সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর: আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি কালচারে ভরা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাছারি ঘর এখন অস্থিত্ব হারিয়ে বিলুপ্তির পথে। এক সময় কাচারি ঘর ছিল বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামের আভিজাত্যের প্রতীক। বাড়ির বাহিরের আঙ্গীনায় দরজার মাথায় অতিথি, মুসাফির, ছাত্র ও জায়গিরদের থাকার এই ঘরটিকে কাচারি ঘর নামে চিনতেন সবাই।কাচারি ঘরটি বাড়ির দরজায় ঘাটলার কাছে স্থাপন করায় বাড়ির সৌন্দর্য অনেকাংশে বেড়ে যেত। কাচারি ঘরে অতিথি, পথচারী, মুসাফির, বাড়ির ছেলেরা রাত্রিযাপন করতেন। যে কারণে সেই সময় রাতের বেলায় বাড়িতে চুরি-ডাকাতি কম হতো বলে অনেকে মত দেন।কাচারিতে বাড়ির স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা করতেন পাশাপাশি সকাল বেলা এটি মোক্তব হিসেবে ব্যবহার হতো। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাড়ির সৌন্দর্য কাচারি ঘর এখন আর চোখে পড়ে না। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাছারি ঘর এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।জানা যায়, ঈশা খাঁর আমলে কর্মচারীরা বাড়ির দরজায় অবস্থিত কাচারি ঘরে বসে খাজনা আদায় করতেন। যখন দেশে জমিদারী প্রথা যখন চালু ছিলো তখনো গ্রামের প্রভাবশালী মোড়লদের বাড়ির দরজায় কাচারিতে বসে খাজনা আদায় করা হতো। শালিস বিচারসহ গ্রামের সকল সামাজিক কাজগুলি পরিচালিত হতো কাচারি ঘরে বসে। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইট-পাথরের গাঁথুনিতে একেবারেই বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর।এখনো চলতে পথে মাঝে মধ্যে দুই একটি বাড়িতে কাছারি ঘর দেখা গেলেও রয়েছে অযতেœ-অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায়। নেই আর কাচারি ঘরের সেই চিরচেনা শিক্ষার্থীদের পড়ার আওয়াজ, গ্রামের রাস্তায় সন্ধ্যায় পথচারীদের কাছে প্রতিটি বাড়ির স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের পড়ার আওয়াজ খুব পরিচিত ছিল। রাতের বেলায় জারীগান, লুডু খেলা, অতিথিদের গল্প-আড্ডা, সকাল বেলায় মোক্তবে আরবি পড়ার মধুর সুর সবকিছু মিলিয়ে কাছারি ঘর ভিন্ন মাত্রা যোগ করতো।এছাড়া এসব কাছারি ঘরে শ্রমিকরা বিশ্রাম নিতো কিন্তু এখন আর দিনের বেলায় কাজের শ্রমিকদের ক্লান্তি দূর করতে বিশ্রাম নিতে দেখা যায় না কাচারি ঘরে। কোথাও কোথাও এক সময়ের বাড়ির সৌন্দর্য কাচারি ঘর অযতœ আর অবহেলার কারণে এখন গোয়াল ঘরে পরিনত হয়েছে।সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফয়জুল্যাপুর গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, আমার পিতা জীবিত থাকতে আমাদের বাড়ির দরজায় অবস্থিত কাচারি ঘরটি প্রতি বছর মেরামত করতেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর থেকে কাচারি ঘরটি আর মেরামত না করায় আস্তে আস্তে একেবারে শেষ হয়ে যায়। এরপর ভাইদের মধ্যে ভিটে বাড়িসহ জমিজমা ভাগবাটোয়ারা হওয়ার কারনে আর কাছারি ঘর কেউ তৈরি করেনি। এখন ভিটেবাড়ি ছোট হওয়ায় এবং একান্নবর্তী পরিবার না থাকায় কোথাও আর কাছারি ঘরের অস্তিত্ব নেই। এখন আর কাছারি ঘরের তেমন একটা দরকার হয় না।কাছারি ঘরের কোন কার্যক্রমও নেই। সময়ের পরিক্রমায় যে দুই একটি কাচারি ঘর থাকলেও তাও কখন যে হারিয়ে যাবে তা এখন দেখার বিষয়। এক সময়কার গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতেকোথাও কোথাও দুই একটি কাচারি ঘর থাকলেও চিরচেনা সেই কাছারি ঘরের কোন কার্যক্রম এখন আর চলমান নেই। ঘরগুলি রয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। এভাবে হারিয়ে যেতে থাকলে আমাদের আগামী প্রজন্ম হয়তো একদিন ভুলে যাবে যে আমাদের গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে একসময় কাছারি ঘর ছিল।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত