By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: উপকূলীয় অঞ্চলের দুঃখ
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ই-পেপার
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > উপকূলীয় অঞ্চলের দুঃখ
তাজা খবরসাতক্ষীরা

উপকূলীয় অঞ্চলের দুঃখ

Last updated: 2025/12/02 at 12:44 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 2 hours ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা ‌প্রতিনিধি : বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর মধ্যে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা নিয়ে বৃহত্তর খুলনাঞ্চল গঠিত। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ একদিকে যেমন জেলাগুলোকে করেছে সমৃদ্ধ তেমনি নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা করে চলেছে যুগের পর যুগ। সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর সন্নিহিত জেলা হওয়ায় মৎস্য, মধু, মাছ ও কাঠ আহরণ এ অঞ্চলের মানুষের বড় একটি অংশের রোজকার জীবিকা।
প্রকৃতি যেমন এ অঞ্চলকে উদারভাবে তার সম্পদ দান করেছে, তেমনি লবণাক্ততা এ অঞ্চলের মানুষ ও পরিবেশকে চরম হুমকির মুখেও ফেলে দিয়েছে। দিনে দিনে লবণাক্ততার এই সমস্যা বেড়ে চলেছে। আশানুরূপ ফসল ফলছে না জমিতে। লোকসংখ্যা বেড়ে চলেছে, কিন্তু বিঘার পর বিঘা অনাবাদি রয়ে যাচ্ছে। এক সময় লবণাক্ত পানিতে ব্যাপকভাবে চিংড়ি চাষ হলেও সময়ের বিবর্তনে তাতেও ধস নেমেছে। সুপেয় পানির অভাবে রোগ ব্যাধি বাড়ছে। নারীরা বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। হাহাকার বিরাজ করছে সমগ্র উপকূলীয় এলাকায়। অনেকেই নিজ বাস্তভিটা ছেড়ে চলে গেছেন। লবণাক্ততার কারণে পুরো বাস্তুসংস্থান বদলে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, লবণাক্ততা সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে আগামী দুই যুগে কয়েক লক্ষ মানুষ এ অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবে।
উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা সমস্যা দীর্ঘদিনের। এখন থেকে প্রায় ৬শ’ বছর আগে লবণাক্ততা সমস্যা উপলব্ধি করে হজরত খানজাহান আলী (রহ.) বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে ৩৬০ টি মিষ্টি পানির দীঘি খনন করেছিলেন। সে সময় জনসংখ্যা খুবই কম থাকায় মিষ্টি পানির দীঘিগুলো সুপেয় পানির চাহিদা পূরণে সক্ষম ছিল। এখন জনসংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে। সময়ের প্রয়োজনে মানুষ খালবিল সব ভরাট করে ফেলেছে। নদনদী ভরাট করেছে। ছোট ডোবা-পুকুর কিছুই দখল থেকে বাদ পড়েনি। মানুষই নিরাপদ পানযোগ্য পানির উৎস সংকুচিত করেছে ফেলেছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে। বর্ষা মৌসুমে কাঙ্খিত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হচ্ছে না।
স্থানীয় নদনদীর গভীরতা বা নাব্যতা কমে যাওয়ায় জোয়ারে সাগরের লবণ পানি প্রবেশ করছে কিন্তু ভাটায় সে পরিমানে নামছে না। বছরের পর বছর এ অবস্থা বিরাজমান থাকায় পানি ও মাটি লবণ আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরপৃষ্টের উচ্চতা বেড়ে চলায়ও লবণ পানি উপকূলে ঢুকছে। উপকূল এলাকায় বাঁধ দিয়ে পুরো প্লাবনভূমিকে আটকে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে প্লাবনভূমিতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে লবণাক্ততা বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে, ষাটের দশকে নির্মিত দূর্বল বেড়িবাঁধ সামান্য জলোচ্ছাসে, ঝড়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। প্রবেশ করছে লবণপানি। এ পানি নামতে সময় নিচ্ছে ৩ থেকে ৩ মাস।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ততা বৃদ্ধির নেপথ্যে প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতও অনেকটা দায়ী। পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করলে লবণাক্ততার পরিমাণ তুলনামূলক কম হতো। ফারাক্কা ও অন্যান্য বাঁধ দেয়ার পর থেকেই এ অঞ্চলের সকল নদনদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। স্রোত কমে আসায় নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পানি চুক্তির ন্যায্যতা ভারত রক্ষা করলে লবণাক্ত পানির সমস্যা বহুলাংশে হ্রাস পেতো।
