সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : ৯৭ বছরের পুরানো বন আইন দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বন বিভাগ এ আইনের আওতায় সুন্দরবন সহ সামাজিক বনায়নের বিচার কার্যক্রম চলছে । যার আইনের ফাঁক দিয়ে সুন্দরবনের হরিন ও বাঘ শিকারি পর্যন্ত মামলার দায় হতে অব্যাহতি পাচ্ছে বর্তমান বন আইনের ৯৫ ভাগ মামলা হতে অপরাধিরা জামিন পাচ্ছেন ও মামলার দাই হইতে খালাস পাচ্ছেন। আর মাএ ৫ ভাগ অপরাধি শাস্তি পেলেও উচ্চ আদালত থেকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি পাচ্ছে ফলে সুন্দরবনের অপরাধের হার কোনো প্রকার কমানো যাচ্ছে না। সে কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অভিজ্ঞ মোহল শত বছরের পুরানো বন আইন সংশোধনের দাবি তুলে আসছে অভিজ্ঞ মহলের একটি দাবি শক্তিশালী বন আইন তৈরি করা। সে কারনে অন্তর্বর্তী সরকারের আওতায় বন আইনটাও সংস্কার করা অতি জরুরী বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। এদিকে ব্যারিস্টার ইজাজ আহম্মেদ বলেন দুর্বল বন আইনের কারণে চিহ্নিত অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। বন আইন কঠোর করা আতি জরুরী। ৯৭ বছরের পুরোনো বন আইন, সনাতন পদ্ধতিতে বন সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনাসহ কার্যকর তদারকি ও জবাবদিহির অভাবে বন অধিদপ্তরে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে; উত্তরণে ১৫ দফা সুপারিশ টিআইবির
বন সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারিত না হওয়া এবং এসব ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি বিদ্যমান। বন অধিদপ্তরের সকল স্তরের কার্যালয়ের কর্মকাণ্ডে কার্যকর তদারকি, পরিবীক্ষণ, জবাবদিহিতা ও ‘ফরেস্ট্রি পারফরমেন্স অডিট’- এর অনুপস্থিতিতে বন অধিদপ্তরকেন্দ্রিক দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এছাড়া, ৯৭ বছরের পুরোনো বন আইন (১৯২৭)- এর কার্যকর প্রয়োগে প্রয়োজনীয় বিধিমালা ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও আমূল সংস্কারের জন্য কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ড বননির্ভর আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমি অধিকার সুরক্ষাবান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়। বননির্ভর জনগোষ্ঠীর প্রথাগত ভূমি
অধিকারহরণ, বন আইন লঙ্ঘন করে ও একতরফাভাবে সংরক্ষিত বন, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য, জাতীয় উদ্যান ঘোষণাসহ জবরদখল উচ্ছেদের নামে অধিদপ্তরের বৈষম্যমূলকভাবে ক্ষমতা চর্চার সাম্প্রতিক উদাহরণ রয়েছে। সংরক্ষিত বন ও এর আশেপাশে বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, ত্রুটিপূর্ণ সামাজিক ও পরিবেশ সমীক্ষা সম্পাদন এবং এসবের উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনুমোদনের ঘটনায় অধিদপ্তরের উপর অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগে ব্যর্থতাও প্রত্যক্ষ করা যায়। তাছাড়া বন জবরদখলরোধ, বনভূমির জমি সেনানিবাস ও সামরিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বরাদ্দ এবং প্রাকৃতিক বনের স্থায়ী ক্ষতিরোধে বন অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা লক্ষ করা যায়। ‘বন অধিদপ্তর: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে উল্লিখিত মন্তব্য করেছে টিআইবি। বন অধিদপ্তরের কার্যক্রম বাস্তবায়নে অগ্রাধিকারমূলক বরাদ্দ, অবকাঠামো ও লজিস্টিকস এর ঘাটতি এবং এ ব্যাপারে যথোপযুক্ত ও কার্যকর উদ্যোগের অভাব লক্ষ করা যায়। অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ডসহ রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, বন সংরক্ষণ ও বনায়নকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির বিস্তার এবং তা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি বিদ্যমান বলে মনে করে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্ট-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান এবং গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক মু. জাকির হোসেন খান, সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার-জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. রেযাউল করিম ও জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন ইউনিটের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো: নেওয়াজুল মওলা। এছাড়া, গবেষণা দলের অপর সদস্য হলেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ নূরে আলম। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যাণ্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে যে, বন আইন ১৯২৭ প্রায় ৯৭ বছরের পুরোনো হওয়ায় এই আইনে বনের সংজ্ঞা, বনের ধরন, বন সংরক্ষণ প্রক্রিয়া ও উন্নয়ন কাজে বনের জমি ব্যবহার ও বরাদ্দ প্রদান বিষয়ে আইনে কিছু উল্লেখ নেই এবং এ সংক্রান্ত বিধিমালাও অনুপস্থিত। সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা সংরক্ষিত বনের মর্যাদা রহিতকরণের সুযোগ (ধারা ২৭) রাখা হলেও এক্ষেত্রে বন অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি গ্রহণ ও কী প্রক্রিয়ায় রহিত করা হবে তা আইনে অনুপস্থিত; ফলে ঢালাওভাবে বনভূমি ব্যবহারের সুযোগ বিদ্যমান। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২Ñ তে সংকটাপন্ন ও বিপন্ন বন্যপ্রাণীর প্রতিবেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ও তা সুরক্ষায় কী করা হবে তা আইনে উল্লেখ নেই এবং এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করার কোনো বিধানও রাখা হয় নি। করাত-কল (লাইসেন্স) বিধিমালা ২০১২ এর বিধি ৭(ক) এ পৌর এলাকায় করাত-কল স্থাপন ও পরিচালনার সুযোগ থাকায় সংরক্ষিত বনের পাশে বা মধ্যে অবস্থিত পৌর এলাকায় করাত-কল স্থাপন করে সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনের গাছ চুরির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।
বনখাত হতে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য দেওয়া হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা বন রক্ষায় একটি অন্যতম অন্তরায় বলে প্রতিয়মান হয়েছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে রাজস্ব সংগ্রহ কেন্দ্রিক দুর্নীতি-অনিয়মের ঝুঁকি ও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। রাজস্ব আহরণের নামে বনকর্মীদের একাংশ কর্তৃক স্বার্থ-সিদ্ধির জন্য দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। বন মামলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পৃথক বাজেট বরাদ্দ নেই এবং রিটেইনার ফি বাবদ ন্যূনতম বরাদ্দ রয়েছে । বন অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়গুলোতে অত্যাবশ্যক অবকাঠামো ও আসবাবপত্রের সংকটে ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় পরিত্যক্ত ভবন বা ঘরে বনকর্মীরা দাপ্তরিক কাজ সম্পাদন করেন। বন মামলার আলামত সংরক্ষণের জন্য নিজস্ব সংরক্ষণাগারের অনুপস্থিতিতে জব্দ ও উদ্ধারকৃত গাছ ও কাঠ উন্মুক্ত স্থানে ফেলে রাখায় তা নষ্ট হয়ে আর্থিক ক্ষতির উদাহরণ রয়েছে। বনায়ন, বনভূমি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে পরিচালনার লক্ষ্যে আধুানিক প্রযুক্তির (যেমন, জিআইএস ও রিমোট সেন্সিং) ব্যবহার সম্প্রসারণ করা হয় নি। বনভূমির জমির দলিল, রেকর্ডপত্র ও মানচিত্র, মামলার আলামত, ইত্যাদি এখনও সনাতন পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করায় তা বিনষ্ট, চুরি ও হারিয়ে যাওয়ায় বনভূমি জবরদখলের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এছাড়াও রেঞ্জ ও অধস্তন কার্যালয়গুলোর কর্মীদের বেতন-ভাতা ও সকল প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিংভিত্তিক নয়; নগদে অর্থ প্রদানকালে বণ্টনকারী কর্তৃক বিধিবহির্ভূতভাবে রেখে দেওয়ার চর্চা অব্যাহত রয়েছে। গতানুগতিক বন ব্যবস্থাপনাকে বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যমান জনবলের (১০,৩২৭টি) প্রায় ৪২ শতাংশ বৃদ্ধিসহ অধিদপ্তরের জন্য নতুন সাংগঠনিক কাঠামোর প্রস্তাবনা (১৭,৮২০টি) অনুমোদনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত সাংগঠনিক ও জনবল কাঠামো অনুমোদন করা হলেও বাংলাদেশে বন সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় গুণগত কোনো পরিবর্তন না হওয়া এবং বনকেন্দ্রিক দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের ঝুঁকি থাকবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তথ্যের উন্মুক্ততা ও স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ঘাটতি বিরাজমান। সংরক্ষিত বনভূমির জমি বৃহৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও সামরিক স্থাপনা নির্মাণে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান সম্পর্কিত বন অধিদপ্তরের অবস্থান ও মতামত সংক্রান্ত নথি ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করা হয় না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে দেওয়া এবং জবরদখল হওয়া বনভূমির পরিমাণের ওপর মাঠ জরিপভিত্তিক হালনাগাদ তথ্য সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয় এবং এসব ব্যাপারে বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। বনায়ন ও বন সংরক্ষণ কর্মকাণ্ড তদারকি ও পরিবীক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করা না হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় প্রকল্পের কর্মকাণ্ড অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরেজমিনে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করা হয় না। এছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) কার্যালয় কর্তৃক অধিদপ্তরের সদর দপ্তর হতে বিভাগীয় বন কার্যালয় পর্যন্ত নথি পর্যালোচনাভিত্তিক ও গতাগতিক নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে বিশেষায়িত নিরীক্ষা তথা ফরেস্ট্রি অডিট অনুপস্থিত। শুধু দাপ্তরিক নথি পর্যালোচনা-ভিত্তিক নিরীক্ষা হওয়ায় তা দ্বারা বনায়ন ও বন সংরক্ষণ কর্মকাণ্ডের গুণগত মানের প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত হয় না বা অধিদপ্তর ও লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যায়। অভিযোগ জানানোর প্রচলিত পদ্ধতি সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিতকরণে অধিদপ্তরের উদ্যোগের অভাব রয়েছে। অধিদপ্তরের অপর কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে ক্ষেত্রবিশেষে হয়রানির শিকার হওয়ার ঝুঁকি সুষ্টি হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দুর্ব্যবহার ও তিরস্কার করা, বেতন বৃদ্ধি আটকানো এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় বদলি হওয়ার মতো উদাহরণও রয়েছে।
বন অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ডে বননির্ভর জনগোষ্ঠীর কার্যকর অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়। সামাজিক বনায়ন প্রকল্পে সুবিধাভোগী হিসেবে বন-নির্ভর আদিবাসী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করে বিধিবহির্ভূতভাবে অর্থগ্রহণের মাধ্যমে প্রভাবশালীদেরকে সুবিধাভোগী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা; ‘কমিউনিটি ফরেস্ট ওয়ার্কার’ হিসেবে প্রকৃত সুবিধাভোগী বিশেষ করে ঐতিহ্যগতভাবে বনের জমিতে বসবাস ও কৃষি আবাদকারী ব্যক্তিদের সুযোগ না দেওয়ার উদাহরণ রয়েছে। সরকারি বন সুরক্ষা অধিদপ্তরের প্রধান দায়িত্ব হলেও তা পালনে প্রতিষ্ঠানটির সুস্পষ্ট ব্যর্থতা ও বিচ্যুতির সুনির্দিষ্ট উদাহরণ রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, বন অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে রামপাল কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকারক হবে বলে চিঠি মারফতে উল্লেখ করলেও পরিবেশগত প্রভাব যাচাইয়ের পর বন অধিদপ্তর উক্ত প্রকল্পের আর বিরোধিতা করেনি। তাছাড়া, বন্যহাতিসহ বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য ও জাতীয় উদ্যানসমূহের (যেমন- ডুলাহাজরা ও মেধাকচ্ছপিয়া) মধ্য দিয়ে দোহাজারী-গুণদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে অধিদপ্তরের সম্মতি জ্ঞাপন সংস্থাটির উপর অর্পিত ক্ষমতা ও দায়িত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বন অধিদপ্তর কর্তৃক শুধু লিখিতভাবে আপত্তি জানানোতেই সীমাবদ্ধ থাকার অভিযোগ রয়েছে। ফলশ্রুতিতে এ পর্যন্ত বনভূমির প্রায় এক লক্ষ ৬০ হাজার ২৪০ একর জমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ করে নিয়ে গেছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর অবধি মোট ২ লক্ষ ৮৭ হাজার ৪৫৩ একর বনভূমি জবরদখল করা হলেও অধিদপ্তর কর্তৃক সর্বশেষ পাঁচ বছরে মাত্র ৮ হাজার ৭৯২ একর (৩%) জবরদখলকৃত বনভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। জবরদখলকৃত বনভূমি উদ্ধারের পরিমাণ কম হওয়ার পেছনে বন অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এক্ষেত্রে বনভূমির জমির দলিল ও নথিপত্র অধিদপ্তরের কাছে চূড়ান্ত অবস্থায় না থাকা ও যথোপযুক্ত উদ্যোগের অভাব রয়েছে। গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য মতে, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার ইত্যাদি জেলাসমূহে ক্ষেত্রবিশেষে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জবরদখলে থাকা বনভূমির জমি অবৈধ দখলমুক্তকরণ ও স্থাপনা উচ্ছেদে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন বন কর্মকর্তাদের একাংশ কর্তৃক প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করতে অধস্তন বনকর্মীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট বন কার্যালয়গুলো কর্তৃক উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য তৎপর না হয়ে শুধু লিখিত আপত্তি জানানোতে সীমাবদ্ধ থাকা এবং জবরদখলকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে শুধু চিঠি আদান-প্রদানে সীমাবদ্ধ থাকার উদাহরণ রয়েছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বনকর্মীদের একাংশের ক্ষমতা অপব্যবহার ও ন্যায়সঙ্গত প্রয়োগের ঘাটতি বিদ্যমান। গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য মতে, বদলি নীতিমালা উপেক্ষা করে বনকর্মীদেরকে নিজ জেলায় বদলি ও পদায়ন করা হয়। স্থানীয় ভূমি অফিস, সেটেলমেন্ট ও সাব-রেজিস্টার অফিসের কর্মী ও বনকর্মীদের একাংশের যোগসাজশে ভুয়া দলিল ও নথি তৈরি এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্তির অভিযোগ রয়েছে। নীতিনির্ধারকদের একাংশ কর্তৃক বন প্রকল্পের অর্থ আত্মাসাতে সম্পৃক্ত থাকারও অভিযোগ রয়েছে। গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য মতে, বন প্রকল্প বাস্তবায়নকালে মাঠ পর্যায়ে নগদ অর্থ বণ্টনকালে ডিএফও, রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তাদের একাংশ কর্তৃক ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় ৬১ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, একজন সাবেক মন্ত্রীর নির্দেশে একটি বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের সম্পূর্ণ বিল (অসমাপ্ত কাজের বিলসহ) ঠিকাদারকে প্রদানে বাধ্য হওয়ার উদাহরণ রয়েছে। তাছাড়া ‘প্রাচুর্যপূর্ণ এলাকার’ বিট, চেক স্টেশন, ফাঁড়ি ও ক্যাম্প পর্যায়ের কর্মীদের বেতন সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা কর্তৃক নগদে বণ্টনকালে রেঞ্জ ও ডিএফও এর ‘মাসিক খরচ’ হিসেবে কার্যালয় প্রতি ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কেটে রাখা হয়। ডিএফও এর হিসাব শাখা কর্তৃক ক্ষেত্রবিশেষে বনকর্মীদের দ্বারা উত্তোলিত ভ্রমণ বিলপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, মোটরযানের মেরামত ও জ্বালানি বাবদ নগদ উত্তোলিত টাকার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কেটে রাখা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণে বন অধিদপ্তরের বিভিন্ন নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও পদায়নের একাংশের ক্ষেত্রে বিধিবর্হিভূত অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সময়ে প্রধান বন সংরক্ষকদের একাংশসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ, পদায়ন ও বদলির ক্ষেত্রে পদভেদে ৫০ হাজার থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত বিধিবহির্ভূত অর্থ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, পদ, কর্ম এলাকা বিশেষ করে অবৈধ পথে বনজ সম্পদ বিক্রি করার সুযোগ ও জমির উচ্চমূল্য ইত্যাদি বিবেচনায় ‘আর্থিকভাবে লোভনীয়’ এলাকায় বদলির জন্য বনকর্মীদের একাংশের মধ্যে দরকষাকষি ও উচ্চ পর্যায়ে প্রভাব বিস্তারের সক্ষমতাভেদে অবৈধ অর্থের লেনদেনের পরিমাণে তারতম্য হয়। এছাড়া, সামজিক বনায়নের সুবিধাভোগি হিসেবে তালিকাভুক্তি ও প্রকল্পের আওতায় সামাজিক বনায়নের প্লট প্রাপ্তিতে ক্ষেত্রবিশেষে ৩ – ৫ হাজার টাকা, নথিপত্রে স্থানীয় ভূমিহীনদের না দেখিয়ে বাস্তবে প্রভাবশালীদেরকে সামাজিক বনায়নের প্লট বরাদ্দে ৫০ – ৬০ হাজার টাকা সংশ্লিষ্ট বনকর্মী কর্তৃক আদায় করা হয়।
বনভূমি ও এর পাশর্^বর্তী যে প্রতিবেশ এলাকা রয়েছে সেখানে অপরিকল্পিত ও যথেচ্ছাভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও শিল্পকারখানা স্থাপনের যে নজির স্থাপিত হয়েছে, তা প্রতিরোধে যথাযথ ভূমিকা পালনে বন অধিদপ্তর অদক্ষতার পরিচয় দেখিয়েছে। বন সুরক্ষা করার যে অর্পিত দায়িত্ব সেক্ষেত্রেও তারা ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, “গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী বন অধিদপ্তরের যে চিত্রটি আমরা দেখলাম, তা সত্যিকার অর্থেই খুব হতাশাব্যঞ্জক। সরকারি বনভূমির সুরক্ষা ও বনে বসবাসকারী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রথাগত জমির যে অধিকার তা নিশ্চিত করতে বন অধিদপ্তরের ওপর অর্পিত যে ক্ষমতা এবং সক্ষমতা রয়েছে, দুটোরই তারা কার্যকর ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার করতে পারছে না এবং সেখানে অনেক বিচ্যুতি আমরা লক্ষ করেছি। গণমাধ্যমে এ জাতীয় বেশকিছু ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে, যার দৃষ্টান্ত আমরা প্রতিবেদনে তুলে ধরেছি। আমাদের গবেষণায়ও সেটা প্রতীয়মান হয়েছে। আমরা দেখলাম যে বেসামরিক ও সামরিক স্থাপনা নির্মাণে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি যেভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং জবরদখলের যে-সব ঘটনা ঘটে, তা প্রতিরোধেও বন অধিদপ্তর কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। অনেক সময় তারা পর্যাপ্তমাত্রায় সক্রিয় না হয়ে এড়িয়ে গিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ ধরনের জবরদখল এবং আত্মসাতের সাথে যোগসাজশের দৃষ্টান্তও রয়েছে। এক্ষেত্রে বন উজাড়, বনভূমি বেদখল ও অবৈধভাবে বনভূমি বরাদ্দ কিংবা তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের একাংশের মাধ্যমে যোগসাজশের একধরনের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ঘটেছে। যেখানে বাস্তবে রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছে।”
অধিদপ্তরে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলির ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেনসহ বিভিন্ন প্রকার আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠান জর্জরিত একটি অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এছাড়া, বন অধিদপ্তর কর্তৃক বৈষম্যমূলকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বনকেন্দ্রিক যে দুর্নীতি তার ঘটনায় অধিদপ্তরের একশ্রেণির কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ও অদক্ষতা টেকসই বন উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন ড. জামান। তিনি বলেন, “রিমোট সেন্সিং ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় সর্বোচ্চ ও কার্যকরভাবে বনব্যবস্থাপনার উন্নতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অধিদপ্তরের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে। যার কারণে বন ও বনজ সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বন অধিদপ্তরের কার্যক্রম বিশেষভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। বন সুরক্ষায় সরকারের উদাসীনতাও লক্ষণীয়। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ শিল্পকারখানাসমূহ অবারিতভাবে বনাঞ্চলে গড়ে উঠতে দেওয়া হয়েছে এবং সেক্ষেত্রে বন অধিদপ্তর কখনোই তার ভূমিকাটি জোরালোভাবে পালন করতে পারেনি।”
বন আইনের বিধিমালার অনুপস্থিতি খুবই অবাক করার মতো একটি বিষয় এবং ৯৭ বছরের পুরোনো আইন বিদ্যমান থাকায় সংস্থাটির সদিচ্ছার সম্পূর্ণ ঘাটতি হিসেবেই বিবেচনা করছি, যা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। আইনটির খসড়া হয়েছে বলে আমরা জানি কিন্তু বিশেষ কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, “বন অধিদপ্তরের কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারমূলক বরাদ্দ, অবকাঠামো ও লজিস্টিকস এর ঘাটতি ব্যাপক। এ ব্যাপারেও অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের যথাযথ উদ্যোগের ঘাটতি পরিলক্ষিত। বন উজাড় ও দখল এবং আত্মসাৎ কেন্দ্রিক দুর্নীতির বিস্তার রোধে কার্যকর প্রচেষ্টা দেখা যায় না সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে। এর অন্যতম একটা কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকেন। যা সর্বজন বিদিত।”
ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন “উপকূলীয় বনাঞ্চল যেভাবে অবারিতভাবে উজাড় করা হচ্ছে, সেটা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের অভিযোজনের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে। এক্ষেত্রে বোঝাটি কিন্তু বইতে হচ্ছে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীকে। যাদের অনেকেই ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বন অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে। নতুন আইন প্রণয়নসহ আমূল পরিবর্তন দরকার। এগুলোসহ যে পনের দফা সুপারিশ করেছি তা সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে বন অধিদপ্তর নিজে এবং অন্যান্য অংশীজন যদি বিবেচনায় নেয়, তাহলে আমরা আশা করি, এক্ষেত্রে যে ক্ষতি হচ্ছে সেটাকে রোধ করা সম্ভব হবে এবং বন সুরক্ষায় আমাদের প্রত্যাশিত অগ্রগতি, আমাদের সরকার ও রাষ্ট্রের সাংবিধানিক এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে অঙ্গীকার সেগুলো সুরক্ষায় আমরা অগ্রসর হতে পারবো।”
আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক বন সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বন অধিদপ্তরকে একটি সক্ষম ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপদানের লক্ষ্যে টিআইবি ১৫ দফা সুপারিশমালা প্রস্তাব করছে- ১. রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে বনভূমি ব্যবহার ও ডি-রিজার্ভের পূর্বে বন অধিদপ্তরের অনুমতি গ্রহণ, ত্রটিমুক্ত ইআইএ সম্পন্নকরণ ও সমপরিমাণ ভূমিতে প্রতিবেশবান্ধব বনায়নে ‘কমপেনসেটরি এফরেস্টেশনের বিধিমালা’ প্রণয়ন করতে হবে; ২. বন আইনের আমূল সংস্কার করে যুগোপযুগী ও প্রয়োজনীয় বিধিমালা ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে এবং একইসাথে বননির্ভর আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রথাগত ভূমি অধিকার নিশ্চিতকরণসহ জনঅংশগ্রহণমূলক বন ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে অধিদপ্তরের দায়িত্ব বিধিবদ্ধভাবে নির্ধারণ করতে হবে; ৩. বন হতে রাজস্ব ও মুনাফা আহড়ণ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে; ৪. প্রাকৃতিক বনের বাণিজ্যিকায়ন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করাসহ সৃজিত সামাজিক বনের গাছ না কেটে উপকারভোগীদের প্রাপ্ত মুনাফা প্রদান ও উক্ত বন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে; ৫. অবক্ষয়িত প্রাকৃতিক বন ও বৃক্ষশূন্য জমিতে পরিবেশ ও প্রতিবেশবান্ধব বনসৃজন করতে হবে; ৬. বন ও বনজ সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বিবেচনায় নিয়ে জনবল কাঠামো পুরোপুরি ঢেলে সাজাতে হবে; ৭. মাঠ পর্যায়ে সার্কেল ও বিভাগভিত্তিক বাধ্যতামূলক ও পালাক্রমিক বদলির বিধান প্রবর্তন এবং এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; ৮. যথাযথ চাহিদা নিরূপণ সাপেক্ষে বন অধিদপ্তরের সকল পর্যায়ের কার্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ, পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও লজিস্টিকস সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে; ৯. মাঠ পর্যায়ে সকল প্রকার আর্থিক বরাদ্দ ও লেনদেন অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিংভিত্তিক এবং বিট ও অধস্তন কর্মীদের বেতন-ভাতা ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট বনকর্মীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি প্রেরণের ব্যবস্থা করতে হবে; সিএস রেকর্ডকে ভিত্তি ধরে সরকারি বনের সীমানা চিহ্নিত করতে করতে হবে; ১০. সিএস রেকর্ডকে ভিত্তি ধরে সরকারি বনের সীমানা চিহ্নিত করতে হবে; এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ বনভূমি জবরদখল হয়েছে তার ওপর বস্তুনিষ্ঠ তথ্যভাণ্ডার তৈরি ও তা উদ্ধারে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; ১১. বনায়ন, বন সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পরিচালনা, তদারকি ও পরিবীক্ষণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও এর কার্যকর ব্যবহার করতে হবে এবং ডিএফও ও বন সংরক্ষককে অধিনস্ত কার্যালয়সমূহের কর্মকাণ্ড নিয়মিতভাবে অবহিতকরণের ব্যবস্থা করতে হবে; ১২. বন অধিদপ্তরের বনায়ন ও বন সংরক্ষণ কার্যক্রম নিরীক্ষায় ফরেস্ট্রি পারফরমেন্স অডিট ব্যবস্থা প্রবর্তন ও এর কার্যকর চর্চা নিশ্চিত করতে হবে; ১৩. ওয়েবসাইটকে আরো তথ্যবহুল, যেমন- নিরীক্ষা প্রতিবেদন, পূর্ণাঙ্গ বাজেট, প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ তথ্য, বিভিন্ন সংস্থাকে বরাদ্দকৃত ও জবরদখল হওয়া ভূমির পরিমাণের ওপর পূর্ণাঙ্গ তথ্য, ইত্যাদি ও নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে; ১৪. প্রকল্প বাস্তবায়ন, বন ও বনজ সম্পদ সংরক্ষণের সাথে জড়িত সকল কর্মীর নিজস্ব ও পরিবারের অন্য সদস্যদের বাৎসরিক আয় ও সম্পদের বিবরণী বছর শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়াসহ তা প্রকাশ করতে হবে; ১৫. বন অধিদপ্তর ও বনকেন্দ্রিক অনিয়ম-দুর্নীতি এবং বিভাগীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুততার সাথে শাস্তি প্রদানের নজির স্থাপন করতে হবে।