এম ডি আহাদুজ্জামান, নড়াইল : চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে অবসর সময় পার করছেন জেলেরা। নড়াইল সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের গোয়াইলবাড়ি গ্রামের কাজলা নদীর তীরের জেলেপাড়ায় ধ্রুব বিশ্বাসের পূর্বপুরুষেরা ভোঁদড় দিয়ে সুন্দরবনের জলাশয়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। ধ্রুব বিশ্বাসও পৈতৃক পেশায় এসেছেন। ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা তাঁদের শত বছরের পারিবারিক ঐতিহ্য। ধ্রুবর ভাষ্য, সুন্দরবনে মাছ ধরা বন্ধ। এখন নদীতে মাছ কমে গেছে। খাল-বিলে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরেন অন্য জেলেরা। সারা রাত মাছ ধরে ২০০–৩০০ টাকার বেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। সে জন্য অনেকে ভোঁদড় বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে তাঁর ভোঁদড় আছে চারটি।
সুন্দরবনে ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করায় নড়াইলের বেশির ভাগ জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন নড়াইল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম বদরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমরা জেলেদের নানাভাবে সহায়তা করছি। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে গোয়াইলবাড়ি গ্রামের ৬ জেলেকে ছাগল এবং ৬ জনকে জাল দেওয়া হয়েছে।’ ভবেন বিশ্বাস বলেন, খুব সমস্যায় আছি। সুন্দরবনে আবার মাছ ধরার অনুমতি দিলে খেয়ে পরে বাঁচতে পারতাম।’
স্থানীয় জেলে শ্যাম বিশ্বাস বলেন, তাঁদের কয়েক পুরুষ ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকার করেছেন। ঠাকুরদা গদাধর বিশ্বাস ও বাবা নিরাপদ বিশ্বাসের মাধ্যমে তিনি এ পেশায় আসেন। দুই শ থেকে তিন শ বছর ধরে চলছিল সুন্দরবনে ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা। সুন্দরবনে মাছ ধরে বেশ টাকা আয় হতো। এখন পাস বন্ধ। নদী-খালে মাছ নেই। সারা রাত জেগে মাছ ধরেও ৩০০-৪০০ টাকার মাছ পাওয়া যায় না। বড় কষ্টে আছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ ও খুলনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরার ঐতিহ্য ২০০–২৫০ বছরের। সুন্দরবনে জেলেরা ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরবেন, এতে সমস্যার কিছু নেই। বন বিভাগ সুন্দরবনে জেলেদের ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে, এমন বিষয় তাঁর জানা নেই। জেলেরা ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরতে চাইলে তাঁদের সেই সুযোগ করে দেওয়া হবে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত