হারুন-অর-রশীদ : খুলনা সিটি কর্পোরেশনকে একটি আধুনিক ও তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দ্রুত গতীতে এগিয়ে চলছে ১১৯ প্রকল্প। সিটি মেয়রের ৫বছরে হাতে নেয়া ৭৭৭টি প্রকল্পের মধ্যে ইতো মধ্যে ৪৭০টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। দরপত্র আহবানের অপেক্ষায় রয়েছে ১১১টি প্রকল্প। এ জন্য ১ লাখ ৪৩ হাজার ১৫৩ কোটি ৭৮লাখ বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্য বেশ কয়েকটি মেঘা প্রকল্প বাস্তায়িত হচ্ছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন প্রকল্প। যার বরাদ্দ রয়েছে ৬০ হাজার ৭৫৬ কোটি ৭২লাখ টাকা এবং নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প। যার বরাদ্দ রয়েছে ৮২ হাজার ৩৯৭ কোটি ৬ লাখ টাকা। এই দু’টি প্রকল্পের মধ্যে সমাপ্ত কাজের ব্যয় হয়েছে ৪৫১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা। চলমান কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯৪১৬ কোটি টাকা ৪৬ লাখ টাকা এবং টেন্ডার অপেক্ষমান কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮৬১৮ কোটি ৮ লাখ টাকা। এক মাসের মধ্যে রাস্তা চলাচলের উপযোগী হবে। চলছে বিরামহিন ভাবে কর্মযজ্ঞ।
নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে এই সকল প্রকল্প বাস্তাবায়িত হয়েছে। এর সুফল ইতো মধ্যে নগরবাসী পেতে যাচ্ছেন। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই অনেকাংশু কাজ শেষ হবে। ফলে আর নগরবাসী জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাবেন। আর ক’দিন পর সিটি মেয়র তার পদ থেকে সরে দাড়াবেন। উন্নয়নের রূপকার সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। উন্নয়নের রূপ দিয়ে তিনি মৃত নগরীকে জীবিত করেছেন।
এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে উন্নত বিশে^র মানুষ কেসিসিকে মডেল হিসেবে নিয়ে অনুকরণ করবে। খুলনা উন্নয়নে স্বর্ণ শিখরে পৌঁছে যাবে। এই উন্নয়ন কাজ ওয়াসার খোড়াখুড়ির কারণে একটু বিলম্ব হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছেন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এই কাজ শুরু হয় এবং চলতে বছরের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ বাড়ানোর কথা রয়েছে। । চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত অর্থ ছাড় দেয়া হয়েছে ৪২১ কোটি ৪০লাখ টাকা। নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে ২৭৫কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এ পর্যন্ত ২২০ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়ন করা হয়েছে। ১৯২ কিলোমিটার ড্রেনের মধ্যে ১৮০ কিলোমিটার ড্রেন ফুটপাতসহ মেরামত ও উন্নয়ন করা হয়েছে। সরকারি অর্থায়নে এই কাজ করা হচ্ছে। এই দু’টি প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয় প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। রাস্তা প্রকল্পটি মেয়াদ আগামী বছর পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় রয়েছে। জার্মান সরকারের আর্থিক সহায়তায় জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পের জন্য ৪৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তা খালিশপুর কলেজিয়েট স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে। এ জন্য ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং বিশ^ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় চিত্রালী বাজার নির্মাণ করা হয়েছে।
ডুমুরিয়ার শলুয়া নামক স্থানে নির্মিত হচ্ছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন’র বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। আগামী বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে দেড় বছর। ইতোমধ্যে ১৭একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ১৩ ডিসেম্বর কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকেকে ১১৩ কোটি দেয়া হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নে বছর ৭৫ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। ৩৭৫মেট্টিকটন স্বক্ষমতা বর্জ্য ডাম্পিং করা হবে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য সংগ্রহ করে প্রকল্পে নিয়ে ডাম্পিং করা হবে। আধুনিক পদ্ধতিতে সেই বর্জ্য থেকে প্রতিদিন ১৫ মেট্টিকটন কম্পোজড সার উৎপাদন করা হবে। যা কৃষক পর্যায়ে বিক্রি করা হবে। প্রতিদিন বায়োগ্যাস উৎপাদন করা হবে ২০ মেট্রিকটন। যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হলে জ¦ালানী সাশ্রায় হবে। বর্জ্য থেকে প্রতিদিন ৩০০ইউনিট বিদ্যু উৎপাদন হবে। এই বিদ্যু প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত হবে এবং ৫০০লিটার ডিজেল (জ¦ালানি) তেল উৎপাদন হবে। যা সিটি কর্পোরেশনের আয়ের উৎস হবে।
কেসিসি’র প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এবং প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আ. আজিজ বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে নগরবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলতে হবে। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা যেন সহজে ময়লা সংগ্রহ করতে পারে। তা হলেই আমাদের পরিবেশ ভালো থাকবে।
কেসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন প্রকল্প এবং জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প। এই দু’টি প্রকল্পের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয় প্রকল্প প্রেরণ করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই আনুমোদন হয়ে আসবে। আগামী এক মাসের মধ্যে রাস্তা চলাচলের উপযোগি হবে। দ্রুত কাজ এগিয়ে চলছে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত