ডেস্ক নিউজ : অসুস্থ বাবার সেদ্ধ বুট (মটরশুঁটি) ব্যবসার হাল ধরতে গিয়ে শিক্ষাজীবন থেকে ছিটকে গেল ১৩ বছরের সায়েম। হতদরিদ্র বাবার বড় ছেলে সায়েম কোনোমতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর ভর্তি হওয়া হয়নি। অসুস্থ বাবার ওষুধ আর সংসারের হাল ধরতে গিয়ে শিক্ষাজীবনের ইতি টানতে হয়েছে তাকে। কিন্তু ১৩ বছরের এই শিশুর স্কুলে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা। পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হতে চায় সে।
শিশুটির পুরো নাম মেহেদী হাসান সায়েম। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আড্ডা গ্রামের জহির মিয়ার ছেলে। এখন পার্শ্ববর্তী বেওলাইন গ্রামে বসবাস করেন তারা। স্ত্রী ও বড় ছেলে সায়েম ছাড়াও ছয় বছরের আরেকটি ছেলে শিশুকে নিয়ে জহির মিয়ার পরিবার।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সায়েমের বাবা জহির একজন দিনমজুর ছিলেন। ২০১৪ সালে হঠাৎ ব্রেনে সমস্যা দেখা দেয় তার। তারপর থেকে এই অসুস্থতা বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। আগের মতো দিনমজুরের কাজ করতে পারেন না। নিজের ওষুধের খরচ, স্ত্রী ও দুই সন্তানের সংসার নিয়ে বিপাকে পড়েন জহির মিয়া। পরে আর কোনো উপায় না পেয়ে নেমে পড়েন সেদ্ধ মটরশুঁটিটে বিভিন্ন মসলা মিশিয়ে বিক্রি করতে। কয়েক বছর করার পর আর শরীর চলে না জহির মিয়ার। বাধ্য হয়ে বড় ছেলে সায়েমকে নিয়ে ব্যবসা চালু রাখেন। পাশের আড্ডা বাজারসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে বুট (সেদ্ধ মটরশুঁটি) বিক্রি করে জীবনযাপন করছেন তারা।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বেওলাইন এলাকায় সায়েমের সঙ্গে কথা হলে সে ঢাকা পোস্টকে বলে, বছর তিনেক আগে লেখাপড়া বন্ধ করে দেয় সে। অসুস্থ বাবা, ছোট একটা ভাই আর মাকে নিয়ে সংসার চলে না তাদের। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি না হয়ে বাবার কষ্ট লাঘব করতে দায়িত্ব কাঁধে নেয় সে।
বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবসা চালায়, বেচাকেনা করে সায়েম। অসুস্থ বাবা দাঁড়িয়ে থাকেন পাশে। দিনে ৮০০-৯০০ টাকা বেচাকেনা হয়। তাতে ৩০০-৪০০ টাকা লাভ হয়। লাভের এই টাকা দিয়ে বাবার ওষুধ কিনতে আর সংসারের চাল-ডাল কিনতেই সব শেষ হয়ে যায়।
কিন্তু এ জীবনটা ভালো লাগে না সায়েমের। বাকি ৮-১০ জন শিশুর মতোই স্কুলে যেতে চায় সে। চোখের সামনে দিয়ে বন্ধুরা স্কুলে যায়। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য দেখে। এটা তার ভালো লাগে না। আবার ব্যবসা ছেড়ে দিলে বাবার ওষুধ কিনবে কীভাবে, সংসারের খরচ চলবে কীভাবে, সে চিন্তাও তাড়া করে ছোট্ট সায়েমকে।
সায়েমের বাবা জহির মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, খুব কষ্ট হয় ভাই। ব্রেনের সমস্যা। সবসময় আমার ওষুধ খেতে হয়। সময়মতো ওষুধ না খেলে অসুস্থ হয়ে যাই। দুইটা ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। চোখের সামনে ছেলেটার জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তা দেখেও কিছুই করতে পারছি না। সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা জোটেনি এখন পর্যন্ত। ছেলেটার স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ আছে। কিন্তু সে স্কুলে চলে গেলে সংসারটা থেমে যাবে, না খেয়ে মরব আমরা। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এসে নিজের ওষুধ আর ছেলেটার পড়ালেখা করার সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নু এমং মারমা মং বলেন, আমি এ বিষয়টি এখনই জানলাম। খোঁজ নিয়ে শিশুটি এবং তার পরিবারের জন্য যা করার তার সবই করা হবে।