জন্মভূমি রিপোর্ট
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক নগরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের এলাকায় যখন উন্নয়ন কাজ হবে, তখন ইট-সিমেন্ট ভালো কিনা? কাজের মান ভালো হচ্ছে কিনা? আপনাদেরই দেখতে হবে। এটা আন্তরিকতা। কাজের মান খারাপ হলে আমাকে জানাবেন। তিনি বলেন, শহরে গত কয়েক বছরে ডেঙ্গু রোগী মেলেনি। যাদেরকে পাওয়া গেছে- তারা নগরীর বাইরে থেকে এসেছিলেন। মশোক নিধনে নিয়োজিত কর্মীরা দু’ শিপ্টে কাজ করছেন।
রোববার বেলা ১১ টায় নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রূপান্তর-এর “সুশাসন উন্নয়নে জনসম্পৃক্তকরণ” প্রকল্পের প্রাক-বাজেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। দ্যা এশিয়া ফাউন্ডেশন এই প্রকল্পের সহযোগী। সভার আয়োজক কর্তৃপক্ষ নাগরিক ফোরাম নামে একটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সিটি মেয়র সমীপে খুলনা পাবলিক হল পুন:নির্মাণ, মশক নিধনে দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, প্রবাহমান খালগুলি অবৈধ দখল মুক্তকরণ, এলাকা ভিত্তিক ইজিবাইক স্ট্যান্ড নির্মাণ, রূপসা, দৌলতপুর ও বয়রায় শশ্মান ঘাটের আধুনিকায়নসহ ১২ দফা নাগরিক চাহিদা তুলে ধরেন। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় নগর পিতা এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, সমৃদ্ধ নগরজীবন উপহার দিতে কেসিসি কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর। সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়নে সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি নাগরিকদেরও দায়িত্ব আছে। আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নগরবাসীর আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে চাই। কিন্তু কাঙ্খিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যে পরিমাণ জায়গার দরকার তা অনেক ওয়ার্ডে নেই। সে জন্য সিটি কর্পোরেশন এলাকা বর্ধিত করার জন্য সরকারের নিকট আবেদন জানানো হয়েছে। আরো দুইটি থানা এলাকা কেসিসি’র অন্তর্ভুক্ত হলে সেখানে পরিকল্পিতভাবে খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র, কবরস্থান, শ্মশান ইত্যাদি নির্মাণ করা হবে।
তিনি বলেন, পাবলিক হলের নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান হতে চলেছে। নগরীতে আট হাজার ইজি বাইকের লাইসেন্স থাকলেও চলছে ১৫ থেকে ২০ হাজার। অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কেন দুর্বল? এ ব্যাপারে কাজ করবে- প্রশাসন, ট্রাফিক। তারা কেন নড়ে-চড়ে না?
সিটি মেয়র বলেন, নগরীতে কবরখানার সংখ্যা যথেষ্ট না। নতুন করে করা হবে। বিভিন্ন শ্মশান ঘাট নতুন আলোকে তৈরির জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। রোড লইটগুলো সচল রাখার ব্যাপারে তৎপর থাকতে সংশ্লিষ্টদের বলা আছে। একটি আধুনিক মানের সুইমিং পুল নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা রয়েছে।
নগর পিতা বলেন, ভৈরব ও রূপসা নদীতে পলি জমে যাওয়ায় শহরের পানি শেষ ভাটার সময় ছাড়া বের হচ্ছে না। যদিও পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েকটি হাই পাওয়ারের পাম্প ব্যবহার করা হচ্ছে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের স্থায়ী সমাধানের জন্য নদী দুইটি খননের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আগামীতে কেসিসি এ সকল বিষয়ে প্রকল্প গ্রহণ করবে। পাশাপাশি মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় যে ২২ টি খাল রয়েছে সেগুলিও খননের উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি ময়ূর নদীসহ খালগুলো অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করার জন্য সুশীল সমাজকে নিয়ে কমিটি গঠনের স্মৃতি চারণ করেন। যে কমিটির আহবায়ক ছিলেন- আততায়ীর গুলিতে নিহত সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহীদ ইকবাল বিথার।
তিনি বলেন, কেসিসি’র বিপুল কর্মযজ্ঞ চলছে। চলমান প্রকল্পসমূহ সম্পন্ন হলে নগরবাসীর প্রায় সকল চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। বর্ষা মৌসুম শেষ হবার সাথে-সাথে ময়ূর নদী খননসহ আরো কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। হতে গোনা কয়েকটি ওয়ার্ডে জায়গার অভাবে ওয়ার্ড অফিস ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। সেসব ওয়ার্ডে জায়গা কিনে ওয়ার্ড অফিস নির্মাণ করা হবে। সিটি মেয়র অসচেতন মানুষদের ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করার ব্যাপারে জনমত তৈরির জন্য নাগরিক ফোরাম নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান। তিনি কেডিএ’র মাস্টার প্লান দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়ন না হওয়ার সমালোচনা করেন।
মেয়র খালেক নাগরিক ফোরামের প্রয়াত সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল কাইয়ুমের স্মৃতিচারণ করে বলেন, তিনি সুন্দর সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
সভায় একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, ১৪শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। ব্যাপক হারে উন্নয়ন মূলক কাজ চলায় অপনাদের কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। উন্নয়ন করতে হলে এটুকু স্বীকার করতে হবে। এছাড়া আমাদের নিজেস্ব তহবিল দিয়ে যে কাজ হচ্ছে, তাতে অগ্রগতি আছে। অবস্থা ভালো। সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত আছে। এ সহযোগিতা উত্তর-উত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বক্তারা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সিটি মেয়রের হাতকে আরও শক্তিশালি করার আহবান জানান।
নাগরিক ফোরাম-খুলনার আহবায়ক রফিকুল ইসলাম খোকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোঃ জাকারিয়া।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, কেসিসি’র মেয়র প্যানেলের সদস্য এ্যাড. মেমোরী সুফিয়া রহমান শুনু, কাউন্সিলর শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ, শেখ মোঃ গাউসুল আজম, মোঃ আনিছুর রহমান বিশ্বাস, শেখ মোহাম্মদ আলী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্মসচিব) লস্কার তাজুল ইসলাম, বাজেট কাম একাউন্টস অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামান, নাগরিক নেতা শাহিন জামান পন, সৈয়দ আলী হাকিম, মোঃ শাহজাহান হাওলাদার প্রমুখ। স্বাগত বক্তৃতা করেন, নাগরিক ফোরাম-খুলনার সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট সেলিনা আক্তার পিয়া। কেসিসি’র কাউন্সিলর, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা, নাগরিক ফোরামের নেতৃবৃন্দ ও নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়নে নাগরিকদেরও দায়িত্ব আছে
Leave a comment