জন্মভূমি ডেস্ক : প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নেওয়া জনস্বাস্থ্যসেবামূলক প্রকল্পগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেই এর কার্যকারিতা স্তিমিত হয়ে যায় বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে স্বাস্থ্যসেবা শুধু প্রকল্প বা প্রজেক্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। কেননা প্রজেক্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তখন এই সেবা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। তাই প্রজেক্ট থেকে বেরিয়ে এসে একটি স্থায়ী কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীতে ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভূমিকা’ শীর্ষক আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় তারা এসব কথা বলেন। সভায় মূল প্রবন্ধে বিসিসি অ্যান্ড মার্কেটিং ফার্মের এডভোকেসি অ্যান্ড মার্কেটিং স্পেশালিস্ট সৈয়দ ফয়সল আহমদ এই প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। একইসঙ্গে তিনি এই প্রকল্পের সফলতা এবং চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট-২ পর্যায়ের প্রকল্প পরিচালক আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খান বলেন, ‘সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই। যেহেতু শহরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবাটা সবার জন্য সমন্বিত নয়, সেহেতু স্থানীয় সরকারকে আলাদাভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অনেক পরিকল্পনা এবং কৌশলও প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু আলোর মুখ দেখেনি।
সরকারের অনেক কাজ রয়েছে। তাই সরকারের একার পক্ষে এই সমন্বয় করা সম্ভব নয়। বেসরকারি সংস্থা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং জনপ্রতিনিধি সকলে সমন্বিতভাবে কাজ করলে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এখন ‘ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ট’ অবস্থা বিদ্যমান। অর্থাৎ এদেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা বেশি।
কর্মের উদ্দেশে প্রতিবছরই প্রচুর মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে ৫৮ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ শহরবাসী হবে। এই বিশাল সংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিতে পরিকল্পনা প্রয়োজন। স্থানীয় বাস্তবতার দিকে লক্ষ্য রেখে সেবার মান নিশ্চিতকরণে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকারের মধ্যকার সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে। এছাড়া এই খাতে বাজেট বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।’’
ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ফোরকান হোসেন বলেন, ‘এই স্বাস্থ্য সেবা শুধু প্রজেক্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। কেননা প্রজেক্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তখন এই সেবা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। তাই প্রজেক্ট থেকে বেরিয়ে এসে একটি স্থায়ী কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই এই সেবা চালু করতে হবে। এখানে স্থায়ীভাবে ডাক্তার ও কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘এই প্রকল্প অনেক ভালো একটি প্রকল্প। কিন্তু এখানে সমন্বয়ের প্রয়োজন। সমন্বয় না থাকলে শুধু বাইরে থেকে পরামর্শ দিলে কোনো কাজ হবে না। নিজেদের মধ্যেই সমন্বয় সাধনে উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে নগর স্বাস্থ্য নিয়ে কর্মকৌশলের কাঠামো ঠিক করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় প্রয়োজন। তা না হলে মান সম্পন্ন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।’
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত