জন্মভূমি ডেস্ক : জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের বিরুদ্ধে চলমান এইচপিভি টিকা বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত নিরাপদ ও কার্যকর বলে জানিয়েছে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)। সংগঠনটি বলছে, এই টিকার সঙ্গে বন্ধ্যাত্ব, গর্ভধারণ ক্ষমতা নষ্ট বা প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি এই টিকা নেওয়ার ফলে গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন কোনো জটিলতা হয় না, বরং এই টিকা ক্যান্সার থেকে জরায়ুমুখ সুরক্ষিত রাখে। সোমবার (১১ নভেম্বর) ওজিএসবির সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফারহানা দেওয়ান ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা. সালমা রউফ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকারের উদ্যোগে দেশে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন গত ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা বিভাগ ছাড়া অবশিষ্ট ৭টি বিভাগে শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৫ লক্ষাধিক এবং ঢাকা বিভাগ বহির্ভূত অবশিষ্ট ৭টি বিভাগে প্রায় ৪২ লাখ কিশোরীকে ১ ডোজ এইচপিভি টিকা সফলভাবে দেওয়া হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭০ শতাংশ।
টিকা প্রসঙ্গে বলা হয়, এই বাইভ্যালেন্ট এইচপিভি টিকা বেলজিয়ামে তৈরি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত। এইচপিভি টিকা বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত নিরাপদ ও কার্যকর। মনে রাখবেন এই টিকার সঙ্গে বন্ধ্যাত্ব, গর্ভধারণ ক্ষমতা নষ্ট বা প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই, এই টিকা নেওয়ার ফলে গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন কোনো জটিলতা হয় না। বরং এই টিকা ক্যান্সার থেকে জরায়ুমুখ সুরক্ষিত রাখে। সারা বিশ্বে ১৪৩টি দেশ এই টিকাদান কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করছে ও তার মধ্যে ১৭টি দেশই মুসলিম দেশ।
এই অবস্থায় টিকাদান কার্যক্রম সম্পর্কিত ভুল ও অপপ্রচার রোধ এবং অভিভাবক কিশোরীদের উদ্বুদ্ধ করে সার্বিক কার্যক্রমকে সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধও জানায় ওজিএসবি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নারীদের ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ জরায়ুমুখ ক্যান্সার। নারীরা যেসব ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তার মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যান্সার বৈশ্বিকভাবে ৪র্থ সর্বোচ্চ এবং বাংলাদেশি নারীদের ক্ষেত্রে এটি ২য় সর্বোচ্চ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার জন নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার জন মৃত্যুবরণ করে থাকেন, যার প্রায় ৯৪ শতাংশ মৃত্যুই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশে ঘটে থাকে।
দেশে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের প্রকোপ ভয়াবহ আকারে বাড়ছে উল্লেখ করে ওজিএসবি জানায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮ হাজার ২৬৮ জন নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং তার মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ৯৭১ জন নারী মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী নারীদের ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে জরায়ুমুখ ক্যান্সার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। জরায়ুমুখ ক্যান্সার এইচপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ দ্বারা হয়ে থাকে। সাধারণত এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হওয়া থেকে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ১৫-২০ বছর সময় লাগে। এজন্য এই রোগকে নীরব ঘাতক বলা হয়।
আরও বলা হয়, আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই প্রায় শেষ পর্যায়ে শনাক্ত হন, যখন রোগ থেকে সেরে ওঠা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে। একমাত্র এইচপিভি টিকা এই ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রায় শতভাগ সফল। সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় কিশোরীদের নির্দিষ্ট বয়সে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ সুপারিশ অনুযায়ী ১ ডোজ এইচপিভি টিকা দিলে এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।