জন্মভূমি ডেস্ক : নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে চাল, ডাল, আলু, তেল ও ডিম এই পাঁচটি পণ্য ঘিরেই তৈরি হয়েছে সিন্ডিকেট। বছরজুড়ে এসব পণ্যের সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণ করেন সিন্ডিকেট ব্যবসায়িরা। কৌশলে হাতিয়ে নেন হাজার হাজার কোটি টাকা।
সরকারের বাজার মনিটরিং সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে রান্নার তেলের দাম। লিটারে তেলের দাম বেড়েছে ৭৫ টাকা। ডালের দাম বেড়েছে ২৫ টাকা। সবচেয়ে কম বেড়েছে চালের দাম। তাও কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা।যদিও টিসিবির উল্লেখ করা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য।
॥ ৬০ টাকার নিচে চাল নেই বাজারে ॥
টিসিবি বলছে, ২০২২ সালের ২২ আগস্টে চিকন চাল কেজিতে বিক্রি হয় ৬৫ থেকে ৮০ টাকা এবং বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭২ টাকা কেজিতে। যদিও টিসিবির এ দামের সঙ্গে বাস্তব চিত্রের মিল নেই।
গতকাল কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভালো মানের চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজিতে।
টিসিবির তথ্য মতে, মাঝারি মানের চাল ২০২২ সালে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা আর এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি।
কিন্তু বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন কোথাও ৬০ টাকার নিচে এ চাল বিক্রি হচ্ছে না।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, উৎপাদন ও চাহিদা অনুযায়ী বাজারে চালের দাম বাড়ে কিংবা কমে। আমরা চালের দাম বাড়াই না। কারণ, দিন শেষে আমরাও ভোক্তা।
বাবু বাজারের চাল ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ও বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি কাওসার আলম খান বলেন, সবকিছুর দাম বেড়েছে। সেই তুলনায় চালের দাম অনেক কম। বাজারে এই মুহূর্তে কোনো সিন্ডিকেট নেই।
॥ ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২৫ টাকা ॥
টিসিবির তথ্য মতে, ২০২০ সালের ২২ আগস্ট রাজধানীতে বড় মসুর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। যদিও খোলাবাজারে এ ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। ছোট মসুর ডাল এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০টাকা কেজি। গত বছর একই সময় এ ডাল বিক্রি হয়েছিল ১২৫ টাকায়।
॥ আলু ॥
টিসিবির দাবি, বাজারে প্রতি কেজি ডায়মন্ড আলুর দাম ৩৬ থেকে ৪০ টাকা। বাস্তবে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। ২০২২ সালে বিক্রি হয় ২৬ থেকে ৩০ টাকা কেজি।
॥ সয়াবিন তেল ॥
২০২০ সালে ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১১০ টাকা। সেই তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা। ২০২২ সালে এ তেলের দাম ছিল লিটার প্রতি ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা।
সিটি গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে আমাদেরও তেলের দাম বাড়াতে হয়। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে আমরাও কমে বিক্রি করতে পারি।
॥ ডিম ॥
বর্তমানে বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে এক হালি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। টিসিবি বলছে, ফার্মের ডিম (লাল) হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা। ২০২২ সালে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা হালি।
কাজী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান বলেন, সবাই অভিযোগ করেন কর্পোরেট সিন্ডিকেট গত বছরের আগস্টের মতো এ বছরের আগস্ট মাসেও ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমরা দাম বাড়াইনি। ডিমের দাম আমাদের বাড়ানোর সুযোগ নেই।
ভোক্তাদের অভিযোগ, যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তেল, চাল, ডাল ও আলুর দাম বাড়িয়েছেন। এর মাধ্যমে ভোক্তাদের পকেট কেটে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা।
॥ শাক-সবজি খেয়েও বেঁচে থাকা দায়-ভোক্তা ॥
কাঁচা বাজারে আসা ক্রেতা শফিকুল আলম বলেন, বাবা-মাসহ ৬ জনের পরিবার। বেতনের টাকা মাসের ২০ তারিখে শেষ হয়ে যায়। বাকি ১০ দিন চলি ধার-দেনা করে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, তেল, চাল, ডাল এমনকি আলুর দামও বাড়তি। প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। মাছ-মাংস তো দূরের কথা, শাক-সবজি খেয়েও বেঁচে থাকা দায়।
এনজিও কর্মী ইসলাম বলেন, গত ৫ থেকে ৬ মাস ধরে আলু ভর্তা, ডাল, ডিম দিয়ে খেয়ে দিন পার করছি। মাছ-মাংস শখের বসেও খাওয়া হয়নি। কিন্তু এখন ব্যবসায়ীরা ডিম-আলুর দাম যেভাবে বাড়িয়েছেন তাতে দিনে এক বেলা ডিম খাওয়ারও সুযোগ নেই।
॥ বেশি দামে পণ্য কিনলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হয় : বিক্রেতা ॥
জেনারেল স্টোরের সত্ত্বাধিকারী বলেন, বস্তা প্রতি চালের দাম ১০০ টাকা বেড়েছে। আমরা বেশি দামে কিনেছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আড়ত থেকে বেশি দামে কিনেছি। তারা বলছে, বৃষ্টি ও বন্যার কারণে চাল সংকট। এ কারণে দাম বেড়েছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়িয়েছে।
॥ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি বাজার ॥
ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব পণ্যের দাম সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে দিচ্ছেন। বাজার এখন কিছু অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। এজন্য সরকারের বাণিজ্য, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ও দায়ী। তারা সঠিকভাবে বাজার মনিটরিং করছে না। আবার কারসাজি চক্র চিহ্নিত হওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত