জন্মভূমি ডেস্ক : বৈষম্য বিলোপ আইন, সংখ্যালঘু কমিশন গঠনসহ ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। এমনকি দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ৪ নভেম্বর মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
আজ রবিবার (০১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর ঐক্যমোর্চা আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ঐক্যমোর্চার প্রধান সমন্বায়ক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে সরকারি দল আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বেশ কয়েকটি ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে, যা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ২০২১ সাল পর্যন্ত সরকার দলের এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ফলে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর ঐক্যমোর্চা পর্যায়ক্রমিকভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করছে। সর্বশেষ গত ৮ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে বিভাগভিত্তিক জেলা ও মহানগর পর্যায়ে সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ২২ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টা থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এই কর্মসূচি একটানা ৩৪ ঘণ্টা চলার পরপরই আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অনশনস্থলে এসে আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করার আশ্বাস দেন। এমনকি ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিগুলো নিয়ে বর্তমান সরকার কাজ করছে বলেও জানান।
রানা দাশ গুপ্ত আরও বলেন, সেসময় বৈষম্য বিলোপ আইন সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আছে, দেবোত্তর সম্পত্তি আইনটি ধর্ম মন্ত্রণালয়ে আছে এবং সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের কাজটি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে আমাদের আশ্বাস দেন কবির বিন আনোয়ার। এমনকি অক্টোবরের মধ্যেই এই কমিশন গঠন করা হবে বলে জানান। তার এসব আশ্বাস এবং অনশনভঙ্গের অনুরোধের প্রেক্ষিতে অনশনকারীরা কর্মসূচির আপাত সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আগামী ৬ অক্টোবর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু কবির বিন আনোয়ার অক্টোবরের মধ্যে দাবি আদায়ের আশ্বাস দিয়েছেন, তাই আমরাও সরকারকে সময় দিতে চাই। এজন্য আমাদের এই মহাসমাবেশের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে আগামী ৪ নভেম্বর একই স্থানে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি আগামী ৬ অক্টোবর (শুক্রবার) বিকেল ৪টায় সারা দেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি দলের প্রতিশ্রুতি অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে বিকেল ৪টায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। সে অর্থে সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকি। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে এ দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিদারুণ উদ্বিগ্ন।
তারা বলেন, কোনো কোনো সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তির বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের মতো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে মদদদান ও পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা শঙ্কিত। এ ব্যাপারে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জনগণের সচেতন দৃষ্টি কামনা করছি। আমরা আশা করি, আমাদের দেশের সকল রাজনৈতিক দল দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার তাগিদে অধিকতর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসবেন।