হারুন-অর-রশীদ : খুলনার নারী শ্রমিকরা এখনো নানাভাবে মজুরী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। পুরুষের তুলনায় তারা কাজ বেশী করলেও মজুরীর দিক থেকে কম দেয়া হচ্ছে। নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয় না। প্রতিবাদ করলে কাজ থেকে বাদ দেয়া হয়। অবহেলিত হয়ে কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা। দেশ উন্নয়নে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ১৩৭ বছরেও নারী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়নি। দুর হয়নি মজুরী বৈষম্য।
দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষন থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের এই দিনে বুকের তাজা রক্ত ঝড়িয়ে ছিলেন শ্রমিকরা। ৮ঘন্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে ৩লাখ শ্রমিক সব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দেয়। আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। এতে ১০জন শ্রমিক প্রাণ হারান। শ্রমিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে শিকাগো শহরের হে মার্কেটে রূপ নেয় লাখ শ্রমিকের বিক্ষোভ সমুদ্রে।
১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২য় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্ত ঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ম আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে ঘোষনা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর বিশে^র বিভিন্ন দেশে মে দিবস পালিত হয়ে আসছে। নারী শ্রমিকরা জানেননা মে দিবস বা শ্রমিক দিবস কি। তারা সকালে কাজে আসে আর রাতে বাড়িতে ফিরে। তাদের এখনো ১২ ঘন্টার বেশীও কাজ করতে হয়। সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা ক্ষেত খামার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন। তার পর মজুরী পুরুষের তুলনায় অর্ধেক।
দেশের প্রতিটি সেক্টরে রয়েছে নারীদের অবদান। তাদের বাদ দিয়ে দেশ উন্নয়ন সম্ভব নয়। কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখনো বঞ্ছনা আর লাঞ্চিত হয়ে থাকে। পরিবারের প্রধান পুরুষ হওয়াতে নারীরা এখনো কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
স্বামী পরিত্যক্তা নির্মাণ শ্রমিক নূর নাহারের বাড়ি বটিয়াঘাটা এলাকায়। শ্রম বিক্রি করতে আসেন নগরীর সাত রাস্তা মোড়ে। বাড়িতে তার দু’ সন্তান রয়েছে। তিনি বলেন, তার শ্রম মজুরী ৪শ’ টাকা। প্রতিদিন কাজ হয়না। আর পুরুষ শ্রমিকের মজুরী ৬ থেকে ৭শ’ টাকা। পুরুষ শ্রমিক চা পান করা থেকে নানা ওজুহাতে বিশ্রাম নেয়। আর নারী শ্রমিকরা একের পর এক কাজ করে যাচ্ছেন।
শ্রমিক নেতা মো. শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, যে অর্থে শ্রমিক দিবস হয়েছিল তার কোন বাস্তবায়ন নেই। একজন শ্রমিককে ১২-১৫ ঘন্টা শ্রম দিতে হচ্ছে। তিনি ৮ ঘন্টা কর্মদিবস করার দাবি জানান।
নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট শামীমা সুলতানা শীলু বলেন, নারী শ্রমিকরা আজও বঞ্চিত। তারা কাজ বেশী করলেও মজুরী কম পাচ্ছেন। তাদের পরিশ্রমের টাকা চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের পকেটে। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সমমর্যদা ও অধিকার দিতে হবে। বৈষম্য নিরসনে তিনি সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত