
ডেস্ক রিপোর্ট : পাবনার ঈশ্বরদীতে মা কুকুরের অগোচরে আটটি কুকুর ছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে ফেলে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার পর অভিযুক্ত নারী নিশি রহমানকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ স ম আব্দুন নূর মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯-এর ৭ ধারায় মামলা করা হয়েছে। মামলায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী নিশি রহমানকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে মামলার পরপরই রাতে অভিযান চালিয়ে আসামি নিশি রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ঈশ্বরদী সার্কেল) প্রণব কুমার বৃহস্পতিবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মামলার পর গতকাল রাত দেড়টার দিকে অভিযান চালিয়ে ঈশ্বরদী পৌর সদরের রহিমপুর গার্লস স্কুলের পাশে জনৈক বিদ্যুতের বাসার চারতলা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বলেন, ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। যে কারণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার মহোদয় ফোন করেছিলেন।
তিনি বলেন, ঘটনাটি অমানবিক এবং এটি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তাই প্রাণী হত্যায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এছাড়া মহাপরিচালক স্যারও ফোন করে তার পক্ষে মামলার নির্দেশনা দিয়েছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, কুকুর ছানা হত্যার ঘটনায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নকে সোমবার (১ ডিসেম্বর) গেজেটেড কোয়ার্টার ছাড়তে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়। তারা মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে বাসা খালি করে অন্যত্র চলে গেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে নয়নের স্ত্রী নিশি রহমান মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, বাচ্চাগুলো আমাদের বাসার সিঁড়ির পাশে থাকত এবং খুব ডিস্টার্ব করত। তাই আমি বাজারের ব্যাগে ভরে পুকুরের পাশে একটি সজিনার গাছের গোড়ায় রেখে আসি। কীভাবে পুকুরে পড়েছে জানি না। আমি নিজে ছানাগুলোকে পুকুরে ফেলিনি।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের এক কোণায় থাকে টম নামে একটি কুকুর। এক সপ্তাহ আগে টম আটটি বাচ্চা প্রসব করে। সোমবার সকাল থেকে তার ছানাগুলো না পেয়ে ছোটাছুটি করতে দেখা যায় মা কুকুর টমকে।
পরে উপজেলা পরিষদের কর্মচারীরা জানতে পারেন ঈশ্বরদী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়ন ও তার স্ত্রী জীবন্ত আটটি কুকুর ছানাকে বস্তার মধ্যে ভরে রোববার রাতের কোনো এক সময় উপজেলা পরিষদের পুকুরে ফেলে দেন। একদিন পর সোমবার সকালে পাওয়া যায় কুকুর ছানাগুলোর মরদেহ। দুপুরের পর মৃত কুকুর ছানাগুলোকে ইউএনওর বাসভবনের পাশে মাটি চাপা দেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাড়ির কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সোমবার সকালে নয়ন স্যার মোটরসাইকেলে বাইরে যাচ্ছিলেন। আমি ছানাগুলোর কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেন। তখন তার ছেলে বলে ‘আম্মু ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।’ এরপর আমরা পুকুরে গিয়ে একটি বস্তা ভাসতে দেখি। সেখান থেকে তুলে বস্তা খোলার পর আটটি ছানাকেই মৃত অবস্থায় পাই।
মৃত ছানাগুলো দেখে মা কুকুরটি প্রচণ্ড আর্তনাদ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মীরা কুকুরটিকে চিকিৎসা দেন। মঙ্গলবার সারাদিন ছানাগুলোর খোঁজে মা কুকুরকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ উপজেলা চত্বর এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত