এম সাইফুল ইসলাম
পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে নির্মাণ সামগ্রীর দাম। নির্মাণ সামগ্রীর অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে চলমান কাজ এগিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন ঠিকাদাররা। লোকসানে পড়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় সরকারি ক্রয়বিধি (পিপিআর) অনুযায়ী বর্তমানে চলমান ঠিকাদারি কাজগুলোর মূল্য সমন্বয় এবং নতুন কাজের ক্ষেত্রে রেট শিডিউল হালনাগাদ করার দাবি জানিয়েছে ঢাকার ঠিকাদাররা।
সরকারের ঠিকাদারদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১. বর্তমান ফিক্সড রেটে চলমান কাজগুলোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় প্রজ্ঞাপন জারি করে পিপিআর সূত্র অনুযায়ী দাম সমন্বয় করতে হবে। ২. বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী পিডবিøউডিসহ সব দপ্তরের রেট শিডিউল হালনাগাদ করতে হবে। প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত পানি ও বিদ্যুৎ সংক্রান্ত খরচ রেট শিডিউলে যুক্ত করতে হবে। ৩. নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিটি নির্মাণকাজের প্রাক্কলনে প্রাইস কন্টিনজেন্সির আওতায় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। ৪. আমদানি নির্ভর নির্মাণ সামগ্রীর কাঁচামালের আমদানি শুল্ক সাময়িকভাবে হলেও স্থগিত করতে হবে। ৫.চলমান নির্মাণ চুক্তিগুলোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন উন্নয়ন নির্বাহী প্রতিষ্ঠান যেমন: গণপূর্ত, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য একটি মূল্য সংশোধন সেল তৈরি করে চুক্তিবদ্ধ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ এবং নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
নির্মাণ উপকরণ যেমন, লোহা এবং লোহাজাতীয় দ্রব্য, সিমেন্ট, পাথর, ইট, বিটুমিন, ডিজেল, অ্যালুমিনিয়াম, বিল্ডিং ফিনিশিং আইটেমসহ প্রায় সব নির্মাণসামগ্রীর মূল্য অস্বাভাবিক ও লাগামহীনভাবে বৃদ্ধিতে চলমান কাজ চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে ১ টন রড কিনতে গেলে ৮৫ হাজার থেকে ৮৮ হাজার টাকা গুনতে হয়। দুই বছর আগে যেখানে ৬৪ হাজার টাকায় শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১ টন রড কেনা যেত। কিন্তু গত দুই সপ্তাহেই প্রতি টন রডের দাম ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সব মিলিয়ে দুই বছরে রডের দাম বেড়েছে সাড়ে ৩৭ শতাংশ।
রডের পাশাপাশি ইট, পাথর, বালু, অ্যালুমিনিয়াম, পিভিসি পাইপ-ফিটিংস ইত্যাদির দামও বেড়েছে। ফলে অবকাঠামো নির্মাণের খরচ বাড়ছে।
বর্তমানে বাজার দর হলো, সিমেন্ট ব্যাগ প্রতি বর্তমান দাম ৪১০ থেকে ৪৬০ টাকা যা গত বছর ছিল ৩৯০ থেকে -৪২৫ টাকা। বিটুমিন ড্রাম প্রতি বর্তমান মূল্য ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা যা গত বছর ছিল ৫ হাজার টাকা। কয়লা বর্তমান মূল্য ২২-২৪ হাজার টাকা যা গত বছর ছিলো ৮ হাজার টাকা। বালু ঘনফুট প্রতি বর্তমানে ৩০ টাকা যা গত বছর ছিল ১৫ টাকা। সিলেট বালু ঘনফুট প্রতি ৫৫ টাকা যা গতবছর ছিল ৩৫ টাকা, পাথর বর্গফুট প্রতি বর্তমান মূল্য হলো ২৪০ টাকা যা গত বছর ছিল ১৮০ টাকা। ইট প্রতি পিস বর্তমান মূল্য ১০ থেকে ১২ টাকা যা গত বছর ছিল ৮ থেকে ১০ টাকা। থাই বর্গফুট প্রতি বর্তমান মূল্য ৪২০ টাকা যা গত বছর ছিল ২৮০ টাকা। গ্রিল ও রেলিং বর্গফুট প্রতি বর্তমান মূল্য ১৫০ টাকা যা গত বছর ছিল ১০৫ টাকা। ইলেক্ট্রিক সামগ্রী বর্গফুট প্রতি বর্তমান মূল্য ১২০ টাকা যা গত বছর ছিল ১০০ টাকা। স্যানিটারি সামগ্রী বর্গফুট প্রতি বর্তমান মুল ্য১৪০ টাকা যা গত বছর ছিল ১০০ টাকা।
নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতি বর্গফুটের নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে ৩৫৫ থেকে ৪০০ টাকা। জমির মালিকের সঙ্গে ফ্ল্যাট ভাগাভাগির কারণে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচ বেড়েছে প্রতি বর্গফুটে ৭১০-৮০০ টাকা।
চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও রড ব্যবসায়ী শরীফ আতিয়ার রহমান বলেন, রড তৈরির কাঁচামাল পুরোনো লোহার টুকরো আমদানি নির্ভর। চাহিদার তুলনায় বিশ্ববাজারে সরবরাহ কম থাকায় অনেক দিন ধরেই স্ক্র্যাপের দাম বাড়ছিল। সে কারণে রডের দর সমন্বয় করতে হয়েছে।
ভবন নির্মাণে পিভিসি ও ইউপিভিসি পাইপ-ফিটিংস, দরজা, সিলিং ইত্যাদি পণ্য ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়। সেসব পণ্যের দামও গত তিন-চার মাসে ৩০-৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। স্যানিটারি কাজে প্রতি বর্গফুটে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব।
ইটভাটা মালিক সমিতির সদস্য মো. বদরুদ্দোজা বাবলু বলেন, ‘ইট পোড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে কয়লার প্রয়োজন হয়। কয়লার কারণেই ইটের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি আমরা।’
কেসিসি ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক তসলিম আহমেদ আশা বলেন, গত অর্থবছরে দরপত্র দাখিলের সময় ৫ শতাংশ হারে এআইটি ধার্য ছিল, এখন তা ৭ শতাংশ করা হয়েছে। কাজের স্বাভাবিক অগ্রগতি অর্জিত না হওয়ার ফলে ঠিকাদাররা বিল পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় করোনাকালীন পরিস্থিতি ও ঋণপত্রের মূল্য বিবেচনায় নিয়ে সরকার ভ্যাট ও ট্যাক্স ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ নির্ধারণ করলে ঠিকাদাররা ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, সরকারি আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারবৃন্দ ও আবাসন খাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন। চলমান কাজ শেষ করতে হলে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ডিফল্ডার হয়ে পড়বেন। এ বছরের সরকারের এডিপি আশানুরূপ বাস্তবায়ন না হওয়ার আশঙ্কা। যথাসময়ে চলমান কাজ সম্পন্ন করতে হলে দরপত্রে বর্তমান বাজারদর সমন্বয় করা অথবা বিল থেকে ভ্যাট ও আয়কর প্রত্যাহার করে ক্ষতির সম্মুখীন হতে বাঁচানো যেতে পারে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত