
নির্বাচন নিয়ে দেশ একটা সংকটে আছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বয়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। মঙ্গলবার খবরে প্রকাশ-সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক দেশে এখনো রয়েছে, তা অনাকাক্সিক্ষত।
গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে নির্বাচনকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এই নির্বাচনের ফেয়ারনেসকে উপলক্ষ্য করে রাজনৈতিক নেতৃত্বে যে বিভক্তি, তা কাক্সিক্ষত ছিল না। একই সঙ্গে তিনি এও বলেন, নির্বাচন ক্রেডিবল, ফ্রি ও ফেয়ার হয়েছে কি না, সেটা পাবলিক পারসেপশন। যদিও পাবলিক পারসেপশনের মানদণ্ড নেই, তারপরও পাবলিক পারসেপশন বলে যে কথা আছে, তা তাদের বিশ্বাস করতে হবে।
জনগণকে বলতে হবে যে নির্বাচনটা ফ্রি ও ফেয়ার হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সেই ফ্রি, ফেয়ার ও ক্রেডিবল ইলেকশনই করতে চাচ্ছে। পাশাপাশি সত্য স্বীকার করে তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক উপনির্বাচনগুলোয় যে অনিয়ম হয়েছে, তা কমিশন প্রতিহত করতে পারেনি। কাজেই পেশিশক্তি, কালো টাকার ব্যবহার, ব্যালট পেপারে সিল মারার যে লজ্জাজনক অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
এটা সত্য, বড় রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পর বিপরীতমুখী অনড় অবস্থানের মধ্যেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনি তফশিল ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টিকে অগণতান্ত্রিক শক্তি বিকাশের ঝুঁকি হিসাবে দেখছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ (টিআইবি) অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কোনো কোনো মহল। এ কারণেই নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ভূমিকা নিশ্চিতে উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে নির্বাচন কমিশনের বড় ভূমিকা রয়েছে। নিরপেক্ষ, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের আস্থা অর্জনে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপের উদাহরণও তৈরি করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল থেকে বেরিয়ে এসে সবাইকে সমভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে এদিন যে মন্তব্য সিইসি করেছেন, তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে শুধু ইসি নয়, রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই।
সিইসি বলেছেন, একটা দেশ বা জাতি একটা জেনারেশনকে নিয়ে থেমে থাকে না। আর তাই শাসনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, প্রজাতন্ত্র ও সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। লেভেল প্লেয়েং ফিল্ড নিশ্চিতের মাধ্যমে ফ্রি, ফেয়ার ও ক্রেডিবল ইলেকশন আয়োজনে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে তার এ প্রত্যাশা স্বাভাবিক। তবে মনে রাখতে হবে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার মূল দায়িত্বটি ইসিকেই পালন করতে হবে।
গণতন্ত্র ও নির্বাচন একে অপরের পরিপূরক। জনগণই গণতন্ত্রের প্রাণ এবং সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। আর জনগণ এই ক্ষমতা কেবল নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমেই প্রয়োগ করে। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার বেছে নেওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, তা রাজনৈতিক দল ও নেতাকর্মী, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনসহ সব অংশীজনকে উপলব্ধি করে নির্বাচন সুষ্ঠু করার স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে। সব রাজনৈতিক দল, প্রশাসন ও জনগণ নির্বাচন সফল করতে ইসিকে সহযোগিতা করবে, এটাই প্রত্যাশা।