
ঈদ এলেই শুরু হয় মানুষের ঘরে ফেরার উৎসব। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে, এবারে ঈদের ছুটিতে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়বে। ১৯ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন ৪০/৫০ লাখ মানুষ ছাড়তে পারে রাজধানী। সরকার ২০ এপ্রিল সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এমন উদারতা এবারের ঈদযাত্রা নিয়ে ঘরমুখো যাত্রীদের মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে। এবার যাত্রীর চাপ তুলনামূলক কম হতে পারে। ২১ এপ্রিল সারাদেশের সড়ক-রেল-নৌপথে যানজটও অনেকাংশে কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিবার ঈদ এলেই নির্বাহী আদেশে ছুটির প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসে। দেশে ঈদের ছুটির সঙ্গে নির্বাহী আদেশে একদিন ছুটি দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। ২০১৬ সালে এ ধরনের ছুটি দেওয়া হয়েছিল। সেবার সব মিলিয়ে ঈদুল ফিতরে ছুটি ছিল ৯ দিন। ব্যতিক্রম হিসেবে কোনো কোনো ঈদে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। ৭/৮ দিনের ছুটিও মিলেছিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ঈদে সরকারি ছুটি ছয়দিন করাসহ অন্য ধর্মীয় উৎসবে ছুটি বাড়াতে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দিলেও এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার।
যদিও সরকার সব সময় চায়, মানুষ নির্বিঘ্নে সব ধরনের উৎসব পালন করুক। অন্যদিকে, সরকারি অফিস-আদালত সাধারণ মানুষের সেবা নিশ্চিত করতেই খোলা রাখা হয়। তাই সরকারকে দুই দিকই চিন্তা করতে হয়।
ঈদে দীর্ঘ ছুটি থাকে অনেক মুসলিমপ্রধান দেশে। ২০১৭ সালে সৌদি আরবে ঈদুল ফিতরের ছুটি ছিল ১৭ দিন, কাতারে ১১ দিন, ওমানে ৯ দিন, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েতে ৫ দিন। ঈদের ছুটি কম হলে যাতায়াতেই কেটে যায় বেশিরভাগ সময়। ফলে উৎসবের আমেজ পুরোপুরি পাওয়া যায় না পরিবারের সঙ্গে। এতে মানুষের কর্মস্পৃহায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কর্মজীবীরা ভালোভাবে ছুটি কাটাতে পারলে কর্মক্ষেত্রে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। ইতোমধ্যে সরকার নির্বাহী আদেশে একদিন ছুটি বাড়িয়েছে। ভবিষ্যতে বিদ্যমান নৈমিত্তিক ছুটি ২০ থেকে কমিয়ে ১৪ দিন করে বাকি ছয় দিন দুই ঈদের ছুটির সঙ্গে তিন দিন করে সমন্বয় করা যায়।
ঈদে নাড়ির টানে নিজ বাড়ির প্রতি মানুষের ঢল থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। যানজট, ভিড়-ভোগান্তিও কিছু থাকবে। তাই সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়েই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। ইতোমধ্যে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে দেওয়া হয়েছে ১৯ দফা নির্দেশনা। তাছাড়া সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী পোশাক শ্রমিকদের ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়ার জন্য বলেছেন যেন একবারে চাপ না বাড়ে। ঈদযাত্রাকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি লাঘবে দূরপাল্লার যাত্রায় লোকাল বাস কিংবা অদক্ষ চালক, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাটসহ সার্বিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা এবং যত দ্রুত সম্ভব কার্যকরের উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক।
ঈদযাত্রায় সড়ক-মহাসড়ক যান চলাচলের উপযোগী রাখা এবং জনদুর্ভোগ কমানোর লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। পাশাপাশি যাত্রীদের সহযোগিতা ও সচেতনতাও একান্তভাবে কাম্য। এবার ঈদে সরকারের নির্বাহী আদেশে প্রাপ্ত ছুটি সকলেই সদ্ব্যবহার করবেন -এমনটিই প্রত্যাশা।