জন্মভূমি রিপোর্ট
যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন ও হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় খুলনা সোনাডাঙ্গা থানার সাবেক এস আই সোবহান মোল্লার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক আবদুস ছালাম খান এই পরোয়ানা জারি করেন। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সোবহান মোল্লার দ্বিতীয় স্ত্রী ফারজানা বিনতে ফাকের এই মামলা করেছিলেন। সোবহান মোল্লা বর্তমানে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত রয়েছেন।
বাদি পক্ষের আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম জানান, প্রথম স্ত্রীর তথ্য গোপন করে ২০২০ সালের ১২ মে ফারজানা বিনতে ফাকের নামের এক কিশোরীকে বিয়ে করেন সোবহান। সোবহান তখন নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় কর্মরত ছিলেন। বিয়ের পর থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করতে থাকেন তিনি। একাধিকবার স্ত্রীকে মারপিট করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
উপায় না পেয়ে ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ফারজানা বিনতে ফাকের। আদালত পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত নিয়ে আদালতে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার আদালত সোবহান মোল্লার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এর আগে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দ্বিতীয় স্ত্রী ফারজানা বিনতে ফাকের (ক্ষমা) বলেছিলেন, এস আই সোবহান মোল্লা সোনাডাঙ্গা থানায় কর্মরত থাকাকালীন তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১২ মে তাকে প্রলুব্ধ করে নগরীর ১৮নং ওয়ার্ডের কাজী অফিসে নিয়ে ৩ লাখ টাকা দেন মোহর নির্ধারণ করে বিয়ে করেন। কিন্তু পরে তিনি জানতে পারেন সোবহান মোলার প্রথম স্ত্রী ও দু’টি সন্তান রয়েছে। তখন তিনি এম এম সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী হওয়ায় তার প্রতারণার বিষয়টি তিনি ধরতে পারেননি। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হলে তার ওপর নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
এক পর্যায়ে এসআই সোবহান মোলা তাকে কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করতে প্ররোচনা দেন। এ কারণে তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে ২০২০ সালের ৩ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এমনকি তাদের বিয়ের প্রমাণ নষ্ট করতে তিনি রেজিস্ট্রার দেখার অজুহাতে ১৮নং ওয়ার্ডের কাজী অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রারের ৬নং ভলিয়মের ১৪নং পাতা ছিঁড়ে ফেলেন। প্রতিবাদ করলে নিকাহ রেজিস্ট্রারকে (কাজী) জীবননাশের হুমকি দেন। এ বিষয়ে কাজীর সহকারী সোনাডাঙ্গা থানায় জিডি করতে গেলে তা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে কাজী খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। যদিও থানার ওসির মধ্যস্থতায় ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর আবারও তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়।
স্ত্রী ফারজানা বিনতে ফাকের আরও অভিযোগ করেন, তার সুখের জন্য পিতা-মাতা ৫ লাখ টাকার মালামাল দেয়। কিন্তু তারপরও এসআই সোবহান ইন্সপেক্টর হিসেবে প্রমোশনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষের ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। মেয়ের সংসারের সুখের জন্য তার পিতা দু’ দফায় ১০ লাখ করে তাকে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দিতে বাধ্য হন। এরপরও তার কাছে আরও ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করা হয়। কিন্তু তার পরিবারের পক্ষে আরও যৌতুক দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় বিভিন্ন সময় তাকে নির্যাতন করা হয়। এমন কি কোলের শিশু পুত্রের দুধ কিনে দেওয়ার কথা বলে সোনাডাঙ্গা থানায় ডেকে নিয়েও তাকে পিস্তল দিয়ে আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া এবং আসামি পেটানোর লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। এতে তার মাথায় ১২টি সেলাই দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন ফারজানা বিনতে ফাকের।
এসব ঘটনায় তিনি স্বামী এস আই সোবহানের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। এ খবর জানতে পেরে ওইদিনই সোবাহান পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং তার পিতার কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে, না দিলে হুমকি দেয়। এ ঘটনায়ও তিনি ২৭ ডিসেম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী সোনাডাঙ্গা) আদালতে মামলা দায়ের করেন।