মো: হাসান গাজী, মোংলা : বাঘের আক্রমণের শিকার হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টানা ২১দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মারা গেছেন জেলে অনুকুল গাইন। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যু হয় তার। শনিবার সকালে তার মরদেহ আমুরবুনিয়ার বাড়িতে এসে পৌঁছায়। তারপর বেলা সোয়া ১১টার দিকে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের জিউধারা স্টেশন (মোংলা) কর্মকর্তা মো: শাহজাহান জানান, গত ২৭ জানুয়ারি সুন্দরবনে সুদীরেরচিলা খালে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণের শিকার হন বন সংলগ্ন আমুরবুনিয়া গ্রামের জেলে অনুকুল গাইন (৩০)। এরপর তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মোড়েলগন্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তারপর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। খুলনা থেকে ঘটনারদিনই পাঠানো হয়েছিলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে টানা ২১দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে তার মৃত্যু হয়। অনুকুল গাইন আমুরবুনিয়া গ্রামের মৃত মুকুন্দ গাইনের ছেলে। ১৫ বছর আগে মুকুন্দ গাইন ছেলে অনুকুল ও তার স্ত্রীকে রেখে মারা যান। পিতার মৃত্যুর পর অনুকুল বিছানাশায়ী বৃদ্ধা মাকে নিয়ে জীবনযাপন করে আসছিলেন। মা-ছেলের সংসারে সুন্দরবনে মাছ ধরে জীবিকা চলতো অনুকুল পরিবারের। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা এখন দিকবিদিকশুন্য হয়ে পড়েছেন।বন কর্মকর্তা শাহজাহান আরো বলেন, মাছ ধরতে গেলে বাঘের আক্রমণে অনুকুলের পিঠের বাম পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে পেটের নাড়ী বের হয়ে যায়। পরে গামছা দিয়ে বেঁধে নেয়া হয়েছিলো হাসপাতালে। চিকিৎসার অনেক চেষ্টার পরও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শুক্রবার রাতে মারা যান অনুকুল।
এদিকে বাঘের আক্রমণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে অসহায় অনুকুল পরিবারকে মানবিক কারণে নতুন একটি ঘর করে দেন যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মহসিন উল হাকিম। ১৪ ফেব্রুয়ারী নতুন সেই ঘর অনুকুলের মাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়, অনুকুলের জীবিকার জন্য দেয়া হয়েছিলো একটি ইজিবাইকও। কিন্তু ফিরে এসে নতুন ঘরে বসবাস ও ইজিবাইক চালিয়ে রোজগারের সুযোগও পায়নি অনুকুল। ছেলে ছাড়া আপন বলতে কেউ আর নেই মার। তাই কে অনুকুলের অচল/শয্যাশায়ী মাকে দেখবেন, আর কে চালাবেন ইজিবাইক, কিভাবে চলবে মায়ের জীবন। এসব বলে প্রলাপ করছেন অনুকুলের নিকটতম প্রতিবেশীরা।
অপরদিকে বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে নিহত অনুকুল পরিবারকে বনবিভাগের পক্ষ থেকে সরকারি অনুদান প্রদাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন বন কর্মকর্তা মো: শাহজাহান।