এ বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) অধ্যাপক দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের জনঘনত্ব আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। উপকূলীয় এলাকায় পানির অভাব নেই, অভাব রয়েছে সুপেয় পানির। জীবনধারণের জন্য যে পরিমাণ পানি দরকার, তা মাথাপিছু অনুযায়ী কমে গেছে। খাবার পানির সমস্যা সমাধানের জন্য প্রায় ৬০০-৭০০ বছর আগে থেকেই এসব অঞ্চলে বড় বড় দীঘি খনন করা হয়েছিল। খানজাহান আলীসহ অন্যরা হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, এটাই একমাত্র উপায়। এটা হলো প্রকৃতিগত পদ্ধতি। এই পদ্ধতির কথাই এখন অনেকে বলছেন, কিন্তু সেটা নিয়ে কেউ কাজ করছেন না। ইতিমধ্যে যেসব জলাশয় ছিল, তা আমরা ভরাট করে ফেলেছি। আসলে আমাদের যেটা প্রয়োজন, আমরা ঠিক তার উল্টো পথে চলছি। আমরা সব সময় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। ভূগর্ভস্থ পানি হলো যেকোনো উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। ভূগর্ভস্থ পানির বয়স কমপক্ষে ৬০০ বছর, ওপরে ২ হাজার ৫০০ বছর। অর্থাৎ আমরা বর্তমানে যে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করছি, তার বয়স এমনই। এই ভূগর্ভস্থ পানি পূরণ হতে কমপক্ষে ৬০০ বছর লাগবে। বর্তমানে আমাদের উপকূলীয় এলাকায় কমপক্ষে ৯৮ শতাংশ মানুষ ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে যে পরিমাণ পানি তোলা হচ্ছে তা পূরণ হচ্ছে না। যেসব জলাশয় ছিল তা ভরাট হয়ে গেছে।
খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, সাতক্ষীরার আশাশুনি, শ্যামনগর, তালা, বাগেরহাটের শরণখোলা প্রভৃতি উপজেলায় দেখা গেছে, পানযোগ্য পানি আনতে গৃহবধূদের কয়েক মাইল পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। মিষ্টি পানির পুকুর থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে তারা পানি সংগ্রহ করছে। ওই সকল উপজেলায় একসময় প্রায় ৮০ হাজার মৎস্য ঘেরে লোনা পানির চিংড়ি চাষ করা হতো। লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় এখন ঘেরের সংখ্যা ২০ হাজার কমে গেছে। লাভজনক চিংড়ি চাষ এখন লোকসানের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লবণাক্ততার কারণে চিংড়ি ঘেরে মড়ক দেখা দিচ্ছে। চিংড়ি রেণু পোণা বাড়ছে না। অন্যদিকে, ফসলের আবাদ কমছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশনের একটি গবেষণাপত্রে জানা গেছে, খুলনার কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা এবং সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে কৃষিজমি কমেছে ৭৮ হাজার ১৭ একর।
খুলনাভিত্তিক সংস্থা উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোটের (ক্লিন) প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদি বলেন, আমাদের নিজস্ব গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৯ সালে ঘুর্ণিঝড় আইলার পর খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলা থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ অন্যত্র চলে যায়। এর দুই বছর পর আবার ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ বাড়িতে ফিরে আসে। বাকি ১৫ হাজার আর ফেরেনি।
এ বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আইনুন নিশাত বলেন, আমাদের নিজেদের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সব ধর্মের মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকে ভারতে, কেউ কেউ মধ্যপ্রাচ্যে বা ইউরোপেও যাচ্ছে। আর দেশের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামেও খুলনা-সাতক্ষীরার মানুষকে আমরা যেতে দেখেছি। এই সবকিছুর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অন্যতম দায়ী।
খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ও চর্ম যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আক্তারুজ্জামান বলেন, লবণাক্ততা সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি হলে শরীরে নানা রোগ ব্যধির সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে চর্ম রোগের আশংকা থাকে। খুলনার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে চর্মরোগীর সংখ্যা বেশি। দেহে লবনের মাত্রা বেড়ে গেলে বেশ কিছু জীবানুর সংক্রমণ দেখা দেয়। অন্যদিকে লবণ বাড়লে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়। খুলনা বাগেরহাট সাতক্ষীরার উপকূলীয় মানুষের উপরে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো জরিপ এ পর্যন্ত করা না হলেও তাদের এ সমস্যাগুলোর তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে।
উপকূলীয় এলাকার লবণ সমস্যা দূর করার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্ট বা বৃষ্টির পানি ধরে রেখে ব্যবহার একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। তবে, এটা শুধু স্বল্প সময়ের জন্য খাবার পানির চাহিদা পূরণ করে। তবে মনে রাখতে হবে, মিঠা পানির চাহিদা শুধু মানুষের নয়, পরিবেশের প্রতিটি গাছপালা ও জীবজন্তুর জন্যও প্রয়োজন। বৃষ্টির পানি ধরে রেখে শুধু মানুষের খাবার পানির চাহিদা মিটতে পারে, কিন্তু পরিবেশের নয়। এর জন্য প্রয়োজন প্রকৃতি নির্ভর সমাধান। তবে এ ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ, উৎসের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার সীমিত করতে হবে। এলাকাভিত্তিক বড় বড় পুকুর, খাল, জলাশয় খনন করে তাতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। নদ নদী খনন করতে হবে। পানি ব্যবহারে সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে।
শ্যামনগরের গোলাখালী সুন্দরবনের কিনারার একটি গ্রাম। দেশ স্বাধীনের আগে এই গ্রামে পানির তেমন অভাব ছিল না। গ্রামের মানুষ পুকুর সংরক্ষণ করতেন এবং সেখান থেকে পানি খেতেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আইলার পর পুকুর সব প্লাবিত হয়ে বিনষ্ট হয়। মো. নূরুজ্জামানের জন্ম সেই গ্রামে, যার পুরো পরিবার তীব্র পানি সংকটের মুখোমুখি আজ। বেসরকারি পর্যায়ে পানিসংকট সমাধানে তারা কাজ করেন, কিন্তু জানালেন উদ্যোগগুলো অপ্রতুল। পানি সমস্যার সমাধান রাষ্ট্রীয় নীতিতে রাজনৈতিকভাবে ঠিক করতে হবে। আশাশুনি ও তালা উপজেলায় কাজ করতে গিয়ে তিনি লবণপানির আগ্রাসনের কারণে গ্রামীণ স্থানান্তরের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ পানির অভাবে প্রতিদিন গ্রাম ছাড়ছে মানুষ। সাতক্ষীরার সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার পানিসংকট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লিখে চলেছেন। তিনি বলেন, উপকূলের মানুষ লবণপানি খাচ্ছে আর শহরের মানুষেরা সুপেয় পানির নামে বিষ খাচ্ছে। লবণপানির শোধনাগার তৈরি করে উপকূলের গ্রামে সুপেয় পানির সমাধান সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। পাশাপাশি এলাকার উন্মুক্ত সব জলাধার এবং সাতক্ষীরার ২৭টি নদী দখলমুক্ত করে পানিসংকট সমাধান করতে হবে।
উপকূলের পানি ও উন্নয়ন নিয়ে ক্রিটিক্যাল চিন্তাতাত্ত্বিক, সাংবাদিক ও গবেষক গৌরাঙ্গ নন্দী, যিনি নিজেও এক দীর্ঘ পানিসংকট অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে বড় হয়েছেন। লেখালেখি ও লড়াই জারি রেখেছেন। ১৯৭৮ সালে তিনি প্রথম খুলনার দাকোপের একটি গ্রামে যান এবং দেখতে পান গ্রামের মানুষ বড় পুকুর থেকে পানি পান করত এবং বড় মাটির মটকায় পানি সংরক্ষণ করত। প্রায় ৪০ বছরের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা টেনে তিনি জানান, বর্তমানে দাকোপ, কয়রা, শ্যামনগর বা উপকূলের কোনো গ্রামেই এখন আর বড় পুকুর নেই। মানুষ মটকায় পানি জমিয়ে রাখে না। বর্তমানে সব মানুষকেই এখন পানি কিনে খেতে হয়। কারণ এই এলাকার মাটির তলার পানি ক্রমেই লবণাক্ত হয়ে উঠেছে। উপকূল অঞ্চল ঐতিহাসিকভাবেই নোনা অঞ্চল। এখানে পানিসংকট সমাধানের জন্য বহু আগেই থেকেই গ্রামীণ মানুষ পুকুর ও জলাশয় সংরক্ষণ করত। সাতক্ষীরার গুড়পুকুরের উদাহরণ টেনে তিনি জানান, এই নোনা অঞ্চলে এই পুকুরটির পানি মিষ্টি ছিল বলে এক সময় এই পুকুর ঘিরে মেলার প্রচলন ঘটে। উপকূলের নদীগুলোর সঙ্গে উজানের নদীপ্রবাহের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ কারণে উপকূলের নদীতে মিষ্টিপানির প্রবাহ আসার সুযোগ নষ্ট হয়েছে এবং একই সঙ্গে লবণাক্ততা বাড়ছে। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত নোনার পরিমাণ নদীতে বেশি থাকে, অন্য সময় কম থাকে। কিন্তু গ্রামের মাটি, কৃষিজমি, খাল ও গ্রামের ভেতর নোনার পরিমাণ বছরের সবসময় বেশি থাকে। এই অঞ্চলের নোনা ও স্বাদুপানির সংমিশ্রণের যে বৈশিষ্ট্য তার পরিবর্তন ঘটেছে। উপকূলীয় বাঁধ দিয়ে এই বৈশিষ্ট্য নষ্ট করা হয় এবং পরে আবার মাটির এই বাঁধ কেটে নদী-খাল থেকে নোনাপানি গ্রামের ভেতরে চিংড়ি চাষের জন্য ঢুকিয়ে গ্রামের ভেতর লবণাক্ততার তীব্রতা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর সঙ্গে নদী-খাল দখল এবং অন্যান্য আরও সমস্যা আছে। গ্রামে গ্রামে পুকুর সংরক্ষণ করার ভেতর দিয়েই কেবল উপকূলের সুপেয় পানিসংকট সমাধান করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। একই সঙ্গে কৃষি, চিংড়ি এবং বসতি সবকিছু জোনিংয়ের আওতায় আনাও জরুরি বলে মনে করেন।
শ্যামনগর পদ্মপুকুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি মেম্বার গাজী আশরাফ হোসেন জানান, তার চাচির তীব্র ডায়রিয়া হয়েছিল পুকুরের দূষিত লবণপানির কারণে। আগের দিনে গ্রামের মেয়েরা পুকুরের পানি এনে চুন মিশিয়ে ছেঁকে খেতেন কিন্তু বর্তমানে পানি এভাবে শোধন করা যাচ্ছে না। পানি উত্তোলন বা শোধনের কাজে সুলভ, স্বল্পমূল্যের এবং নিরাপদ নবায়নযোগ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের দাবি করেছেন এই সাবেক জনপ্রতিনিধি। উপকূলের পানিসংকট সমাধানে সরকার আন্তরিক কি নাÑ এই প্রশ্ন তুলেছেন উপকূলের সাংবাদিক এম কামরুজ্জামান। বিগত রেজিমের একটি কর্মসূচির অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে ক্ষোভ নিয়ে তিনি জানান, অনেক প্রতিষ্ঠান উপকূলের পানিসংকটকে দেখিয়ে ফান্ড সংগ্রহ করে এবং জলবায়ু সম্মেলনে পানি-দুর্গত মানুষদের দেখিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে। কোনো ভিক্ষা নয়, ন্যায়বিচার সুরক্ষার দাবি জানান তিনি। সুন্দরবন লাগোয়া গ্রাম শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাঁতিনাখালী। গ্রামের বনজীবী নেতা শেফালী বিবি জানান, লবণপানির কারণে মেয়েদের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে এবং অনেক দূর থেকে সুপেয় পানি আনতে হয় বলে মেয়েরা নানা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। অসহনীয় পানি সংকটের কারণে গ্রামীণ পরিবারগুলো খুব অল্পবয়সে মেয়েদের বিয়ে দিতে বাধ্য হয়। সরকার ও এনজিওরা বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে কাজ করে। কিন্তু কেন উপকূলের গ্রামে গ্রামে মানুষ বাল্যবিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে এসব কেউ খতিয়ে দেখছে না এবং মূল সমস্যার সমাধান করছে না বলে অভিযোগ করেন শেফালি বিবি। তিনি বলেন, পানিসংকট টিকিয়ে রেখে কোনোভাবেই বাল্যবিবাহ বন্ধ করা যাবে না। কতটুকু পানির কষ্ট হলে মা-বাবারা নিজের বুকের ধনকে এত অল্প বয়সে বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে তা সরকারকে ভাবতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
শ্যামনগরের যুব উন্নয়ন সংগঠক গাজী আল ইমরান জানান, উপকূলের বহু নদী-খাল-জলাশয় বেদখল করেছে বহু প্রভাবশালী মানুষ। এরা রাজনৈতিকভাবে এবং বাণিজ্যিকভাবে ক্ষমতার ভাগাভাগি করেছে। দখল ও দূষিত সব জলাশয় উন্মুক্ত করে সবার জন্য খুলে দিতে হবে। আদি যমুনা নদীর নাম পাল্টে নাম দেওয়া হয়েছিল যমুনা খাল। আইবুড়ি নদীর নাম বদলে আইবুড়ি খাল। যারা এসব করেছেন তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং দখলমুক্ত করতে হবে।   সাতক্ষীরার সাংবাদিক আহসান হাবীব জানান, উপকূলের মাটি ও পানিতে লবণের পরিমাণ কত এটি সরকারিভাবে নিয়মিত ফোরকাস্ট করা হয় না। উপকূল অঞ্চলে লবণের পরিমাণ মাত্রা নিয়মিত জানানোর জন্য সরকারি দপ্তরকে কার্যকর করার প্রস্তাব জানান তিনি। সাংবাদিক ও গবেষক শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন জানান, সাতক্ষীরার গ্রামে গ্রামে পানির যন্ত্রণা কত তীব্র হতে পারে, যখন আমরা দীর্ঘদিন দেখছি মানুষকে পানির জন্য মিছিল করতে হচ্ছে, সমাবেশ ও চিৎকার করতে হচ্ছে। পানিসম্পদ কিংবা জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেউ সুনির্দিষ্টভাবে উপকূলের পানিসংকট সমাধানে এখনো দৃশ্যমান তৎপরতা দেখায়নি। করপোরেট দৃষ্টিভঙ্গি বা পণ্যকরণের ধারণা থেকে নয়, পানিকে বিনা শর্তে বিনামূল্যে সব জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দাবি তার।
শ্যামনগরের শিক্ষক ও গবেষক রণজিৎ বর্মণ দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, পানি, মৎস্য, ভূমি ও কৃষি বিভাগের ভেতর পাবলিক পানির উৎসগুলো সুরক্ষায় কোনো সমন্বয় নেই। আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় ছাড়া কোনোভাবেই উপকূলের মানুষের সত্যিকারের সমাধান সম্ভব নয় বলে তিনি জানান। পানির কষ্ট দূর করতে হলে সরকারি ও বেসরকারি সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন সাতক্ষীরার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান আসাদ। সাতক্ষীরার সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জি জানান, রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া কোনোভাবেই উপকূলের সুপেয় পানির সমাধান সম্ভব নয়। পানি নিয়ে রাজনীতিবিদরা কেবল ছিনিমিনি খেলবেন আর মানুষ দিনের পর দিন ভুক্তভোগী হতে থাকবে তা আর কত দিন? পানিকে পণ্যকরণের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
তালা উপজেলার পবিত্র মোহন দাস একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। মার্কিন দাতা সংস্থার অর্থায়নে তৈরি একটি পানি প্রকল্পের তিক্ত অভিজ্ঞতা সামনে এনে জানান, ২৪ লাখ টাকা খরচ করে করা সেই পানি প্রকল্প থেকে মানুষ ২৪ কলস পানিও সংগ্রহ করতে পারেনি এবং সেটি এখন বন্ধ আছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি বন্ধ না করতে পারলে কোনোভাবেই পানিসংকটের সমাধান হবে না বলে তিনি জানান। মানবাধিকারকর্মী হেনরি বিশ^াস পানিসংকট সমাধানে উপকূলের গ্রাম থেকে শহর সবার সুপারিশ ও মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানান।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান, সাতক্ষীরার ২২ লাখ মানুষের ভেতর পানিসংকটের ধরন ও তীব্রতা ভিন্ন ভিন্ন রকমের। আর্সেনিক, আয়রন এবং লবণাক্ততা এই অঞ্চলের পানিসংকটের সঙ্গে জড়িত। সাতক্ষীরায় কতটুকু জমিতে কি পরিমাণে চিংড়ি উৎপাদতি হয় তার সঠিক পরিসংখ্যান জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি জানান তিনি। বিভিন্ন দপ্তরের পরিসংখ্যান এবং তথ্যগত ত্রুটি এবং গরমিল থাকার বিষয়টিকে তিনি সামগ্রিক পানিসংকট সমাধানে একটি বাধা হিসেবে দেখেন।
কৃষিপদকপ্রাপ্ত কৃষক মোজাম্মেল হোসেন উপকূলের পানিসংকটের সঙ্গে জড়িত সব কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি ও বিচারের আওতায় আনার দাবি তুলে জানান, পানিকে বাজারের বিক্রয়যোগ্য পণ্য করা হচ্ছে, এনজিওরা অনেকে পানি বিক্রি করছে, এটি বন্ধ হওয়া দরকার। রাজনীতিবিদ মুক্তিযোদ্ধা কামরুল ইসলাম ফারুক সাতক্ষীরার বেদখল হওয়া খালের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, খাল উন্মুক্ত না করলে শহরের জলাবদ্ধতা দূর হবে না। এ জন্য নাগরিক সমাজের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষকে সক্রিয় হতে হবে। আইনজীবী শেখ আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, পানিসম্পদ ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পর্কিত সরকারি দপ্তরগুলোকে জানালেও তারা জনগণের সামনে আসতে চান না। উপকূলে পানিসংকট সমাধানসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে দ্রুত উপকূল বোর্ড গঠন করে কাজ করার প্রস্তাব করেছেন তিনি।
উপকূল দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অংশ। ১৯টি জেলায় বিস্তৃত এই উপকূল দেশকে ঘূর্ণিঝড় ও দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা করে। বিশে^র বৃহত্তম বাদাবন ও দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতও এখানে। লবণসহিষ্ণু দেশি ধানের জন্মভূমি এই অঞ্চল। নোনাখচি, খেজুরছড়ি, রায়েন্দা, তালমুগুর, দাদখানির মতো দেশি ধানের জাতগুলোই এই অঞ্চলে ঐতিহাসিকভাবে উপযোগী ছিল। কিন্তু ষাটের দশকে প্রবর্তিত বৈশ্বিক সবুজ-বিপ্লব প্রকল্প সব দেশিজাত হটিয়ে দিয়েছে। জোয়ার-ভাটার গণিতকে অস্বীকার করে তৈরি উপকূল বাঁধ ও বাণিজ্যিক চিংড়ি, কাঁকড়া ঘের লবণাক্ততার তীব্রতা ও অঞ্চল ক্রমেই বাড়িয়ে তুলছে। এর সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুক্ত হয়েছে জলবায়ু সংকটের নানা অভিঘাত। নিউলিবারেল ব্যবস্থা আর কাঠামোগত বৈষম্য জিইয়ে রেখেই এই অঞ্চলে পানি সমস্যার নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যার কোনো সুরাহা নেই। পানিসংকটের প্রশ্নহীন ভার বহন করতে হচ্ছে মূলত গ্রামীণ নারী ও শিশুদের। প্রতিদিন মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে যাচ্ছে জীবিকার সন্ধানে। পিপাসার্ত ও ক্ষুধার্ত জীবন ঘের ও লবণপানি বন্দি হয়ে মুক্তির উপায় খুঁজছে। বৈশি^ক জলবায়ু সম্মেলন, জলবায়ু তহবিল, ক্ষয়ক্ষতি ও কার্বন-বিবাদ কোনো কিছুই উপকূলের অন্যায় পানিসংকটের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করছে না। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মীর মুগ্ধের ‘পানি লাগবে পানি’ আমাদের সামনে পানির অনিবার্যতাকে হাজির করেছে। উপকূলের পানি-বৈষম্য নিরসনে সব শ্রেণি-বর্গ-পক্ষের সমন্বয়ে দরকার নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তি।
সাগরে নিম্নচাপ, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, টানা বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাস উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়ায়। কারণ একদিকে নিম্নচাপ ও বৃষ্টিতে উপকূলীয় এলাকায় নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে ঝড়ো বাতাসে নদীর স্রোতের গতি বৃদ্ধি পায়। তখন বেড়িবাঁধ ভেঙে অথবা উপচে প্লাবিত হয় লোকালয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষের জলাশয়, ফসলের মাঠ ও ঘরবাড়ি। তাই উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের বড়ো দুঃখ ‘নদীভাঙন’।
বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর মধ্যে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা নিয়ে বৃহত্তর খুলনাঞ্চল গঠিত। তবে সুন্দরবন সংলগ্ন এসব জেলাগুলোর মধ্যে আতঙ্কে দিনযাপন করেন খুলনার কয়রা উপজেলার এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মানুষ। কারণ এসব এলাকায় নদীভাঙন একটা নৈমিত্তিক ব্যাপার। নদীর পানি বাড়লে বেড়িবাঁধ ভেঙে ওই এলাকার লোকালয় প্লাবিত হয়। তখন শত শত পরিবার মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয়। খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। বিগত দিনে আঘাত হানা আইলা, সিডর, আম্ফানে বিধ্বস্ত মানুষ আজও উঠে দাঁড়াতে পারেনি।
এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে আকাশ অধিকাংশ সময়ই মেঘাচ্ছন্ন থাকে। তখন উপকূলবর্তী এলাকায় নদীর পানি স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত পানির চাপে ভেঙে যায় এসব অঞ্চলের নড়বড়ে বেড়িবাঁধ। যার ফলে প্লাবিত হয় মৎস্য ঘের, পুকুর, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। পানিবদ্ধতায় স্থবির হয়ে পড়ে জীবনযাত্রা।
এছাড়া অতিবৃষ্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জলাবদ্ধতায় উপকূল এলাকায় মানুষ খাবার পানির চরম সংকটে ভোগে। আবার লোকালয়ে লবনাক্ত পানির প্রবেশ করায় মাছ ও অন্যান্য প্রাণী মারা যায়। যেগুলো পচে দুর্গন্ধ ও নানান ধরনের জীবাণু সৃষ্টি হয়। ফলে মানুষ টাইফয়েড জ্বর, রক্ত আমাশয়, ডায়রিয়া, কলেরা ও চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। এমনকি ছোট ছেলেমেয়ে ও পরিবারের বৃদ্ধদের নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরিত করতেও বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ২৫ মে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আইলায় দক্ষিণ জনপদের উপকূলীয় অঞ্চল লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় দক্ষিণ উপকূলীয় বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী সুন্দরবনের কোলঘেঁষা খুলনা জেলার কয়রা উপজেলা ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা। এসব এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া নদীতে মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি সব বিলীন হয়ে যায়। ফলে ফসলশূন্য হয়ে উঠে এসব এলাকা। সে সময় কয়েক হাজার পরিবার বেড়িবাঁধের ওপর মানবেতর জীবনযাপনও করেছে।
অন্যদিকে আইলার ক্ষত না শুকাইতে আম্ফানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয় শ্যামনগর ও কয়রা। এ সময় পানিবন্দি হয়ে পড়ে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। ঘরবাড়ি ধসে পড়ে ২ হাজারেরও বেশি। এতে মাছের ক্ষতি হয় ১৭৬ কোটি ৩ লাখ টাকার। কৃষিতে মোট ক্ষতি হয় ১৩৭ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার টাকার। এলজিইডি ও সড়ক বিভাগের ক্ষতি হয় কমপক্ষে ৩০ কিলোমিটার সড়ক। এছাড়া কয়রার চারটি ইউনিয়নের ৫২টি গ্রাম সম্পূর্ণ এবং দু’টি ইউনিয়নের ২৪টি গ্রাম আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২১টি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে যায়। ৫১ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে এক লাখ ৮২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কয়রা উপজেলার শাকবাড়ীয়া নদীর পাউবোর বাঁধের ১৪/১ নম্বর পোল্ডারের ১০০ মিটার অংশে ছোট-বড় অনেক ফাটল ও ধস দেখা দিয়েছে। জোড়শিং এলাকার অংশটুকু বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ফলে ভাঙন হুমকিতে পড়েছে বাঁধসংলগ্ন জোড়শিং, আংটিহারা, গোলখালি ও বিনাপানি গ্রামসহ দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। ভাঙনরোধে পাউবোর পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে প্রায় ২ হাজার একর আমন খেতসহ অসংখ্য মাছের ঘের নদীর লোনাপানিতে ডুবে যাওয়ায় আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সবমিলিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ, খাবার পানির সংকট নিরসন ও নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা জোরদার করতে সরকারকে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় আরো বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে; তা না হলে মানচিত্র থেকে এসব অঞ্চল অতিদ্রুত বিলীন হয়ে যাবে।
উপকূল, শব্দটি শুনলেই যে ছবিগুলো আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে তা হলো নদী ভাঙ্গন, খাবার পানির অভাব, লোনা পানিতে শিশুদের উচ্ছ্বাস।
এযাবৎকাল বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় পত্রিকায় পাতায় পড়েছি,আবার কোনো ঘূর্ণিঝড় এলেই টিভির শিরোনামে গাবুরা, পদ্মপুকুরের ভয়াবহ চিত্র দেখে এসেছি আমরা।
সম্প্রতি আমার উপকূল ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে। তখন উপকূল এবং উপকূলের মানুষদের খুব কাছ থেকে দেখেছি । আজ সেই উপকূলের গল্প শোনাবো আপনাদের।
সুন্দরবনের কোল ঘেষে শ্যামনগর উপজেলা যার অববাহিকায় রয়েছে কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া, চুনা, মালঞ্চ নদী। যেসব নদী বেশ খরস্রোতা, যে কপোতাক্ষ দেখে আমরা বড় হয়েছি, সেই কপোতাক্ষ এবং উপকূলের কপোতাক্ষ সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারায় বহমান।
উপকূল নিঃসন্দেহে সুন্দর, ভয়ংকর সুন্দর। উপকূলের মানুষের প্রধান জীবিকা নদী ও সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। কেউ নদীতে মাছ ধরে আবার কেউ সুন্দরবনে মধু বা গোলপাতা সংগ্রহের কাজ করে।
আপনি যদি খোলপেটুয়া নদীটি পার হয়ে গাবুরা ইউনিয়নে প্রবেশ করেন তাহলে আপনার উপলব্ধ হবে আসল উপকূলের সৌন্দর্য বা দুর্দশাটা কোথায়।
খোলপেটুয়া নদীটি আপনাকে পার হতে হবে ট্রলারে বা নৌকায়। মোটর বাইক বা সাইকেলগুলোও দিব্যি নৌকা চড়ে পার হয়ে যাচ্ছে।
আমরা যখন নদীটি পার হচ্ছি, তখন নৌকাটা এমন ভাবে এদিক ওদিক দুলছে, এই বুঝি আমরা নদীতে পড়ে যাব এমনটা বোধ হচ্ছিল। কিন্তু সেখানে একদমই নিঃসংকোচে কয়েকটা বইখাতা হাতে নৌকার গলুইয়ে বসে আছে গাবুরার মাধ্যমিক পড়ুয়া একটি ছেলে। যাকে প্রতিদিন নদী পার হয়ে এপারে আসতে হয়, ভালো শিক্ষকের কাছে পড়ার জন্য। কখনও যদি আকাশে মেঘ দেখা যায়, অংকটা শেষ না করেই মাষ্টার মশায় গাবুরার ছেলেমেয়েদের ছুটি দিয়ে দেন। যেন নদী হিংস্র রূপ ধারণের আগেই তারা নিরাপদে মায়ের কোলে ফিরতে পারে। এমনটায় উপকূলের শিক্ষা ব্যবস্থা।
নদী পার হওয়ার সময় আপনার চোখে ধরা পড়বে সারি সারি নৌকা নদীর বুকে, তারা মাছ ধরছে। জালে কেমন মাছ বাঁধবে তার উপর নির্ভর করে তাদের ঘরে কী বাজার যাবে।

জন্মভূমি ডেস্ক December 3, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article দেশের অর্থনীতিতে হাতছানি দি‌চ্ছে উপকূলের কাঁকড়া চাষ
Next Article বিশ্বের অহংকার বাংলাদেশের সুন্দরবন, ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে

দিনপঞ্জি

December 2025
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
« Nov    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
খুলনা

বটিয়াঘাটায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা

By জন্মভূমি ডেস্ক 4 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা ‌পাউবোর ইমরানসহ ৩ কর্মকর্তা লুটে নিয়েছে ৪ শতকোটি টাকা

By জন্মভূমি ডেস্ক 37 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

বিশ্বের অহংকার বাংলাদেশের সুন্দরবন, ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে

By জন্মভূমি ডেস্ক 38 minutes ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা ‌পাউবোর ইমরানসহ ৩ কর্মকর্তা লুটে নিয়েছে ৪ শতকোটি টাকা

By জন্মভূমি ডেস্ক 37 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

বিশ্বের অহংকার বাংলাদেশের সুন্দরবন, ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে

By জন্মভূমি ডেস্ক 38 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

দেশের অর্থনীতিতে হাতছানি দি‌চ্ছে উপকূলের কাঁকড়া চাষ

By জন্মভূমি ডেস্ক 3 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?