
স্কুল ছেড়েছে ৪০ শিক্ষার্থী
খানজাহান আলী থানা প্রতিনিধি : বৃষ্টি হলে মাথায় ছাতা দিয়ে পাঠদান করান শিক্ষকরা। আর শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির মধ্যে ভিজে মাথার উপর ও পায়ের নিচে পানি এবং রোদ হলে তাপদাহের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চলে মহানগরীর দৌলতপুর থানাধীন সেনপাড়া জহীরউদ্দীন গণবিদ্যাপীঠ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) এর আওতায় নুতন ভবন নির্মাণে এক বছর আগে বিদ্যালয়ের পুরতন সেমিপাকা টিনশেটের ভবনটি ভেঙ্গে নিয়ে যায় পুরতন ভবনের টেন্ডার পাওয়া ঠিকাদার। প্রায় এক বছরের অধিক সময় বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত মোট ১২০ জন শিক্ষার্থী রোদ-বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে শ্রেণী পাঠদান করেন। চলমান দুরবস্থার কোন সমাধান না হওয়ায় চলতি বছরে প্রায় চল্লিশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ছেড়েছে। এই অবস্থায় চরমভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে। বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দুরবস্থা দেখে থানা সহকারী শিক্ষা অফিসার দ্রুত ভবন নির্মাণ না হলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে জরুরী তহবিল থেকে অস্থায়ী সুরক্ষিত শ্রেণী কক্ষ করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেন।
বিভিন্ন সুত্রে জানাগেছে, নগরীর ফুলবাড়ী বি.কে ক্লাস্টারের আওতায় দৌলতপুর থানাধিন সেনপাড়াসহ পার্শবর্তি এলাকার মধ্যে ৫ থেকে ১০ বছর বয়েসি যে কোন শিশুদের হাতে খড়ি দিতে জহীরউদ্দীন গণবিদ্যাপীঠটি ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপির নির্বাচনি এলাকায় হওয়া বিদ্যালয়টির যাত্রা শুরুর পর সুদৃষ্টি এবং আন্তরিকতায় ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারী করণ করা হয়। শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সুনজর আর প্রতিমন্ত্রীর এপিএস আলহাজ্জ সাহাবুদ্দিন আহমেদ বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকায় বিদ্যালটিকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসুচি(পিইডিপি-৪) এর আওতায় যে ৬০৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন/অতিরিক্ত শ্রেনীকক্ষ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ওয়াশব্লক নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয় ঐ তালিকার ৫৮০ নম্বরে স্থান পায় জহীরউদ্দীন গণবিদ্যাপীঠ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। নতুন ভবন নির্মাণের অনুমোদনে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ে। নতুন ভবন নির্মাণে পুরাতন সেমিপাকা টিনশেট ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতে আহবান করা হয় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তির। টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে গত বছরের মার্চের দিকে বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি সম্পুন্ন ভেঙ্গে নিয়ে যায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। শ্রেণী পাঠদান উপযোগি ক্লাস রুম না করে পুরাতন ভবন ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পর শুরু হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি। অস্থায়ী ভিত্তিতে একচালা টিনের ছাপড়া করে চলে শিক্ষা কার্যাক্রম।
গত ২০ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেলো প্রায় চিকনচিকন বাঁশ এবং টিন দিয়ে ছাউনী দেওয়া ৪০/৪৫ ফিট লম্বা এবং ১২/১৫ফিট চওড়া একচালা টিনশেটের ছাপড়ার মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেনী মোট ৬টি ক্লাসের ১২০জন শিক্ষার্থীদের চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। হঠাৎ বৃষ্টি নামতে একচালা খোলামেলা টিন দিয়ে পানি পড়ছে শিক্ষার্থীদর গায়ে। ছাতা মাথায় শ্রেনী কক্ষে পাঠদান করাচ্ছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাসলিমা খাতুন। সামান্য বৃস্টিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বইখাতা ভিজে যাচ্ছে আর তাদের পায়ের নিচে জমছে পানি। পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র রুবেল ও আব্দুল্লাহের জানায়, বৃষ্টি হয়ে বইখাতা আর জামাকাপুড় ভিজে বাড়ী যেতে হয়। আর রোদের সময় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়। এই অবস্থায় আমাদের পিতা-মাতা বিদ্যালয়ের আসতে দিতে চায়না। বিষয়টি ফুলবাড়ী বি.কে ক্লাস্টারের থানা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল আলমকে অবহিত করলে তিনি তাৎক্ষনিক বিদ্যালয়ে ছুটে এসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। এ সময় তিনি জানান, সম্প্রতি আমি ফুলবাড়ী বিকে ক্লাস্টারে জয়েন্ট করেছি। বিদ্যালয়ের শ্রেনী কক্ষ সংকটের বিষয়টি অবহিত হয়ে ইতোমধ্যে আমি উর্ধতন কর্মকর্তা থানা শিক্ষা অফিসার মো. শাহাজাহান স্যারের সাথে আলোচনা করেছি। তিনি আমাকে জানিয়েছেন বিদ্যালয়টির ভবনের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে তালিকা প্রেরণ করেছি সেই তালিকায় এক নম্বরে আছে এটি। ভবন নির্মাণের স্যাংশন হলে আগে এই বিদ্যালয়ের কাজ হবে। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম শিক্ষার্থীদের দুরবস্থার চিত্র দেখে বলেন দ্রুত সময়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা না হলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে জরুরী তহবিল থেকে অস্থায়ী সুরক্ষিত শ্রেণী কক্ষ দেওয়ার চেষ্টা করবো।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাসলিমা খাতুন জানালেন, এক বছর পুর্বে পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়ার সময় ঠিকাদারের কাছ থেকে ১২ ফিট বাই ১০ফিটের একটি টিনের কক্ষ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে বিদ্যালয়ের বই-খাতা, কাগজপত্র এবং শিক্ষকদের কোনরকম একটু বসার জায়গা করি। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো না থাকায় শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চরম ভাবে বিঘ্ন সৃ্িষ্ট হচ্ছে। ফলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদেরকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে অপরাগত প্রকাশ করছে। চলতি বছরে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ত্যাগ করেছে।