গত কয়েক বছরে স্বাস্থ্যঝুঁকিবিষয়ক আলোচনায় করোনা বেশি গুরুত্ব পাওয়ায় এইডসসহ অনেক জটিল রোগ তেমন গুরুত্ব পায়নি। অথচ দেশে এ বছর রেকর্ড এইডস রোগীর মৃত্যু ও শনাক্ত হয়েছে। জানা যায়, ২০২৩ সালে নতুন করে এইডস শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২৭৬ জনের। এ সময়ে এই রোগে মৃত্যু হয়েছে ২৬৬ জনের। ১৯৮৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে এইডসে আক্রান্ত হয়েছে ১০ হাজার ৯৮৪ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৮৬ জনের। এর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যু হয় ২০২২ সালে, সে সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯৪৭ এবং মৃতের সংখ্যা ২৩২।
জানা যায়, কোনো মানুষের শরীরে ভাইরাসটি প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে রোগলক্ষণ স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয় না। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি জানতে পারেন না যে তিনি এ প্রাণঘাতী ভাইরাস বহন করছেন। সরকার বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও দেশে এইডস আক্রান্তদের রোগ নির্ণয় বড় এক চ্যালেঞ্জ। কারণ দেশের সব জেলায় এইচআইভি/এইডস পরীক্ষার সুযোগ নেই। অনেকে সংক্রমিত হয়েও চিকিৎসা নিচ্ছেন না। এতে এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকি বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। এইডসের চিকিৎসা অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসার মতো নয়। কাজেই এ বিষয়ে সুফল পেতে হলে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত নিলে বা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির ব্যবহৃত সিরিঞ্জ আবার ব্যবহারে নতুন কারও এইডসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকলে একবার ব্যবহৃত সিরিঞ্জ পুনরায় ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়। এসব দিকে কর্তৃপক্ষের জোরালো নজরদারি থাকা প্রয়োজন।
এইডস বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিষয়ক সংকটগুলোর একটি। অথচ আমাদের সমাজে এ নিয়ে মুক্ত আলোচনা দৃশ্যমান নয়। লক্ষ করা যায়, কেউ যখন কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে যান, কেবল তখনই এইচআইভি/এইডসের পূর্ণরূপ জানার চেষ্টা করেন। মানুষকে সতর্ক করার লক্ষ্যে এইডস নিয়ে যথাযথ প্রচারণা চালাতে হবে। মানুষ যাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিনামূল্যে এইডসবিষয়ক সেবা নিতে পারেন, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। গৃহহীন ও ভাসমান মাদকসেবীদের মাধ্যমে এইচআইভি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি এ সমস্যা মোকাবিলায় নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।