
ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ
সরকার পতনের দাবিতে অনড় বিএনপি
জন্মভূমি ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচন অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে আন্দোলন করছে বিএনপি। দেশজুড়ে বিএনপির আন্দোলনের কাউন্টার দিতে প্রস্তুত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সেপ্টেম্বর মাসজুড়েই রাজনীতি উত্তাপ ছড়াবে।
চলতি মাসের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ ‘পুরোদমে নির্বাচনি যাত্রা’ শুরু করেছে। মাসের প্রথম দিন ছাত্রলীগের ছাত্র সমাবেশ করেছে। একইদিন বিএনপি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালিতে বড় জমায়েত করে। এছাড়া এ মাসেই সরকার পতনের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলন বেগবান করবে বিএনপি। প্রধান দুই দলের অনড় অবস্থান এবং কর্মসূচি ঘিরে রাজনীতির পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
॥ নির্বাচনী যাত্রা শুরু করছে আওয়ামী লীগ ॥
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে আরও জোরালো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই ‘পুরোদমে নির্বাচনি যাত্রা’ শুরু করেছে দলটি। এরই অংশ হিসাবে মাসের প্রথম দিনেই ছাত্র সমাবেশের মধ্য দিয়ে বড় ধরনের শোডাউন করে ছাত্রলীগ। ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহাসমাবেশ করে নিজেদের শক্তি জানান দেয় দলটি। এছাড়া মাসজুড়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প অর্থাৎ মেগা প্রজেক্টের উদ্বোধন ঘিরেও কয়েকটি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনি যাত্রার অংশ হিসাবে খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ হবে। জেলা পর্যায়েও পালিত হবে এসব কর্মসূচি।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা হতে পারে। এমন ধারণা থেকেই দলের হাইকমান্ড একাধিকবার দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ‘অতীতে বিএনপি নেতারা সহিংস কর্মকাণ্ড করে দেশ ও মানুষের ক্ষতি করেছে। ভবিষ্যতে কেউ যেন আর কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতার মাধ্যমে জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছেন তারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, গত কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের তিনটা বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা এবং নিদেজের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব থাকলে সেগুলো দূর করা। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি, হত্যা, নির্যাতনের চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরা। আর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কি উন্নয়ন হয়েছে সেগুলো তুলে ধরা। তিনি আরও বলেন, এই বিষয়গুলো সামনে রেখে আমরা আগস্টজুড়ে কাজ করেছি। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর আমাদের এ কার্যক্রম চলবে। এছাড়া প্রতিটা বিভাগে একটা করে সভা হবে। পরে জেলা পর্যায়েও আমরা সভা করব।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতে গণতন্ত্রের পথেই আমাদের হাঁটতে হবে। আমরা আমাদের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে জানাতে চাই ও সম্পৃক্ত করতে চাই। ২ তারিখে সুধী সমাবেশ করে এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করা হয়েছে। যার সুফল ঢাকাসহ দেশবাসী পাবে। এই বিষয়গুলো আমরা জণগণের সামনে তুলে ধরতে চাই।
২ সেপ্টেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন শেষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সুধী সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। এছাড়া ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ওই কর্মসূচি ঘিরে চট্টগ্রামে সুধী সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর বাইরে আগারগাঁও থেকে মতিঝিলে মেট্রোরেলের উদ্বোধন, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প, কক্সবাজার-দোহাজারী রেলপথ নির্মাণ, শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ এবং আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এসব উদ্বোধন উপলক্ষ্যেও বড় গণজমায়েত ঘটাতে চায় আওয়ামী লীগ।
॥ আন্দোলনের গতি বাড়াবে বিএনপি ॥
সরকার পতনের একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপির নেতৃত্বে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। গতি বাড়াতে নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে সাংগঠনিক শক্তি দেখাতে চায় বিএনপি। সেজন্য সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই জোরদার আন্দোলনে নামছে দলটি। এরই অংশ হিসাবে ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি করে দলটি। যদিও প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর র্যালীতে দলীয় কোন্দল, আওয়ামী লীগ ও পুলিশী বাধা সব মিলিয়ে বেশকয়েকটি অপ্রিতীকর ঘটনা ঘটে।
মূলত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে মাঠ তৈরির কাজ শুরু করছেন নেতারা। ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে রাজধানীতে বড় ধরনের জমায়েতের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। সাংগঠনিক জেলায়ও একই ধরনের বার্তা দেওয়া হয়েছে। এদিকে সরকারবিরোধী সমমনা ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিয়ে ছাত্রঐক্য গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আবারও যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে। এর আগে র্যালি ছাড়াও নানা ইস্যুতে কয়েকটি কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এর মধ্যে সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আবারও বৈঠক করবে দলটি। গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সেই বৈঠকে চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে দলের নেতাদের ভাবতে বলা হয়। প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনের শুরুতে গণমিছিল, আদালত চত্বরে অবস্থান, সমাবেশ, পদযাত্রার মতো কর্মসূচির প্রস্তাব রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সরকার পতনের একদফা দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে। সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তি ও দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে আছি; শান্তিপূর্ণভাবে আছি। তবে পরিবেশ-পরিস্থিতি বলে দেবে, আমরা কখন কী করব।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘ইতিহাস বলে জনগণের দাবি সফল হতে বাধ্য। আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। এখন আরেকটু ধাক্কা দিলেই সরকার পড়ে যাবে। সময়মতোই আমরা সেই ধাক্কা দেব। জনগণের বিজয় হবেই।’
এদিকে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে সরকারবিরোধী সমমনা ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিয়ে ছাত্রঐক্য গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে ১৯ সংগঠন এ নিয়ে বৈঠকও করেছে। প্রাথমিকভাবে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’সহ কয়েকটি নাম প্রস্তাব এসেছে। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা রয়েছে সংগঠনগুলোর। সমমনা ছাত্র সংগঠনের বাইরে ছাত্র ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করছে ছাত্রদল।