ত (ওআইসি) দেশগুলো এবং জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ওদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন-পরবর্তী কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ঝিনাইদহে নৌকার এক সমর্থককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
চার জেলায় সংঘর্ষে ৩৭ জন আহত হয়েছে। ফরিদপুরের সালথায় ঈগলের কর্মীদের বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। নেত্রকোনায় নির্বাচন-পরবর্তী হামলায় প্রাণ গেছে এক যুবকের। এছাড়া গত রবিবার ও সোমবার ৯ জেলায় নির্বাচন-পরবর্তী হামলা-সংঘর্ষে আরো ৬৬ জন আহত হয়েছেন।
নতুন সংসদ ও নতুন সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। সরকারের চ্যালেঞ্জ এখন দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখা। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা। দুর্নীতি দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।