সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : সুন্দরবনের দুবলার চরে ১৫ সাহেবের জিম্মি হয়ে পড়েছে ত্রিশ হাজার মৎস্যজীবীরা এরমধ্যে অভিযোগের তীর বেশি কামাল সাহেবের দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, তালা ও আশা শনি থেকে দুবলার শুটকি পল্লীতে যাওয়া জেলেরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। দুবলার চর থেকে বাড়িতে এক সপ্তার ছুটিতে আশা শ্যামনগর উপজেলার মহিউদ্দিন, জালাল, মজিদ, মানিক, দেলোয়ার, সাদ্দাম, বাবলু, হাসান, ও শওকাত আশাশনি উপজেলার আনসার, বাবর আলী, রহমত, করিম, মহাসিন, তারাপদ, হরিদাস, তপন মন্ডল, মাধব মন্ডল, কেরামত আলী, রফিকুল, তালা উপজেলার আমির আলী, মমিন, তাহের, মোস্তফা, সাকাৎ, তরিকুল, সালাম, গোবিন্দ মন্ডল, হারানবিহারী, অমল মন্ডল, কৌশিক মন্ডল, হরিপদো, সঞ্জয় মন্ডল, প্রশান্ত মন্ডল, ও অরবিন্দ মণ্ডল জানান বর্তমান মৌসুমে সুন্দরবনের দুবলার চরে জেলেদের জালে মাছ অন্য বারেরচেয়ে খুব কম ধরা পড়ছে। তারা আরো জানান মনে হয় এবার লাভের আশা কম মৌসুম শেষে খালি হাতে ফিরতে হবে।তার পরে ১৫ সাহেবের জিম্মায় এবার দুবলার চর চলছে তার মধ্য উল্লেখযোগ্য কামাল সাহেব তাদের ওপর কোন কথা বলা যাবে না দুবলার বনটহল ফাঁড়ির ওসি ও এর কোনো প্রতিকার করে না আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে মৌসুম কাটাচ্ছি। একে তো এবার মাছ কম তারপরেও সাহেবদের কাছে যিম্মি সে কারণে আগামী মৌসুমে দুবলায় যাব কিনা চিন্তার বিষয়।এ ব্যাপারে প্রয়াতো মেজর অব জিয়াউদ্দিনের ভাই কামাল উদ্দিন বলেন আমার বিরুদ্ধে জেলেদের অভিযোগ অহেতুক কারন দুবলার চরে একটি সমিতি আছে সেই সমিতির নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর দুবলার জেলে পল্লি চলে এ ব্যাপারে সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী নুরুল করিম এই প্রতিবেদককে জানান দুবলার চরের জেলেরা জিম্মি শোষণের শিকারসহ নানা অভিযোগের বিষয় লোকমুখে শুনি কেউ প্রকাশ্য আমাকে বলে না কেহ এই অভিযোগের লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও একাধিক জেলের অভিযোগ, ‘সব বিনিয়োগ আমাদের হলেও মাছ বিক্রির টাকার বড় অংশ চলে যায় ওই ১৫ ব্যক্তির পকেটে।’ বরুণ দে নামের এক জেলে মহাজন প্রথম আলোকে বলেন, ‘১২ লাখ টাকা দাদন নিয়ে এ বছর মাছ ধরা শুরু করেছি। পুরো মাছ ওই ব্যবসায়ীকে দিয়ে দিতে হবে। আমার সঙ্গে কাজ করছে ৮ জন শ্রমিক। সব খরচ বাদে আমার কী লাভ থাকবে, জানি না।’
৩৫ বছর ধরে সুন্দরবনে মাছ ধরেন খুলনার ডুমুরিয়ার জেলে নারায়ণ বিশ্বাস। একসময় তিনি দুবলার চরে মাছ ধরার শ্রমিকের কাজ করতেন। এখন তিনি জেলে মহাজন। একটি ট্রলার বা মাছ ধরার নৌকা, জাল ও ১০ জন শ্রমিক নিয়ে মাছ ধরছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অস্থায়ী একটি বসতির জন্য বন বিভাগকে ৪ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। প্রতিবছর এই ঘর বাবদ টাকা দিতে হয়। ১৫ সাহেবের লোকেরা জেলে মহাজনদের কাছ থেকে বন বিভাগের নামে এই টাকা সংগ্রহ করেন।
এ বছর দুবলার চরে অস্থায়ী ৯৬টি দোকান বরাদ্দ করেছে বন বিভাগ। আবুল বাশার নামের এক দোকানের মালিক প্রথম আলোকে বলেন, দোকানপ্রতি (আয়তন অনুসারে) ৩-৬ হাজার টাকা দিতে হয়। তবে দোকানপ্রতি অল্প কিছু টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও জেলেদের অস্থায়ী বসতির জন্য কোনো টাকা নেওয়া হয় না বলে দাবি করেন বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রহ্লাদ চন্দ্র রায়।
১৫ সাহেবের একজন দুবলার চর ফিশিং ম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, ‘জেলে মহাজনদের কাছ থেকে এ ধরনের কোনো টাকা আমাদের লোকজন তোলেন না।’
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দুবলার চরে বিক্রি থেকে ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে সরকার। প্রতি ১০০ কেজি মাছ বিক্রি করলে ৫০০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। সরকার রাজস্ব পেলেও অবহেলিত এখানকার মৎস্যজীবীরা। তাঁদের খাবারের জন্য নেই সুপেয় পানি। নেই চিকিৎসার ব্যবস্থা। তাই একটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স, পাঁচ মাসের জন্য একটি অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্পের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা