ক্রীড়া প্রতিবেদক : গত সেপ্টেম্বরের শেষে যখন উসমান দেম্বেলে ব্যালন ডি'অর হাতে তুলে নিচ্ছিলেন, তখন ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তার বছরের তৃতীয় চোটের। চোটের সঙ্গে লড়াই করলেও, বসে থাকেননি নেইমার। অংশ নিয়েছিলেন এক অনলাইন পোকার টুর্নামেন্টে, যেখানে দ্বিতীয় হয়ে জিতেছেন প্রায় ৭৪ হাজার পাউন্ড। তবে দেম্বেলের সাফল্যের দিনে সেই অর্থ ছিল নেইমারের জন্য এক সামান্য সান্ত্বনা।
এই বছরের শুরুতে শৈশবের ক্লাব সান্তোসে ফিরে আসেন নেইমার। প্রত্যাশা ছিল, ইউরোপ এবং সৌদি আরবে ব্যর্থ অধ্যায়ের পর এবার হয়তো নিজের সেরা ফর্মে ফিরবেন। কিন্তু বাস্তবতা হয়েছে ভিন্ন। চোট আর মাঠের বাইরে নানা কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে মাঠের পারফরম্যান্সে নেইমার হয়ে পড়েছেন বিবর্ণ। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন—২০২৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে চড়াতে পারবেন নেইমার? সময় দ্রুতই ফুরিয়ে আসছে।
কিংবদন্তি তোস্তাও লিখেছেন, ‘তারকারাও প্রমাণ করতে হয় যে তারা ফিট। তার জন্য সময় ফুরিয়ে আসছে।’ ব্রাজিল কোচ কার্লো আনচেলত্তি সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের বিপক্ষে দলের নাম ঘোষণা করেছেন। যেখানে নেইমারের নাম নেই। দীর্ঘ দুই বছর জাতীয় দলের বাইরে থাকা নেইমারের সর্বশেষ ম্যাচ ছিল ২০২৩ সালের অক্টোবরে, উরুগুয়ের বিপক্ষে। ওই ম্যাচে ব্রাজিল ২-০ গোলে হেরেছিল।
আগামী নভেম্বরে আরও কয়েকটি ম্যাচ থাকলেও, সেখানে তার খেলা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। যদি সেই সুযোগও না পান, তাহলে নেইমারের সামনে থাকবে কেবল ২০২৬ সালের মার্চে দুটি প্রীতি ম্যাচ, বিশ্বকাপের মূল দলে জায়গা পাওয়ার আগে নিজেকে প্রমাণ করার শেষ সুযোগ।
নেইমারকে দল থেকে বাদ দেওয়ার পেছনে কোচ আনচেলত্তি শুরুতে বলেছিলেন, বিষয়টি শারীরিক ফিটনেসের। কিন্তু নেইমার তা অস্বীকার করে বলেন, তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে ‘প্রযুক্তিগত কারণে’। পরে আনচেলত্তিও সেই কথা মেনে নেন। বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সাবেক অধিনায়ক কাফু বলেন, ‘যাকে বিশ্বকাপ জেতানোর জন্য ভরসা করা হয়, সে যদি টেকনিক্যাল কারণে বাদ পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে বড় সমস্যা আছে।’
সান্তোসে ফিরে এসেও চোট থেকে মুক্ত থাকতে পারেননি নেইমার। এখন পর্যন্ত দলের ৪৭ শতাংশ ম্যাচ খেলতে পারেননি। মাঠে নেমেও খুব একটা ছাপ ফেলতে পারেননি। চলতি মৌসুমে ৯টি গোল অবদান থাকলেও, তার বেশিরভাগই নিচের সারির দলের বিপক্ষে। ড্রিবলিং দক্ষতায় লিগে তার অবস্থান ৫০তম, যা নেইমারের জন্য একেবারেই অস্বাভাবিক।
শীর্ষ পোলিং প্রতিষ্ঠান ডেটাফোলহার এক জরিপে দেখা গেছে, ব্রাজিলিয়ানরা নেইমারকে বিশ্বকাপ দলে নেওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে দ্বিধায়। ৪৮% মানুষ তার পক্ষে থাকলেও, ৪১% বিপক্ষে।
মাঠে নেইমারের আচরণেও এসেছে পরিবর্তন। সম্প্রতি একের পর এক ম্যাচে সমর্থকদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছেন তিনি। ভাস্কো দা গামার কাছে ৬-০ গোলে হারার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন, যা তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় পরাজয়। সবশেষ ভরসা হিসেবে অনেকেই ২০০২ সালের রোনালদোর উদাহরণ টানছেন। গুরুতর চোট আর সমালোচনার পরও সেই বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন রোনালদো ‘ফেনোমেনন’। নেইমার কি পারবেন একইভাবে ফিরে আসতে?
রোনালদো অবশ্য আশাবাদী, ‘নেইমারের মতো আর কেউ নেই। যারা ভাবে সে নিজের ফিটনেস নিয়ে গাফিল, তারা ভুল করছে। সে সঠিক পথেই আছে।’ আগামী কয়েক মাস নেইমারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাকে প্রমাণ করতে হবে, তিনি এখনও ব্রাজিলের ‘যুবরাজ’, এখনও লড়াই করার মতো প্রস্তুত। যদি পারেন, তাহলে হয়তো দেখা যাবে ২০২৬ বিশ্বকাপে, আর যদি না পারেন- তবে তার নাম ইতিহাসের পাতায় থেমে যাবে এক অপূর্ণ সম্ভাবনার গল্প হিসেবেই।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত