জন্মভূমি ডেস্ক : এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবেনা- প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনায় এ বছর কেবল মাত্র নাজিরপুর উপজেলায় সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে ৭৫ হেক্টর জমিতে। নাজিরপুরের পতিত জমি ফল, ফুল ও বিভিন্ন কৃষি পণ্যের জন্য কৃষকদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে উঠছে।
ফলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার পতিত জমিতে কৃষকরা চলতি রবি মৌসুমে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করে একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন, অন্যদিকে এ ফুলের আবাদে তারা পতিত জমির হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারছেন।
এই অঞ্চলের কৃষকদের ধান চাষের পরিবর্তে পতিত জমিতে প্রতিবছর অধিক সূর্যমুখী ফুলের আবাদ বৃদ্ধি করা গেলে একদিকে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত তেলের ওপর সরকারের চাপ কমবে, তেমনি দেশীয় অর্থের সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন সূর্যমুখী বীজ ক্রয় পাইকারসহ সংশ্লিষ্টরা।
নাজিরপুরের বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, ৬-৭ ফুট লম্বা গাছের সবুজ পাতার উপরে হলুদ সূর্যমুখীর নয়নাভিরাম দৃশ্য। হেক্টরের পর হেক্টর জমিতে আবাদ করা এই হলুদ ফুল কৃষকের আশার আলো হয়ে তাকিয়ে আছে সূর্যের দিকে। চৈত্র মাসে সূর্যমুখী ফুল তার আপন মহিমায় সৌন্দর্যের বিকাশ ছড়িয়ে মানুষের মনকে রাঙিয়ে তোলে। এ ফুলের তেল অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ভোজ্যতেল। একই সঙ্গে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের জন্য এই তেল বেশ উপকারী।
কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ‘হাইসান ৩৩’ জাতের এ সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়। ফুল আসার অন্তত চার মাসের মধ্যে অর্থাৎ চলতি এপ্রিল মাসের শেষ দিকে ফুলের বীজ পেকে যাওয়ার পরপরই তা কর্তনযোগ্য হবে বলে জানান কৃষি বিভাগ। গত বছরের চেয়ে এ বছর জমির আবাদ ও কৃষকের সংখ্যা প্রায় দুইশ জন বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামীতে সূর্যমুখী আবাদে আরও অনেক কৃষক এগিয়ে আসবেন বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকলে আগামী বছর এই আবাদের পরিমাণ ও উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।
সূর্যমুখী তেলের উপাদান সম্পর্কে কৃষি বিভাগ সূত্রমতে জানায়, সূর্যমুখী ফুলের তেল অত্যন্ত পুষ্টিকর, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে রয়েছে উপকারী ওমেগা ৯ ও ওমেগা ৬, আছে ফলিক অ্যাসিড এবং শতকরা ১০০ শতাংশ উপকারী ফ্যাট। রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, পানি, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘কে’ ও মিনারেল রয়েছে, যা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্ত চাপ এবং কিডনির জন্য বেশ উপকারি।
সূর্যমুখী চাষি শনির বিশ্বাস মিন্টু জানায়, ফুল পেকে গেলে এর বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়। আর ১০০ কেজি শুকনো বীজ মেশিনে ভাঙালে তা থেকে পাওয়া যায় ৪০ থেকে ৪৫ কেজি পিওর তেল। সূর্যমুখী ফুলের গাছ কর্তনের পর পাইকারদের কাছে এসব ফুলের শুকনো বীজ ও তেল বিক্রি করেন চাষিরা।
চাষি আলিম মোল্লা আশা করছেন, এ বছর ফলন ভালো হলে পাইকারদের কাছে প্রতি মন ফুলের বীজ দুই হাজার টাকা এবং তেল করে বিক্রয় করলে প্রতি মন বিক্রয় হবে ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকা।
নাজিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, ‘এ অঞ্চলের পতিত জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ বৃদ্ধিকল্পে কৃষকদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কৃষি প্রনোদনা দেয়া হয় সরকার থেকে। এরমধ্যে রয়েছে- বীনামূল্যে বীজ, সার ও নগদ অর্থ সহায়তা। সরকার এ চাষের সঙ্গে কৃষকদের আরও উৎসাহ ও চাষে উদ্বুদ্ধকরনের জন্য কৃষি প্রনোদনা দিতে আগ্রহী বলে জানান এই কর্মকর্তা।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ডা. মো. নজরুল ইসলাম সিকদার বলেন, ‘জেলায় ধীরে ধীরে সূর্যমুখী চাষের চাহিদা বাড়ছে। দৈনন্দিন তেলের চাহিদা মেটাতে সরিষার পাশাপাশি জেলার প্রতিটি সূর্যমুখী চাষিকে সব ধরনের সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ চাষে রোগ-বালাই ও খরচ কম হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। তৃণমূল কৃষকদের মাঝে সূর্যমুখী চাষ ধীরে ধীরে প্রসার লাভ করতে শুরু করে। আগামীতে এ ফসল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।’