
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) এক পরিসংখ্যানে দেশে ধর্ষণ ও নারী-শিশু নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠছে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে অন্তত ৬৬৩ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকাকর হয়েছে। এর মধ্যে চার শতাধিকই শিশু। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে দুজনেরও বেশি নারী বা কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এটি আমাদের সমাজের গভীর ক্ষত, নৈতিক অবক্ষয় এবং সর্বব্যাপী এক সামাজিক অস্থিরতার প্রতিচ্ছবি। ধর্ষণ-হত্যার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোও স্পষ্ট করছে -এখন আর কোনো জায়গা, কোনো পরিবার নিরাপদ নয়। শুধু শহর নয়, গ্রামগঞ্জের সর্বত্র ধর্ষণ একটি মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি এক ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত আট মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ১৫ হাজারেরও বেশি মামলা হয়েছে, যা প্রমাণ করে অপরাধের মাত্রা কতটা ভয়াবহ। বিশেষজ্ঞ মত হলো, বিলম্বিত বিচার এবং তদন্ত প্রভাবিত হওয়ার কারণে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। এছাড়া, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা অনেক সময় নথিপত্রে তথ্য-প্রমাণাদি সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন না। ফলে বিচারপ্রক্রিয়া বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকে, যা বাদীপক্ষকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং সমাজে এক ধরনের ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ তৈরি করে। যখন অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হতে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয় বা অপরাধী পার পেয়ে যায়, তখন অন্যান্য সম্ভাব্য অপরাধী উৎসাহিত হয়। আমরা মনে করি, ধর্ষণ প্রতিরোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। নারীর নিরাপত্তা মানে সমাজের নিরাপত্তা। প্রতিটি শিশু, প্রতিটি নারীকে নিরাপদ রাখা রাষ্ট্র ও সমাজের মৌলিক দায়িত্ব। পাশাপাশি, সামাজিক সচেতনতাও জরুরি। এজন্য প্রথমেই প্রয়োজন পরিবারভিত্তিক শিক্ষা, যেখানে শিশুরা ছোটবেলা থেকেই সম্মান, সহানুভূতি এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার মূল্যবোধে বেড়ে উঠবে। স্কুল-কলেজে পাঠ্যসূচির অংশ হিসেবে যৌন শিক্ষা, লিঙ্গসমতা এবং মানবাধিকার বিষয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা সচেতন হয় এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে শেখে। গণমাধ্যমে নিয়মিতভাবে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে তথ্য প্রচার করতে হবে। ধর্মীয় ও সামাজিক নেতাদের এ বিষয়ে বার্তা দিতে হবে। পাশাপাশি, ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোর সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা ভয় বা লজ্জা নয়, সাহস নিয়ে বিচার চাইতে পারে। সমাজের প্রতিটি স্তরে- পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, গণমাধ্যম- এই সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে পারলে, ধীরে ধীরে একটি নিরাপদ ও মানবিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।