জন্মভূমি ডেস্ক : এশিয়ার দেশগুলোয় জানুয়ারিতে সমুদ্রপথে তাপীয় কয়লা আমদানি রেকর্ড সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কমেছে। বিশেষ করে এ অঞ্চলের প্রধান দুই আমদানিকারক চীন ও ভারত বিশ্ববাজার থেকে সীমিত পরিমাণে জ্বালানিটি কিনেছে। মূলত শীতকালীন চাহিদা কমে যাওয়ায় আমদানি এ সময় নিম্নমুখী ছিল।
এদিকে চীন ও ভারত আমদানি কমালেও জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার আমদানি ছিল বলিষ্ঠ। দেশ দুটো মূলত উচ্চ মানের কয়লা আমদানি করে। আমদানি চাহিদা বেশি থাকায় জানুয়ারিতে এসব কয়লার দামও ছিল বেশি। চীন ও ভারত আমদানি করে নিম্ন মানের কয়লা। দেশ দুটি আমদানি কমিয়ে দেয়ায় এসব কয়লার বাজারদর ছিল তুলনামূলক কম।
পণ্যবাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলারের দেয়া তথ্যমতে, এশিয়ার দেশগুলো প্রধানত বিদ্যুৎ উৎপাদনে তাপীয় কয়লা ব্যবহার করে। অঞ্চলটিতে জানুয়ারিতে মোট ৭ কোটি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার তাপীয় কয়লা আমদানি হয়েছে, যা আগের মাসের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। ডিসেম্বরে এখানে সমুদ্রপথে আমদানি হয়েছিল রেকর্ড ৮ কোটি ১৮ লাখ টন। ওই মাসেও আমদানিতে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছিল চীন ও ভারত।
তাপীয় কয়লা আমদানিতে নেতৃস্থানীয় অঞ্চল এশিয়া। জানুয়ারিতে এখানে আমদানি কমলেও তা ছিল এ-যাবৎকালের চতুর্থ সর্বোচ্চ। এর মধ্যে চীনই আমদানি করেছে ২ কোটি ৭৯ লাখ ২০ হাজার টন। ডিসেম্বরে ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপীয় কয়লা আমদানি করে। আমদানির পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার টন।
তথ্য বলছে, চীনে ডিসেম্বরের তুলনায় আমদানি কমলেও ২০২৩ সালের তুলনায় বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। ওই সময় দেশটি ২ কোটি ৮ লাখ ৬০ হাজার টন তাপীয় কয়লা আমদানি করেছিল।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, চীনে সম্প্রতি জলীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। ফলে কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের চাহিদা বেড়েছে, যা দেশটির বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে কয়লা আমদানিতে উৎসাহিত করছে। এছাড়া স্থানীয় বাজারে জ্বালানিটির দাম বেশি হওয়ায় আমদানির মাধ্যমেই চাহিদা মেটাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। চীন সবচেয়ে বেশি আমদানি করে নিম্নমানের কয়লা। এগুলোর সিংহভাগই আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে। আর অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা হয় মাঝারি মানের কয়লা।
পণ্যের মূল্য প্রতিবেদন প্রকাশকারী সংস্থা আরগাস মিডিয়ার হিসাব অনুযায়ী, ৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়া সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ার ৪ হাজার ২০০ কিলোক্যালরির/কেজি কয়লার টনপ্রতি দাম ছিল ৫৬ ডলার ৫৩ সেন্ট, যা ডিসেম্বরের শেষ দিকের তুলনায় অনেক কম। ওই সময় এই গ্রেডের কয়লার দাম ছিল টনপ্রতি রেকর্ড ৬১ ডলার ৭০ সেন্ট।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ান কয়লার দামও কমেছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজিতে ৫ হাজার ৫০০ কিলোক্যালরিসমৃদ্ধ কয়লার টনপ্রতি ৯৪ দশমিক ৪৪ ডলার মূল্যে বিক্রি করেছে দেশটি। এর আগের সপ্তাহে দাম ছিল ৯৫ ডলার ২ সেন্ট।
কেপলারের দেয়া তথ্যমতে, জানুয়ারিতে ভারত ১ কোটি ৩৪ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা আমদানি করে, যা পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। টানা তিন মাস ধরেই দেশটির আমদানি নিম্নমুখী। তবে চীনের মতোই ২০২৩ সালের তুলনায় বলিষ্ঠ রয়েছে ভারতের আমদানি।
এদিকে জাপান এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ কয়লা আমদানি করেছে। আমদানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার টন, ডিসেম্বরে যা ছিল ৯৯ লাখ ৯০ হাজার টন। শীতকালীন চাহিদার কারণে সাধারণত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দেশটি সর্বাধিক কয়লা আমদানি করে।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় কেজিতে ছয় হাজার কিলোক্যালরির অস্ট্রেলিয়ান কয়লার কদর বেশি। ৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়া সপ্তাহে এই গ্রেডের কয়লার দাম ছিল টনপ্রতি ১২০ ডলার ১৬ সেন্ট, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বেশি। ওই সময় প্রতি টন লেনদেন হয়েছিল ১১৭ ডলার ২৮ সেন্টে।
জাপানের মতো দক্ষিণ কোরিয়াও জানুয়ারিতে বিপুল পরিমাণ কয়লা আমদানি করেছে, ডিসেম্বরে যা ছিল ৭৩ লাখ ২০ হাজার টন, জানুয়ারিতে তা বেড়ে ৭৯ লাখ ২০ হাজার টনে উন্নীত হয়।