জন্মভূমি ডেস্ক : আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৬০ জন প্রার্থীকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামী ৭ জানুয়ারি। তবে নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রার্থী এবং তাদের সমর্থক ছাড়াও মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন কমিশন থেকে একের পর এক ‘কঠোর’ হুঁশিয়ারি বার্তা দেওয়া হলেও আমলে নিচ্ছেন না কেউ।
জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার একদিনের মাথায় নৌকায় ভোট চেয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে সতর্ক করে ইসি।
গত ২২ নভেম্বর ইসির উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান নির্দেশনাটি রাজশাহী জেলা প্রশাসককে (রিটার্নিং কর্মকর্তা) পাঠিয়েছেন। তারপরও সতর্ক হননি ওমর ফারুক চৌধুরী। একই অভিযোগে রোববার (৩ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশন ওমর ফারুক চৌধুরীকে পুনরায় শোকজ করে।
নির্বাচনী আইন না মানা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে যশোর-৬ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাহীন চাকলাদারকে নির্বাচনী শোকজ করা হয়েছে। রোববার (৩ ডিসেম্বর) নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক সুজাতা আমিন স্বাক্ষরিত এক নোটিশে তাকে শোকজ করা হয়েছে। গাড়িবহর নিয়ে শোডাউন করে তিন সপ্তাহ সময়ের পূর্বে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে ৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় সংশ্লিষ্ট আদালতে সশরীরে বা প্রতিনিধির মাধ্যমে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শাহীন চাকলাদার নির্বাচনী আইন মানছেন না। এভাবে ৬০ জন প্রার্থীকে শোকজ করেছে ইসি।
ইসির এক ঊর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রার্থীদের আচরণবিধি ঠেকানো যাচ্ছে না। আমরা একের পর এক শোকজ করে যাচ্ছি, সময় যতো গড়াচ্ছে তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। আমরা এরই মধ্যে ৬০ জনকে শোকজ করেছি। কয়েক প্রার্থীকে একাধিকবারও শোকজ করেছি। অনেকের শোকজের জবাব সন্তোষজনক হয়নি।’
ইসি সূত্র জানায়, ৩০ নভেম্বর নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও মাগুরা-১ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত এমপি পদপ্রার্থী ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানসহ ২৪ জন প্রার্থীকে শোকজ করে নির্বাচন কমিশন। অথচ বর্তমানে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ জনে। সময় যত যাচ্ছে ততই বেড়ে চলেছে শোকজের তালিকা। এরপরও আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠেকানো যাচ্ছে না। অনেক প্রার্থীর শোকজের দেওয়া জবাব সন্তোষজনক মনে করছে না ইসি। সাংবাদিকের ওপর চড়াও হয়েছিলেন চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। সাংবাদিকদের সঙ্গে মোস্তাফিজ সমর্থকদের কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে শোকজ করে ইসি। ইসিতে শোকজের জবাবও দেন মোস্তাফিজুর রহমান। তার শোকজের জবাব সন্তোষজনক মনে করছে না ইসি। ফলে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা জরিমানাসহ বাতিল হতে পারে তার প্রার্থিতা।
নরসিংদীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মতবিনিময় সভায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে পেটানোর হুমকি দিয়েছিলেন। এ ঘটনার বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা রিমনের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। নরসিংদী যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং নরসিংদী-১ নির্বাচনী এলাকার নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সদস্য নাহিদুর রহমান নাহিদ আজ সন্ধ্যায় এক চিঠিতে এ ব্যাখ্যা চান। তবে ছাত্রলীগ নেতার ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। কমিটি ইসিকে তার বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করে। এর প্রেক্ষাপটে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে পেটানোর হুমকি দেওয়া ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করে ইসি।
ইসি সূত্র জানায়, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, ক্রিকেটার ও তারকা থেকে শুরু করে অধিকাংশ প্রার্থীই আচরণবিধি মানছেন না। আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী গাজীপুর-২ আসনের সংসদ জাহিদ আহসান রাসেল ও ঢাকা-১৯ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানকে শোকজ করে ইসি।
সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সংসদ সদস্য ঢাকা-৬ আসনের কাজী ফিরোজ রশীদকেও শোকজ করেছে ইসি।