
শহিদ জয়, যশোর
সোনা পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে পরিণত হয়েছে যশোরের বিভিন্ন সীমান্তের অবৈধ পকেট ঘাটগুলো। ভারতে সোনর চাহিদা এবং দাম বেশি হওয়ায় এ সীমান্ত পথে স্বর্ণ পাচার করছে আন্তর্জাতিক ও দেশী পাচারকারীরা। সীমান্তে সোনা পাচারে সবার উপরে রয়েছে শার্শা উপজেলার অন্ততঃ ২৫টি সিন্ডিকেট সোনা পাচারের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তবে, সব সোনার সিন্ডিকেটকে হিস্যা দিতে হয় আন্তঃ দেশীয় সোনার ডিলার নাসির-রমজান ও দেব কুমারকে।
সীমান্তের সূত্রগুলো বলছে, প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ সোনা যশোরের বিভিন্ন ঘাট দিয়ে ভারতে পাচার হয়। শার্শা উপজেলায় যে সব সিন্ডিকেট আছে তাদের অধিকাংশের মূল মালিক হচ্ছে আন্তর্জাতিক সোনা পাচার চক্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মূল হোতা আলোচিত নাসির, রমজান, দেব কুমার এবং বাদশা গং। শুধুমাত্র এই চার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিদিন পাচার হয় বিপুল পরিমাণ সোনা। এছাড়াও সাদীপুর, দৌলতপুর এবং বড়আঁচড়া রেল লাইন দিয়েও বিপুল পরিমাণ সোনা পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সোনা পাচারের এসব সিন্ডিকেটের অঘোষিত মালিকরা রয়েছে বহাল তবিয়তে। এই চক্রের খুঁটির জোর বেশি থাকার কারণে এদের টিকিটিও কেউ স্পর্শ করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ার পাশাপাশি ঘাটে-ঘাটে বিপুল পরিমাণ হিস্যা দেয়ার কারণে এবং সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকায় প্রতিদিন পাচার হচ্ছে কোটি-কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ সোনার বার।
সীমান্তের বিভিন্ন সূত্র জানায়, সোনা পাচারের অঘোষিত স¤্রাট রমজান, আলোচিত নাসির, দেব কুমার, জসিম এবং মহব্বত ছাড়াও রঘুনাথপুরের ফেন্সি স¤্রাট বাদশা এখন মাদক ও অস্ত্র পাচারের পাশাপাশি নাসির-রমজানের সোনা পাচারের একছত্র অধিপতি বনে গেছে। বাদশার সিÐিকেটের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে সোনা পাচার হচ্ছে এবং অস্ত্র-মাদক আসছে বলে সূত্রগুলি নিশ্চিত করেছে। তাছাড়া রঘুনাথপুরের আখের, সাদীপুরের আলোচিত বাবু মেম্বার ও কামাল, ছোট-আঁচড়ার মানি, হায়দার, রাকেশ, আশা ও জাকির, পুটখালীর রেজা ও জিয়া, গাতীপাড়ার করিম ও শহিদুল, ছোটআঁচড়ার বকুল, পুটখালীর পলাশ, আরিফ, ইকবাল ও আলমগীর, কাঠুরিয়ার খোকা ও ছোট-আচড়ার খায়ের, বড়আঁচড়ার জসিম ও কামাল, পুটখালীর মিলন ও জামাল, দুর্গাপুর রোডের জিয়া, ধান্যখোলার বাচ্চু এবং ঘিবার শাহজাহানের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ সোনা ভারতে পাচার হচ্ছে। তবে যশোরের শার্শা, বেনাপোল ও চৌগাছার তাবদ সীমান্ত দিয়ে যত সোনা যায়, পুটখালী সীমান্ত দিয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি সোনা ভারতে পাচার করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঘাটমালিক নাসির, রমজান ও দেবকুমার সিন্ডিকেটএবং তাদের অধীন অন্ততঃ ৭টি পকেট ঘাট দিয়ে প্রতিদিন তারা দ্বিগুণ পরিমাণ সোনা পাচার করে। সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ম্যানেজ করে চলে সোনা পাচারের রমরমা ব্যবসা। ঢাকা থেকে থেকে অন্ততঃ চার দফা হাত বদল হয়ে সোনার বারগুলো পাচার করা হয় ভারতে। সূত্রগুলো আরও জানায়, ঢাকা থেকে ট্রেন অথবা বাসে করে একটি চক্র সোনার বার বিভিন্ন ভাবে নিয়ে আসে যশোরের বিভিন্ন পয়েন্টে। পরিবহন কাউন্টার অথবা তাদের নির্ধারিত স্থানে স্বর্ণের চালানটি হাত বদল হয়ে চলে যায় স্থানীয় এজেন্টের হাতে। এরপর স্থানীয় এজেন্টরা সেই স্বর্ণের চালান নিয়ে যায় পুটখালী, গাতীপাড়া, বড়আঁচড়া, রঘুনাথপুর, সাদীপুর, শিকারপুর, দৌলতপুর, ঘিবা সীমান্তের নির্ধারিত কোনও বাড়িতে। সেখান থেকে সীমান্ত পার হয়ে ভারতের সবচেয়ে বড় ডিলার অপু, বস্ গৌতম, ছোট গৌতম, পিন্টু, বরুণ, ডাকুসহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের হাতে সোনার চালান পৌঁছে দেওয়া হয়।
সূত্রটি আরও জানায়, অদৃশ্য কারণে পুলিশ সচরাচর সোনার চালান আটক করেনা। এ ব্যাপারে বিজিবি ও র্যাবের তৎপরতা বেশি। এরপরই রয়েছে র্যাবের অভিযানের ভয়। তাই পাচারকারী চক্রের সদস্যরা বিজিবির হাত থেকে রক্ষা পেতে বেছে নিচ্ছে নতুন নতুন কৌশল। বিভিন্ন ভাবে সোনার চালান নিয়ে সীমান্তে পৌঁছে দিচ্ছে এই চক্রের ক্যাডাররা। এছাড়া, ইতিপূর্বে পাসপোর্টধারী যাত্রীরা ঢাকা থেকে স্বর্ণ নিয়ে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে। ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধের কারণে পাসপোর্ট যাত্রীদের মাধ্যমে বর্তমানে সোনা পাচার কমলেও থেমে নেই বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। মেডিকেল ভিসা এবং সিএন্ডএফ ভিসা নিয়েও সংঘবদ্ধ চক্রটির অনেক সদস্য পাচার করছে সোনার ছোট-বড় চালান। এ ছাড়া কিছু কিছু সিএন্ডএফ কর্মচারীও সোনা পাচারের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সিএন্ডএফ কর্মচারীরও পাসপোর্ট যাত্রীর কাছ থেকে কয়েক দফায় স্বর্ণের চালান আটক হয়েছে। ঢাকার বড় কয়েকটি সোনার দোকান থেকে এসব স্বর্ণের চালান পাচারকারীদের কাছে বিশেষ চুক্তির মাধ্যমে তুলে দেয়া হয়। দুবাই থেকে বিভিন্নভাবে এসব সোনার চালান এসব ব্যবসায়ীদের ডেরায় পৌছায়। এরপর বিভিন্নভাবে পাচার করা হয় ভারতে। এ বিষয়ে যশোরের বিভিন্ন সীমান্তবাসীর অভিযোগ, সোনা পাচারকারীরা সবাই পরিচিত। সব ঘাট ম্যানেজ করেই এই চক্র প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ সোন াভারতে পাচার করছে। তাদের আটকের কোন উদ্যোগ নেই বলেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সোনা পাচারকারীরা।
সূত্রটি আরও জানায়, যশোরের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা খেকে যত সোনা আটক হয়েছে তার অধিকাংশ আটক করেছে বিজিবি। সর্বশেষ সোনার চালান আটক হয় শার্শা উপজেলার বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী সীমান্ত থেকে ২০ পিস স্বর্ণের বারসহ নাসির-জসিম সিন্ডিকেটের ২ পাচারকারীকে আটক করেন বিজিবি সদস্যরা। গত ১৪ ফেব্রæয়ারি সকালে তাদের আটক করা হয়। আটককৃরা হলো, নাসিরের ক্যাডার বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে লিটন হোসেন (২৫) ও একই এলাকার আজিজুর রহমানের ছেলে হাফিজুর রহমান (২৮)। বিজিবি জানায়, স্বর্ণ পাচারের গোপন খবরে, বেনাপোল বালুন্ডা কেষ্টপুর গ্রামস্থ পাকারাস্তার উপর থেকে বিজিবি সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ২০ পিস স্বর্ণের বার (ওজন ৩.৮৯১ কেজি), ১টি মোটর সাইকেল, ৩টি মোবাইল ফোন ও নগদ ৬,৩৯০ টাকাসহ তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃত স্বর্ণের বার এবং অন্যান্য মালামালের আনুমানিক সিজার বাজার মূল্য- দুই কোটি উনপঞ্চাশ লক্ষ একান্ন হাজার নব্বই টাকা) বলে জানায় বিজিবি।
এর আগে, গত ১৩ জানুয়ারি। এদিন যশোরের শার্শার শ্যামলাগাছি এলাকা থেকে এক কেজি ১৬৫ গ্রাম ওজনের ১০টি স্বর্ণের বারসহ ইসমাইল হোসেন (৩৮) নামের এক পাচারকারীকে আটক করেছেন বিজিবি সদস্যরা। ইসমাইল বেনাপোল পোর্ট থানার নামাজ গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে। তার আগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর যশোর-বেনাপোল সড়কের নতুনহাট এলাকায় চালিয়ে বিজিবি সদস্যরা বেনাপোলগামী একটি মোটরসাইকেলের দু’চালকের শরীর তল্লাশি করে উদ্ধার করে পাঁচ কেজি আটশ’ ৪০ গ্রাাম ওজনের ৫০টি সোনার বার। এসময় সোনার বারসহ তৌহিদুল ইসলাম (৪৩) ও ইমরান হোসেন (৩৫) নামে দুই পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি। একই দিন পুটখালী সীমান্তের মসজিদ বাড়ি পোস্ট থেকে ১২টি সোনার বারসহ কামরুল হাসান (২০) নামে একজনকে আটক করেন ২১ বিজিবি সদস্যরা। আটক কামরুল হাসান বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী উত্তরপাড়া গ্রামের কুদ্দুস আলীর ছেলে। গত বছরের ১৮ নভেম্বর যশোরের বেনাপোল পুটখালী সীমান্ত থেকে মোটরসাইকেল সহ এক কেজি ৪০২ গ্রাম ওজনের ১২ পিচ সোনার বার দুই পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি। আটককৃতরা হলো, বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী (পশ্চিমপাড়া) গ্রামের মোক্তার আলীর ছেলে লিটন মিয়া (২৮) ও একই এলাকার আলী কদর মন্ডলের ছেলে শাহজাহান মন্ডল (৩২)।
গত বছরের ১৭মে যশোরের চাঁচড়া পুলিশ চেকপোস্টের সামনে বেনাপোলগামী যাত্রী বাসে অভিযান চালিয়ে এক কেজি ১৬৩ গ্রাম ওজনের ১০টি সোনার বার উদ্ধার করে। এসময় সুমন মিয়া (৩০) নামে এক পাচারকারীকে আটক করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের সদস্যরা। গত বচরের ১ এপ্রিল দুপুরে যশোরের পুটখালী সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় দুই কেজি ওজনের ১৫টি সোনার বারসহ রানা হামিদ (২৬) নামের একজনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আটক রানা হামিদ বেনাপোল পোর্ট থানার খলসী গ্রামের আব্দুল গফফারের ছেলে। গত ১৬ ফেব্রæয়ারি যশোর-মাগুরা সড়কের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কার্যালয়ের সামনে ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা গামী একটি যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে ৩২ পিস সোনার বিস্কুটসহ দুই যুবককে আটক করেছে র্যাব-৬ খুলনার সদস্যরা।
গত ২২ ডিসেম্বর ভারতে পাচারের সময় ২০ পিস সোনারবারসহ এক সোনা পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি। যশোর শহরের পৌরপার্কের সামনে থেকে ওই পাচারকারীকে আটক করা হয়। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের মূল্য এক কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর যশোর শহরের পৌর পার্ক এলাকা থেকে ২০টি সোনার বারসহ ইমাদুল হোসেন (২৬) নামে এক যুবককে আটক করে বিজিবি। আটক ইমাদুল বেনাপোলের উত্তর কাগজপুকুর এলাকার মো. আসলাম হোসেনের ছেলে। একই বছরের ২০ ডিসেম্বর যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের জন্য ঢাকা থেকে আনা প্রায় ১১ কেজি ওজনের ৯৪টি সোনার বার উদ্ধার এবং তিনজনকে আটক করেছে বিজিবি। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের নতুনহাট ইটভাটা সংলগ্ন এলাকা থেকে এসব সোনার বার এবং প্রাইভেটকারসহ তাদের আটক করেবিজিবি। আটকরা হচ্ছেন-যশোরের শার্শা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৩৮), আমলায় গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে ইয়াকুব আলী (২৮) ও কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার নলচক গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (২৩)। এর আগে গত ১ ডিসেম্বরযশোর শহরতলীর বাহাদুরপুর থেকে সাড়ে তিন কেজি ওজনের ৩০টি সোনার বারসহ তিনজনকে আটক করে বিজিবি। বেনাপোলগামী ফেম পরিবহনের একটি বাস তল¬াশি করে তাদের আটক করা হয়। ২০২০ সালের ২৯ আগস্ট যশোরের শার্শা উপজেলায় সাদিপুর গ্রামের দুঃখ মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রায় সোয়া ৯ কেজি সোনা উদ্ধার এবং তার স্ত্রী বানেছা খাতুন (৩৫)কে আটক করেন বিজিবির সদস্যরা। ওই বছরের ৮ ফেব্রæয়ারি যশোরের সীমান্ত শহর বেনাপোলে ৪০টি সোনার বারসহ ইকবাল (৩০) ও রনি (২৮) নামে দু’যুবককে আটক বিজিবি। বেনাপোল বড় আচড়া টার্মিনাল মোড় থেকে তাদের আটক করে বেনাপোল বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা। বড় আঁচড়া টার্মিনাল পাড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ইকবালকে। রনি একই এলাকার আজিজুল মুন্সীর ছেলে ও চিহ্নিত চোরকারবারী গোলদারের ভাই। ২০১৯ সালের ২০ মার্চ যশোরের শার্শা উপজেলার আমড়াখালি চেকপোস্ট এলাকা থেকে ভারতগামী এক পাসপোর্টধারী যাত্রীর কাছ থেকে ২০টি সোনার বার উদ্ধার করেছে বিজিবি। উদ্ধার হওয়া সোনার ওজন দুই কেজি ছয়শ’ গ্রাম, যার আনুমানিক মূল্য এক কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। দেশ ট্রাভেলেসের একটি বাসে তল্লাশিকালে এ সোনার বার জব্দ করা হয়।
সাম্প্রতিককালের সব চেয়ে বড় সোনার চালান আটক হয় ২০১৮ সালের ৯ ও ১০ আগস্ট। এই দু’দিনে পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে শার্শার নারিকেলবাড়িয়া ও শিকড়ি এলাকা থেকে প্রায় ৭৫ কেজি সোনার বারসহ তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৪৯ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা এই অভিযান চালান। উদ্ধার হওয়া সোনার দাম ৩৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আটক তিন ব্যক্তি হলেন শার্শা উপজেলার শিকারপুর গ্রামের মো. মহিউদ্দিন, বেনাপোলের সফুরা খাতুন ও ইসরাফিল।
সূত্র বলছে, বিভিন্ন সময় স্বর্ণের এসব চালান ধরা পড়ায় পাচারকারীরা কৌশল বদল করে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ভারতে সোনার দাম বেশী হওয়ায় এ সীমান্ত পথে পাচার করছে আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালানীরা। ফলে এ সুযোগে চোরাচালানীরা প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ সোনা পাচার অব্যাহত রেখেছে। তবে রাঘব-বোয়ালরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ারবাইরে। সীমান্তের সূত্রগুলো বলছে, এসব সোনার অধিকাংশের মালিক রমজান, নাসির, দেব এবং মহব্বত সহ সীমান্তের বিভিন্ন সিন্ডিকেট।
এ বিষয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার নবাগত ওসি কামাল হোসেন ভুঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নতুন এসেছি। শুনেছি এই সীমান্ত দিয়ে প্রচুর পরিমাণ সোনা পাচার হয়। আমি আইনগত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখছি এবং এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে থানার সিনিয়রদের সাথে কথা বলছি।
এ ব্যাপারে শার্শা থানার ওসি মামুন খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ সোনার চালান আটক করে না একথা ঠিক নয়। তবে, বদনামের ভয়ে পুলিশ সোনার চালান ধরতে উৎসাহ দেখায় কম। কারণ, একটি সোনার চালান আটকের পর প্রচার হয় আটককৃত সোনার চেয়ে অনেক বেশি আটকের। এতে, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। কখনও কখনও অপরাধ না করেও শাস্তির থড়গ নেমে আসে সোনা আটককারী কর্মকর্তা সহ থানা কর্তার উপর। বিনা দোষে শাস্তিও ভোগ করতে হয়। এ কারণে, পুলিশ সোনার চালান আটকে বেশি আগ্রহ দেখায় না।
এ ব্যাপারে যশোর বিজিবি ৪৯ ব্যাটেলিয়নের কমান্ডিং অফিসার (সিও) শাহেদ মিনহাজ সিদ্দীকী বলেন, যে পরিমাণ সোনা আটক হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি পাচার হচ্ছে আন্দজে এমনটা বলা যাবে না। তবে এমনটি আমরা ধারনা করে থাকি। একর পর এক হাত বদলের কারণে ক্যারিয়ারদের আটক করা সম্ভব হলেও গডফাদারদের আটক করা সম্ভব হয় না। তবে, বিজিবি সদস্যরা সোনা পাচারকারী এবং তাদের গড ফাদারদের আটকের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।